বৈঠকে অনুপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী৷ ৩১ মে বিজ্ঞপ্তির দিকে তাকিয়ে আছেন পরীক্ষার প্রস্তুতিতে চাকরিহারারা।
চাকরিহারা শিক্ষকদের অনেকে প্রতিবাদের পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। ছবি: Subrata Goswami/DW
বিজ্ঞাপন
ব্রাত্য বসুর অনুপস্থিতিতেই সোমবার শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমারের সঙ্গে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গের চাকরিহারা শিক্ষক প্রতিনিধিদল।
শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে সোমবারের মধ্যে তাদের সমস্যার সদুত্তর না পেলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন বলে জানিয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। সোমবারেও তাদের হতাশা কাটলো না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অনুপস্থিতিতেই এদিন কলকাতার বিকাশ ভবনে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমারের সঙ্গে দেখা করেন চাকরিহারা শিক্ষকদের এক প্রতিনিধিদল। বৈঠকের পরে তারা জানান, এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তরই অধরা।
নতুন বিজ্ঞপ্তির দিকে তাকিয়ে
এই অবস্থায় রাজ্যের সব সাংসকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের অবস্থা জানাবেন বলে স্থির করেছেন তারা। তাদের বিষয়টি সংসদে তোলা যায় কিনা তা নিয়ে সর্বদল বৈঠক করার অনুরোধ করেছেন তারা। এদিন শিক্ষাসচিবের সঙ্গে যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের প্রতিনিধিরা আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। চাকরিহারা শিক্ষকদের দাবি ছিল নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না তারা।
তবে আগামী ৩১ মের মধ্যে বাতিল প্যানেলের প্রেক্ষিতে নতুন করে এসএসসির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরিহারা এক শিক্ষক ইলিয়াস বিশ্বাস জানান, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি তিনি আবার নতুন করে পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছেন।
ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "শোনা যাচ্ছে ৩১ মে আংশিক বিজ্ঞিপ্তি বেরোবে। রাজ্যের রিভিউ পিটিশানে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় না বসার একটা সম্ভবনা আছে। কিন্তু তা যদি না হয়। আমরা তো আদালত অবমাননা করতে পারব না। তাই পড়শোনা শুরু করেছি। সব আগের মতো হয় না। পাশ করতে পারব কি না জানি না। চেষ্টা করছি।"
একই সুর আরেক চাকরিহারা অর্পিতা হাজরার গলায়। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "১০ বছর আগে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তখন লড়াই করার মানসিকতা ছিল। এতদিন বাদে কী আর সেই মনের জোর থাকে? সংসার বাচ্চা সামলে, ৩৯ বছরে এসে আর পরীক্ষা দেওয়ার মানসিকটা থাকে না। বিশেষ করে আবার যদি একই পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ থাকলি কী করব? পড়াশুনা শুরু করেছি।"
চাকরিহারা শিক্ষকদের উপর এবার পুলিশের লাঠি
এর আগে চাকরিহারা শিক্ষককে লাথি মেরেছিল পুলিশ, বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ লাঠি মেরে শিক্ষকদের বিক্ষোভ ভাঙার চেষ্টা করলো ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ
এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারির ফলে চাকরি হারানো শিক্ষকরা বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন, তাদের পুনর্বহাল ও ন্যায্য বেতনের দাবিতে। চাকরিহারা শিক্ষকরা তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান
প্যারা-শিক্ষকরা প্রায় ৫০ দিন ধরে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করছিলেন, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সদর্থক সাড়া পাওয়া যায়নি। এইদিন তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, স্থায়ী চাকরি, এবং প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে বিকাশ ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সকাল থেকে অবস্থান বিক্ষোভ
আন্দোলনটি সকাল থেকেই চলছিল, শিক্ষকরা রাস্তায় বসে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুরের দিকে প্রতিবাদকারীদের অবস্থানে আশপাশের এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ বিক্ষোভ তুলে দিতে আসলে উত্তেজনা বাড়ে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চাকরিহারা শিক্ষকরা যোগ দিলেন
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকেরা জড়ো হতে শুরু করেন। দফতর ঘেরাও করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। বিকেলে চাকরিহারাদের তরফে জানানো হয় তারা নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না। তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতক্ষণ এসে তাঁদের আশ্বস্ত না করছেন, ততক্ষণ বিকাশ ভবনের বাইরে অবস্থান চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আটকে পড়েন শতাধিক কর্মচারী
সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিকাশ ভবন। পুলিশের সঙ্গে একাধিক বার ধস্তাধস্তি হয় চাকরিহারাদের। তাদের একাংশ বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। ঘেরাওয়ে আটকে পড়েন শতাধিক কর্মচারী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের প্রবল লাঠিচার্জ
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাতে প্রবলভাবে লাঠিচার্জ করে। পুলবিশের লাঠির আঘাতে অনেকে আহত হন। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। তাকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ, অনেকে সব্যসাচীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন। পরে পুলিশ তাকে বার করে আনে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাতে রণক্ষেত্র
আচমকা রাত আটটার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে, যার ফলে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে বিক্ষোভকারীদের অনেকেই আহত হয়েছেন। অভিযোগ, কারও মাথা ফেটে গিয়েছে, কারও পায়ে আঘাত লেগেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশ অবরোধ তুলতে ব্যর্থ
পুলিশ জানায়, আন্দোলনকারীরা বিকাশ ভবনে আটকে থাকা কর্মীদের বাড়ি ফেরার পথ দিতে অস্বীকার করে, যার ফলে বলপ্রয়োগ করা হয়। পুলিশের দাবি, আন্দোলনের নেতা মেহবুব মণ্ডল নকশালপন্থি হিসেবে পরিচিত, যিনি অশান্তি সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আহত শিক্ষকরা
প্রায় ২০ জন শিক্ষক আহত হন, যাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, পুলিশ সাইরেন বাজিয়ে এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ করে, যা ছিল অমানবিক ও বর্বরোচিত। আহত শিক্ষকদের চিকিৎসার জন্য অভয়া মঞ্চ ও এবিভিপি-র চিকিৎসক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সমাজমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
সমাজমাধ্যমে ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়, পুলিশের নির্মমতার নিন্দা করে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। কেউ কেউ এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের প্রতি অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেন, শিক্ষকদের উপর নির্যাতনকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেন।
তবে আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ নতুনও করে পরীক্ষায় বসতে নারাজ। চাকরিহারা শিক্ষিকা বিদিশা মুখোপাধ্যায় বলেন, "নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি পেলে ৬০ বছর অবধি নিশ্চিন্ত থাকার কথা। সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে আমাদের কেন শাস্তি পেতে হবে? ধরুন আজ যদি আবার পরীক্ষা দিই, সরকার আবার দুর্নীতি করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাহলে কি আবার পরীক্ষা দেব? একই কাজের জন্য কতবার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করব?"
তাদের দাবি, তারা সুপ্রিম কোর্টকে বলবেন তাদের প্রতি যেন অন্যায় না করা হয়। বিদিশা বলেন, "আমি তো টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি। আমি তো দুর্নীতি করিনি। তাহলে আমিও কেন অযোগ্যদের সমতুল্য শাস্তি পাচ্ছি?"
হতাশ শিক্ষকরা
এর আগে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের করা রিভিউ পিটিশানের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে চিঠি পাঠান চাকরিহারারা। আদালতে রিভিউ পিটিশান নাকচ করলে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে সেই নিয়েও আলোচনা করতে চান তারা। রোববার ব্রাত্য 'যোগ্য' চাকরিহারা শিক্ষকদের সমস্যা আলোচনার ব্যাপারে উৎসাহ দেখান। বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে আধিকারিকদের থাকার আশ্বাস দেন তিনি। তিনি স্বয়ং বৈঠকে না থাকায় আশাহত অনেকেই।
চাকরিহারা এক শিক্ষক অমিতরঞ্জন ভুঁইয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানান, "আমরা ভেবেছিলাম শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। আমাদের যা প্রশ্ন তার উত্তর একমাত্র তিনিই দিতে পারেন বলে আমরা মনে করি।"