1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাধীন পেশায় ঝুঁকছেন দক্ষিণ কোরীয়রা

৬ এপ্রিল ২০১৯

‌স্যামসাং আর হুন্দাইয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে স্বাধীন পেশায় ঝুঁকছেন দক্ষিণ কোরীয়রা৷ করপোরেট চাকরির বাধ্যবাধকতা আর কাজের চাপে ইউটিউব ভিডিও তৈরি, এমনকি গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করাও বেছে নিচ্ছেন তাঁরা৷

ছবি: Reuters/Kim Hong-Ji

স্যামসাংয়ের বাৎসরিক সাড়ে ৫৭ হাজার ডলারের চাকরি করতেন দক্ষিণ কোরিয়ার ৩২ বছর বয়সি ইউন চ্যাং-হিউন৷ দেশটির যে-কোনো পেশার শুরুর বেতনের চেয়ে এটি তিনগুণ বেশি৷ কিন্তু ২০১৫ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেন ইউন৷ চালু করেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল৷ এমন সিদ্ধান্তে তাঁর মানসিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল পরিবারের সদস্যরাও৷

ইউন বলছেন, ক্রমাগত রাত্রিকালীন দায়িত্ব, সীমিত পদোন্নতি আর আবাসন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোভনীয় এই চাকরির মায়া তাঁকে ত্যাগ করতে হয়েছে৷ ‍‘‘যখন চাকরি ছাড়লাম, আমাকে বলা হয়েছিল, আমি পাগল হয়ে গেলাম কিনা৷ তবে আমি যদি পুনরায় চাকরিতে ফিরে যেতাম, তাহলে আবার ছাড়তাম, কারণ আমার বসরাও সুখী ছিলেন না৷ অতিমাত্রায় কাজ আর একাকিত্বের মধ্যে ছিলেন তাঁরা,'' রয়টার্সকে বলেন তিনি৷

ইউটিউব চ্যানেল দিয়েই এখন স্বাধীন জীবন নির্বাহ করছেন ইউন৷

স্যামসাং ও হুন্দাইয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠান ১৯৫০ দশকের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দক্ষিণ কোরিয়াকে এক যুগেরও কম সময়ে এশিয়ার চতুর্থ শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত করেছে৷ মধ্যবিত্তের জন্য বড় বেতনের চাকরির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান৷

কিন্তু অর্থনীতির ধীর গতি এবং ছোট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্থানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা যুবকদেরকে এখন আর বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন একটা টানতে পারছে না৷ সরকার পরিচালিত ‘কোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং'এর গবেষক ব্যান গা-উন বলছেন, এমন প্রবণতা বিশ্বের অন্যান্য দেশের যুবকদের মধ্যেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ যদিও কঠোর করপোরেট সংস্কৃতি এবং একই রকম দক্ষতার স্নাতক বেশি পাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ায় এই সমস্যা বাড়ছে৷

২০১২ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় গড় চাকরির মেয়াদ সবচেয়ে কম - যা সদস্য দেশগুলোর গড় ৯ দশমিক ৪ বছরের বিপরীতে সেদেশে ৬ দশমিক ৬ বছর৷

সেখানে চাকরিতে অসন্তুষ্টির হার ৫৫ শতাংশ, যা অন্য সবার চেয়ে বেশি বলেও উঠে এসেছে ওই গবেষণায়৷

‘চাকরি ছাড়া' দক্ষিণ কোরীয়দের প্রথম ১০টি নিউ ইয়ার রেজুলেশনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে৷ পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে চাকরি ছাড়ার পদ্ধতি শিখতে পড়াশোনাও করছেন অনেক দক্ষিণ কোরীয়৷ তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান ‘স্কুল অব কুইটিং জবস'৷ এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাং সু-হান রয়টার্সকে জানান, দক্ষিণ সৌলে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষের প্রতিষ্ঠান তাদের৷ ২০১৬ সালে চালুর পর থেকে তাতে সাত হাজার জন অংশ নিয়েছেন৷

৩৪ বছর বয়সি জ্যাং স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের চাকরি ছেড়ে এই প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন৷ সেখানে তিনি ইউটিউব চ্যানেল চালানো, পরিচয় সংকট মেটানো এবং প্ল্যান বি-সহ প্রায় ৫০টি কোর্স পরিচালান করছেন৷

২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, চাকরি ছাড়ার এমন প্রবণতার মধ্যেও দক্ষিণ কোরিয়ায় কাঙ্খিত চাকরির ক্ষেত্রে শীর্ষেই রয়েছে স্যামসাং৷

সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের চাকরির মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইউটিউবার হওয়া৷ এর আগে রয়েছে খেলোয়াড়, স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক ও শেফ৷

এসবের পাশাপাশি এমনকি কৃষিতেও অনেকে ঝুঁকছেন বলে গত বছরের এক জরিপে উঠে এসেছে৷ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কৃষির জন্য ১২ হাজার মানুষ শহর ছেড়েছেন, যা আগের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে৷

গত বছর সরকারি ভর্তুকির সহায়তা নিয়ে ৫ হাজার ৮০০ দক্ষিণ কোরীয় চাকরির জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, যা ২০১৩ সালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ৷

হুন্দাইয়ের চাকরি ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার পথ ধরেন প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার চো সেউঙ-ডাক৷

তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‍‘‘আমি মনে করি আমার ছেলে দক্ষিণ কোরিয়ায় আমার মতো চাকরি পাবে না৷ আমি প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে পরিচ্ছন্নতার কাজ করব, সেটাও ভালো৷''

এমবি/জেডএইচ (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ