মুসলিম নারীদের কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরার বিষয়ে বিতর্ক চলছে বিশ্বের অনেক দেশেই৷ এবার সিঙ্গাপুরেও বিষয়টি বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির একটি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন ফারাহ (ছদ্মনাম)৷ তরুণ বয়স থেকেই হিজাব পরেন তিনি৷ কিন্তু যে হাসপাতালে তিনি কাজ করেন, সেখানে হিজাব পরা নিষেধ৷ আর তাই কাজ শুরুর আগে হিজাবটি খুলে ফেলেন ফারাহ৷
‘‘দুই বছর আগে যখন চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম, তখন তারা আমাকে বলেছিল, হিজাব পরে এখানে কাজ করা যাবে না৷ আমি অসহায় হয়ে পড়ি৷’’ বলেন তিনি৷
হাসপাতালের চাকরিটি ফারাহ করছেন, তবে কাজ শুরুর আগে হিজাব খুলে ফেলার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয় তাকে৷
সিঙ্গাপুরে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন আরো অনেকে৷ গত মাসে একটি খাবারের দোকানের মহিলাকর্মীকে হিজাব খুলে ফেলতে বলেছিল কর্তৃপক্ষ৷ দেশজুড়েই তখন বিতর্ক শুরু হয় বিষয়টি নিয়ে৷
একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীও৷ সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন ‘‘কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের বৈষম্য বিরক্তিকর৷ এমন আচরণ মানুষের রুটিরুজির উপর প্রভাব ফেলে৷’’
চল্লিশ লাখ লোকের দেশ সিঙ্গাপুরে শতকরা ১৫ ভাগ মুসলিম৷ পুলিশ বিভাগসহ দেশটির বেশ কিছু কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে একটি আন্দোলনও শুরু হয়েছে সম্প্রতি৷ ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার লোক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন৷
সিঙ্গাপুরে হিজাব নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি নতুন নয়৷ ২০১৩ সালে দেশটির মুসলিম বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুব ইব্রাহিম বলেন, কোনো কোনো কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরে কাজ করা নারীদের জন্য ‘সমস্যাজনক' হতে পারে৷
কর্মক্ষেত্রে হিজাব নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নারী উন্নয়নে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন দেশটিতে মুসলিম নারীদের উন্নয়নে কাজ করা কর্মীরা৷ তারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে৷
আরআর/এসিবি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)
হিজাব ছাড়া হাঁটলেই ‘বিপ্লব’!
নারীর মাথায় নেই হিজাব৷ এমন দিন যে আসবে ইরানে, তা এতদিন ছিল কল্পনাতীত৷ বদলালো কি রাস্তাঘাটের চিত্র, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
নীতিপুলিশি চলবে...
ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় বহাল আছে নীতিপুলিশ, যাদের কাজই হিজাবহীন নারীদের গ্রেপ্তার করা৷ ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর আইন প্রণয়ন করে ঠিক করা হয় নারীদের পোশাকনীতি৷ সেই নীতির খেলাপ হলেই গ্রেপ্তার করা হবে হিজাব না-পরা নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Taherkenareh
পরিবর্তন আসবেই?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী দমকলকর্মী সংবাদসংস্থা এপিকে জানান, ‘‘আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এই আইনের কারণে আমি ভীত৷ পুলিশ আমাদের পেছনে লেগে থাকলেও আমাদের থামাতে পারবে না৷ কারণ পরিবর্তন আসবেই৷’’
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
মধ্যপন্থার হিজাব
আইন বনাম স্বাধীনতা- এই দোটানায় সরকারের মতোই বাঁধা পড়েছেন ইরানের নারীরাও৷ বের করেছেন অভিনব উপায়৷ গোটা মাথা ঢাকা হিজাবের বদলে ‘ক্যাসুয়াল হিজাব’ বেছে নেন৷ এই হিজাবের বৈশিষ্ট্য এই যে সেটা পড়লে চুলের অল্প অংশই ঢাকা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
বাজারের হিজাব
তেহরানের বৃহত্তম বাজার ‘গ্র্যান্ড বাজার’-এও আজকাল বেশি বেক্রি হচ্ছে এই ‘ক্যাসুয়াল হিজাব’, জানাচ্ছে এপি৷ নানারঙের এই আপোষের হিজাব পাওয়া যাচ্ছে তেহরানসহ অন্যান্য শহরেও৷ এপি তার প্রতিবেদনে এটাও জানিয়েছে যে বাজারের বেশিরভাগ ক্রেতা নারীই পরেছিলেন ক্যাসুয়াল হিজাব৷ খুব কম নারীদের গায়ে ছিল নিকাব বা চাদর৷
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
হিজাব ছাড়া কতজন?
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নয় দিনে আনুমানিক প্রায় ২৪জন নারীকে রাস্তায় দেখা গেছে কোনো রকমের হিজাব ছাড়াই৷ ২০১৮ সালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ইরানের মোট ১৩ শতাংশ নারীই সম্পূর্ণ হিজাব পরেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
ভবিষ্যতে বদলাবে কি এই আইন?
কট্টরপন্থিরা ইরানে শক্তিশালী হলেও সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে নারীদের চয়নক্ষমতার পারদ৷ ১৯৮০ সালে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী হিজাবের পক্ষে থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা এসে নেমেছে ৪৫ শতাংশে৷ ফলে ভবিষ্যতে যে একেবারেই বদলাবে না ইরানে নারীদের হিজাব-ব্যবস্থা, তা নিশ্চিতভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না৷