1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাকরি প্রার্থীদের হতাশা বাড়ছে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাত ছাড়া আর কোনো সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হয়নি৷ বেসরকারি খাতে তো উল্টো চাকরি যাচ্ছে অনেকের৷ ফলে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে হতাশা৷

ফাইল ছবিছবি: DW/H.U.R Swapan

তরুণদের কাছে এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাকরি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়া৷ এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ৪১ তম বিসিএস-এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু করোনার কারণে তা আটকে যায়৷ চাকরি প্রার্থী তরুণদের বড় একটি অংশ এই বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় তারা এখন হতাশ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র নূর আলম অনার্স শেষ করেই সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন৷ তিনিও এখন হতাশ৷ তার কথা, ‘‘আমাদের এই সময়ে দৌড়ের মধ্যে থাকার কথা৷ কিন্তু এখন হল ছেড়ে বাড়িতে বসে ঝিমুচ্ছি৷ আমদের বন্ধুদেরও একই অবস্থা৷’’

কিন্তু এখন হল ছেড়ে বাড়িতে বসে ঝিমুচ্ছি: নূর আলম

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে মাস্টার্সের আরেক ছাত্র মীর আরশাদুল হক বলেন, ‘‘এখন তো বেসরকারি চাকরিও নেই৷ পড়াশুনাও বন্ধ৷ কোনো কাজ পাচ্ছি না৷ তাই বাড়িতে বসে আছি৷ পরিবারে হতাশা৷ আর সেই হতাশা আমার নিজের মধ্যেও৷ কবে যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে কেউ বলতে পারছে না৷’’

এদিকে করোনার আগে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো দেয়া হয়েছিল সেগুলোও এখন স্থগিত আছে৷ বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে করোনাকালে নতুন করে কোনো নিয়োগ হয়নি৷ আর বিসিএস-এর বাইরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগও বন্ধ রয়েছে৷ বিশেষ করে পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর পদে বড় একটি নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল তা-ও বন্ধ৷ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নিয়োগ বন্ধ আছে৷

তবে জুন মাসে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাতে ২২০৪ জন বিভিন্ন ক্যাডারের জন্য মনোনীত হন৷ এছাড়া গত জুলাই মাসে ৩৮ তম বিসিএস নন ক্যাডার পদের জন্য অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়েছে৷ ৩৯ তম বিশেষ বিসিএস থেকে করোনার মধ্যে ২০০০ চিকিৎসককে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷
৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য চার লাখ ১২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন দুই হাজার ১৩৫ পদের বিপরীতে৷ ৪০ তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষার ফল আটকে আছে৷ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হবে না৷

বাংলাদেশে ৯০ লাখ মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি করেন৷ এর মধ্যে ১৫ লাখ সরকারি খাতে, বাকি ৭৫ লাখ বেসরকারি খাতে৷ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন ছয় কোটি ৮ লাখ মানুষ৷

বাংলাদেশে প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন ২৫ লাখ তরুণ৷ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ লাখ তরুণের চাকরির সংস্থান হয়, বাকিরা বেকার থাকেন৷

বাংলাদেশের সরকারি খাত সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানে সক্ষম৷ বাকি ৯৬ শতাংশ এখনো বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানা বা আত্মকর্মসংস্থানে জড়িত৷

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে সরকারি খাতে চাকরি আছে মাত্র ৩.৮ ভাগ, বেসরকারি খাতে ১৪.২ ভাগ, ব্যক্তি খাতে ৬০.৯ ভাগ এবং অন্যান্য খাতে ২১.১ ভাগ৷

বাংলাদেশ ইন্সটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ (বিআইডিএস) অনলাইনে ৫ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯০৯ জনের ওপর  একটি জরিপ চালায়৷জরিপে অংশ নেয়া ১৩ শতাংশ মানুষ ফর্মাল সেক্টরে কাজ করতেন, তবে তারা জানান, তারা চাকরি হারিয়েছেন৷

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল৷ এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ছিল৷ তবে এখন খুব স্বল্প পরিসরে নিয়োগ শুরু হয়েছে ৷ বিডি জবস-এর প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘‘এই নিয়োগও হচ্ছে লার্জ স্কেল কোম্পানিতে৷ এসএমই খাত আসলে নতুন নিয়োগ এখনো শুরু করতে পারেনি৷ কারণ, তাদের ব্যবসা বসে গেছে৷’’

এসএমই খাত আসলে নতুন নিয়োগ এখনো শুরু করতে পারেনি: ফাহিম মাশরুর

This browser does not support the audio element.

কিছু নিয়োগ হচ্ছে কোম্পানির স্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে৷ আরেকটি অংশ হলো করোনার সময় যার চাকরি হারিয়েছেন বা গ্রামে গিয়ে আর ফেরেননি তাদের জায়গায়৷ আর নতুন কাজ তৈরি হওয়ার যে আশা করা হয়েছিল তা হয়নি৷ সার্ভিস সেক্টরে ডেলিভারি ম্যানের মতো কিছু নতুন কাজের সুযোগ হয়েছে৷ মাশরুর বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে৷ তবে উন্নতি হচ্ছে৷ স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩০০ চাকরির বিজ্ঞাপন পেতাম, এখন তা অনেক কম৷’’

তবে আগামীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কতটা বাড়বে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ আছে৷ কারণ, উৎপাদনের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে৷ সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘কম জনশক্তি দিয়ে কতটা সক্ষমভাবে উৎপাদন করা যায় তার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও আগের মতো কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে৷’’

এই করোনায় একমাত্র কৃষি খাতই সক্ষমতার সাথে টিকে আছে৷ এই খাতটিকে করোনা দুর্বল করতে পারেনি বলে জানান ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক এ কে এম মোরশেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের বেকার সমস্যাকে করোনা আরো তীব্র করেছে৷ ছয় মাস তো অর্থনীতিই অচল হয়ে পড়েছিল৷ তবে এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ