রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ইউরোপের দেশগুলো সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে ৷ অস্ত্র শিল্পের লবিস্টরা তাতেও সন্তুষ্ট নয়৷ এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
কয়েক মাস আগেও কেউ হয়ত ভাবতেই পারেননি ইউরোপে আবার যুদ্ধ হতে পারে৷ অনেক অস্ত্র বিক্রি কোম্পানিগুলো তখন অস্তিত্ত্ব রক্ষার লড়াইয়েই ব্যস্ত৷ রীতিমতো ধুঁকছিল তারা৷ তাই কর্মীদের অবসর ভাতা কমিয়েছে কোনো কোনো কোম্পানি৷বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের তখন সম্পদের পরিমানও কমেছে৷ কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে রাতারাতি৷ অনেক বিনিয়োগকারী নতুন করে আগ্রহী হচ্ছেন অস্ত্র শিল্পের প্রতি৷ তাদের বড় একটা অংশ মনে করে, অস্ত্র খাতে বিনিয়োগকে এখন ‘টেকসই বিনিয়োগের' মর্যাদা দেয়া উচিত৷
সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের দৃষ্টান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকের দুই বিশ্লেষক বলেছেন, মুক্ত গণতন্ত্রের মূল্যবোধ রক্ষায় ভূমিকা রাখে অস্ত্র, তাই এই খাতের বিনিয়োগও ‘টেকসই বিনিয়োগ'৷ এছাড়া সুইডিশ ব্যাংক এসইবির সাম্প্রতিক উদ্যোগও সবার নজর কেড়েছে৷ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ইতিমধ্যে নতুন পলিসি ঘোষণা করেছে তারা৷
এদিকে এতদিন সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও ইইউ অঞ্চলের দেশগুলোর ভাবনায়ও দ্রুত বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ইইউ কমিমনও পরিবর্তনশীল এ ধারাকে সমর্থন দিতে চায়৷ অস্ত্র খাতে বিনিয়োগকে সবুজ (টেকসই), নাকি বাদামি (অ-টেকসই) ক্যাটাগরিতে ফেলা হবে তা অবশ্য এখনো ঠিক করেনি ইউরোপীয় কমিশন, তবে জোটভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে৷
পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কি আসন্ন!
ভূরাজনীতি কি আবার ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে? বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা?
ছবি: KCNA via KNS/AP Photo/picture alliance
সময়ের চাকা
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শনের আস্ফালনও ছিল চরম। সোভিয়েতের পতনের পর তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বর্তমান সময়ে ফের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
ছবি: Pavel Golovkin/AP/picture alliance
রাশিয়ার অবস্থান
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ফোর্সের জন্য বিশেষ অ্যালার্ট জারি করেছেন। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ।
ছবি: Mark Schiefelbein/AP/picture alliance
রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ক্ষমতা
রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র আছে। সবমিলিয়ে তাদের পরমাণু ওয়ারহেড ছয় হাজার ৩০০।
ছবি: Oleg Kuleshov/TASS/dpa/picture alliance
অ্যামেরিকার পারমাণবিক শক্তি
ন্যাটোর সঙ্গে যৌথভাবে অ্যামেরিকার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০। যদিও এই সংখ্যা আরো বেশ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যামেরিকা সব অস্ত্রের খতিয়ান দেয়নি বলেই মনে করা হয়।
ছবি: picture-alliance/AP/US Navy/R. Rebarich
ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য
ফ্রান্সের হাতে আছে ৩০০ এবং যুক্তরাজ্যের হাতে ২১৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে।
ছবি: Ludovic Marin/AFP/Getty Images
চীনের শক্তি
বেজিংয়ের কাছে ৩২০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। তবে চীনও গোপনে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার বাড়িয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা।
ছবি: Stephen Shaver/UPI Photo/Newscom/picture alliance
পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মানসিকতা
পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানসিকতা আলাদা। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়। তাদের বক্তব্য, পরমাণু শক্তিকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
ছবি: Takuya Yoshino/AP/picture alliance
মার্কিন অভিমত
অ্যামেরিকা মনে করে, প্রয়োজনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তার মাত্রা হবে কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তা পৌঁছে যাবে। এ কারণে, কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে অ্যামেরিকা। মার্কিন প্রশাসন মনে করে, কোনো না কোনো সময়ে কম শক্তির পরমাণু যুদ্ধ হবে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জার্মানির কুচকাওয়াজ
জার্মানির টর্নেডো যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলটদের পরমাণু বোমা ফেলার ট্রেনিং দেওয়া হয়। জার্মানিতে সঞ্চিত মার্কিন পরমাণু বোমা যে কোনো সময় টর্নেডো বিমানের সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ফেলতে পারেন এই পাইলটরা। বছরে একবার নকল বোমা নিয়ে তারা কুচকাওয়াজ করে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Gallup
নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইটালি
এই তিন দেশও ন্যাটোর পরমাণু প্রকল্পের অংশ। এখানেও অ্যামেরিকার ১০০ থেকে ১৫০টি পরমাণু পরমাণু বোমা রাখা আছে। টর্নেডো বিমানে যা বহন করা যায়।
ছবি: Michael Varaklas/AP Photo/picture alliance
পরমাণু অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক আইন
কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ আছে। এর শাস্তি চরম হতে পারে। তবে কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র সমুদ্রে ব্যবহার করার সুযোগ এখনো আছে। এমনকী, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করতেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছবি: Zaporizhzhya NPP/REUTERS
11 ছবি1 | 11
জার্মানির প্রতিরক্ষা শিল্পের লবিস্ট গ্রুপ বিডিএসভি-র প্রধান হান্স ক্রিস্টফ আৎসপোডিয়েনও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তার মতে, ইইউ-র উচিত প্রতিরক্ষা শিল্পকে এখনই ‘সমাজকে টেকসই করার' প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া৷
অস্ত্র খাতে বিনিয়োগকে সবুজ ক্যাটাগরিভুক্ত করে এই খাতে বিনিয়োগকে এখনো সরাসরি উৎসাহিত করা না হলেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি অবশ্য থেমে নেই৷
নিজেদের সীমিত সামরিক শক্তিকে আপাতত মেনে নিয়ে সম্প্রতি ইউক্রেনকে ১৫০০ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক এবং অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার অঙ্গীকার করেছে জার্মানি৷ পাশাপাশি নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে ২০২২ সালের বাজেটে সামরিক খাতে বরাদ্দ ১০০ বিলিয়ন ইউরো বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছে সরকার৷ সামরিক খাতে বাজেট বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চ্য্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, ‘‘দেশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷''