শুধু ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে ইউরো এলাকার সংকট মিটছে না৷ তাই এর প্রবক্তা জার্মানি চাপের মুখে পড়েছে৷ অন্যদিকে বন্ড কিনে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে মামলার মুখে পড়েছে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
বিজ্ঞাপন
ইউরো এলাকার সংকট কাটানোর প্রচেষ্টায় চালকের আসনে দেখা গেছে জার্মানি ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক-কে৷ ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল – আইএমএফ-এর সপ্তাহান্তের বৈঠকে ইউরোজোনের বর্তমান দুরবস্থার জন্য তাদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোজোনের জন্য একের পর এক দুঃসংবাদের ফলে বাকি বিশ্বও উদ্বিগ্ন৷ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তারা চায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ৷ জার্মানির নেতৃত্বে ব্যয় সংকোচ ও সংস্কার-সর্বস্ব নীতির ফলে কোনো কাজ না হওয়ায় স্টিমুলাসের জন্য চাপ বাড়ছে৷
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
সোমবার ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন যে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শক্তিশালী পদক্ষেপের প্রয়োজন৷ তাঁদের প্রস্তাব, যে সব দেশ কঠিন সংস্কার চালিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের অবস্থানের উন্নতি করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে অবকাঠামোয় বিনিয়োগের মতো আর্থিক সাহায্য দেওয়া উচিত৷ বিনিয়োগ বাড়াতে আরও পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে৷ তবে সরকারি কোষাগারের অর্থ দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে চলেছে জার্মানি৷ আগামী ২৪শে অক্টোবর ইউরোপীয় শীর্ষ নেতাদের এক সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা হবে৷
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারিও দ্রাগি জার্মানিকে আরও ব্যয় করার ডাক দিয়েছেন৷ অন্যদিকে ফ্রান্স ও ইটালির মতো দেশকে শ্রম আইন শিথিল করে ব্যবসার জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তবে খোদ ইসিবি-ও চাপের মুখে রয়েছে৷ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে ইসিবি বন্ড কেনার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, ইউরোপীয় আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে জার্মানির কিছু অভিযোগকারী৷
ঘর সামলাতে ইউরো এলাকার উপর বেড়ে চলা চাপের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারের উপরেও৷ তবে গত সপ্তাহে দরপতনের পর সোমবার থেকে কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ নতুন করে মন্দার আশঙ্কা অবশ্য কাটছে না৷ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়র্স রেটিং এজেন্সি ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে৷ ফিনল্যান্ডের রেটিং-ও কমিয়ে দিয়েছে তারা৷
এদিকে ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না৷ ২০১৭ সাল পর্যন্ত সে দেশ অনুমোদিত মাত্রার বেশি ঘাটতি চালিয়ে যেতে চায়৷ তবে গ্রিসকে ঘিরে আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ আয়ারল্যান্ড ও পর্তুগালের পর সে দেশ বেলআউট থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ দাতারা অবশ্য সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখছে৷