ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য ভ্লাদিমির পুটিনকে চিঠি লিখেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কো৷ একই প্রশ্নে রাশিয়াকে আরো কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি দিয়েছে ইইউ৷ তবে গ্রিস সমর্থন না দেয়ায় ক্ষুব্ধ তারা৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনে চলমান সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫,১০০ জন মারা গেছে৷ এক রকেট হামলায় গত সপ্তাহান্তেও মারিউপোলে মারা গেছে ৩১ জন৷ ইউক্রেন সংকটের নিরসন হচ্ছে না৷ মৃত্যু, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হ্রাস পাচ্ছে না৷ এবং এ সবের জন্য রাশিয়াকেই দায়ী মনে করে ইউক্রেন সরকার এবং তার মিত্ররা৷ রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থনেই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনে সহিংসতা চালাচ্ছে – এ অভিযোগ আছে শুরু থেকেই৷ তখন থেকেই অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া৷ দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধও আরোপ করা হয়েছে৷ তারপরও অনড় ভ্লাদিমির পুটিনের সরকার৷
সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে পুটিনকে একটি চিঠি লিখেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো৷ তাতে গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেন এবং ‘রুশ-পন্থি' বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি কার্যকর করার জন্য পুটিনকে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়৷ সঙ্গে ইউক্রেনের পাইলট নাদিয়া সাভচেঙ্কোকে মুক্তি দেয়ার অনুরোধও জানানো হয় চিঠিতে৷ গত জুনে এক বিমান হামলায় রাশিয়ার দু'জন সাংবাদিক নিহত হন৷ সেই হামলায় নাদিয়া জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা নাদিয়াকে অপহরণ করে রাশিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
এখনো পোরোশেঙ্কোর চিঠির জবাব দেননি পুটিন৷ এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়াও জানাননি৷ এদিকে মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবে যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে ইউক্রেনে যুদ্ধরত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণ না করলে রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে৷
ইইউ-র বিবৃতি নিয়েও জন্ম দিয়েছে বিতর্ক৷ যৌথ বিবৃতিতে গ্রিস এবং সাইপ্রাস সরাসরি সম্মতি দেয়নি৷ ইইউ স্বভাবতই ক্ষুব্ধ৷ ইইউ পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুল্জ এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এর ফলে গ্রিস ইইউ-তে থেকেও প্রকারান্তরে রাশিয়ার পাশে দাঁড়াল৷ জার্মান টেলিভিশন চ্যানেল জেডডিএফ-কে তিনি বলেন, ‘‘খুব হতাশা নিয়ে লক্ষ্য করলাম, রাশিয়া প্রশ্নে ইইউ-এর সম্মিলিত অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াল গ্রিস৷'' গ্রিসের নতুন বামপন্থি প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘মি. সিপ্রাসের মতো একদিকে আপনি ইইউকে বলবেন আপনার দেশের প্রতি সংহতি জানাতে, অন্যদিকে প্রথমেই ইইউ-র সম্মিলিত অবস্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন – এটা মেনে নেয়া যায়না৷'' বৃহস্পতিবার গ্রিসে যাবেন শুল্জ৷ সিপ্রাসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেয়ার কথা রয়েছে তাঁর৷