নতুন করে চাপে পড়তে যাচ্ছে বিএনপি৷ এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ চারজন শীর্ষ নেতা জামিন না পেয়ে কারাগারে গেছেন৷ আতঙ্কে আছেন মামলার আসামিরা৷ এ পরিস্থিতিতে বিএনপি কী করবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে শীর্ষ পর্যায়ে৷
বিজ্ঞাপন
‘মানি লন্ডারিং' মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় বৃহস্পবিার রাতে৷ ওদিকে রবিবার আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে জামিন পাননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম৷ তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যে৷ তাঁদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ঢাকায় বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে নির্বাচনের আগে আন্দোলনের কারণে৷ তিনি এ সব মামলাকে রাজনৈতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন৷
নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার হওয়া নেতারা ধীরে ধীরে জামিনে ছাড়া পাচ্ছিলেন৷ কিন্তু এবার শীর্ষ নেতাদের জামিন বাতিল হওয়ায়, বিএনপি আবারো নতুন করে চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে৷
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ তিনজন নেতা জামিনেই ছিলেন৷ নিম্ন আদালতে তাঁদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না৷ আসলে এটা সরকারের প্রভাবে হয়েছে৷''
প্রতিহিংসা আর ধ্বংসের নির্মম রাজনীতি আর কতকাল
বাংলাদেশে হরতাল, অবরোধ নতুন কিছু নয়৷ বড় দুটো দলতো বটেই, অনেক ছোট দলও অতীতে এমন কর্মসূচি দিয়েছে৷ জনদুর্ভোগ বেড়েছে, সম্পদ বিনষ্ট এবং প্রাণহানিও হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক হরতাল, অবরোধগুলো দুঃস্বপ্নকেও হার মানিয়েছে৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
হামলার শিকার সাংবাদিক
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছে৷ এখনো সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি৷ তবে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সাংবাদিকের আহত হওয়ার ঘটনা চলমান আন্দোলনেই প্রথম ঘটছে৷ এ বছর হেফাজত-এ-ইসলামের সমাবেশে প্রহৃত হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন৷ গত দুই সপ্তাহে হরতাল এবং অবরোধের সময় ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক৷ ছবিতে নাদিয়া শারমিনের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতেচ্ছেন নারী সংগঠন কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যানবাহনে আগুন, রেললাইন উপড়ানো
হরতাল-অবরোধ মানেই রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ৷ কর্মসূচির এ লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হলে গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন লাগানো বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই স্বাভাবিক ঘটনা৷ তবে গত এক বছরে জ্বালাও-পোড়াওয়ের এই ধ্বংসলীলা অন্য মাত্রা পেয়েছে৷ হরতালের আগের রাতেই শুরু হয়ে যায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ৷ তাই বিরোধী দল ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন শুরুর আগেই জনমনে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক৷ ছবিতে মোটর সাইকেলে পেট্রোল ঢালছেন জামায়াত কর্মীরা৷
ছবি: Reuters/Andrew Biraj
শিশুরাও অসহায়, নিরাপত্তাহীন
যানবাহনে ঘুমন্ত চালক, হেল্পার বা চালকের সন্তানের আগুনে ঝলসে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে৷ ঢাকা শহর দেখতে এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে কাভার্ডভ্যান চালকের সন্তান মুনির৷ এমন হতভাগ্যদের তালিকায় আরো নাম যোগ হয়েছে৷ স্কুলে, রাস্তায়, এমনকি বাড়িতেও শিশুদের জীবন সংকটাপন্ন দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ৷ছবিতে সর্বশেষ অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে স্লোগানরত জামায়াত কর্মীরা৷
ছবি: Reuters/Andrew Biraj
নিরাপত্তা কর্মীদেরও নিরাপত্তার অভাব
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কারণে রায় ঘোষণার পর নেতাদের শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার এবং মুক্তির দাবিতে জামায়াত-ই-ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির পুলিশের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে৷ হামলায় নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী৷ রাজশাহীতে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যের মাথা ইটের আঘাতে থেতলে দেয়া হয়৷ বিরোধী দলের সর্বশেষ অবরোধ কর্মসূচিতেও কর্মরত পুলিশ ও বিজিবি সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন দায়িত্বরত অবস্থায়৷
ছবি: Getty Images/Afp/Munir uz ZAMAN
সংখ্যালঘুদের বাড়ি-মন্দিরে আগুন
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে অনেক সময়৷ তবে শীর্ষ নেতাদের শাস্তি ঘোষণার পর জামায়াত ও শিবিরের কর্মীরা সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর-মন্দির-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা চালায়৷ ছবিতে নিজের শিশুসন্তান কোলে সাতক্ষিরার অমিয় দাশ৷ ঘরবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সময় শিশুটিকে আগুনে ছুড়ে মারতে চেয়েছিল শিবির কর্মীরা৷
ছবি: Shayantani Twisha
কবে হবে অবসান!
প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের শরিক কয়েকটি দল নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছে৷ ফলে রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা বেড়েছে৷ ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন৷ তারপর থেকে বিরোধী দলের হরতাল, অবরোধ চলছে প্রায় বিরামহীনভাবে৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
তিনি দাবি করেন, উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করার যে কথা বলছে, এটা তার প্রতি হুমকি৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার আইন-আদালতকে তার স্বার্থে ব্যবহার করছে৷ সরকারের মন্ত্রী বলেছেন যে, বিএনপি আন্দোলন থেকে দূরে সরে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসলে বিএনপি নেতাদের আর কারাগারে থাকতে হবে না৷ এ থেকেই বোঝা যায় আইন-আদালত কাদের ইঙ্গিতে চলছে৷''' তাঁর কথায়, ‘‘এখন নতুন নতুন মামলাতেও জড়ানো হচ্ছে নেতাদের৷
তবে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘বিএনপির তিনজন নেতা হরতাল-অবরোধের সময় সহিংসতা এবং হত্যা মামায় হাইকোর্ট থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়েছিলেন৷ তাঁদের সেই জামিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বাতিল করে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেয়৷ এরপর তাঁরা নিম্ন আদালতে গেলে আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান৷'' তিনি বলেন, ‘এটা আইনি প্রক্রিয়ায় হয়েছে৷ এখানে আদালতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷ আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে এবং আইনের চোখে সবাই সমান৷ কে কত বড় নেতা – তা আইন দেখে না৷''
এদিকে হরতাল অবরোধের মামলার বাইরেও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ এই নেতাদের দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে প্রকাশ৷