বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে৷ ফলে এবার তাঁকে আটক করা হবে কিনা, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘শুধুমাত্র চাপে রাখতেই এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে৷''
বিজ্ঞাপন
নাশকতার একটি মামলায় খালেদা জিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে৷ বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলাটির অভিযোগ-পত্র গ্রহণ করে আসামিদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এই আদেশ দেন৷ তবে এটাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়৷ গত বছরও দুর্নীতির একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলাটির চার্জশিট দাখিলের পর এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে৷ আসলে বেশ কয়েকবার তিনি আদালতে হাজির হননি, তাই এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে৷ এখানে বিচারকের পরোয়ানা জারি করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় ছিল না৷ এছাড়া অন্য আরেকটি কারণ হলো রাজনৈতিক৷ খালেদা জিয়া বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করলে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিক্রিয়া হতে পারে৷ আমার মনে হয় না সরকার সেদিকে যাবে৷ দেশে এখন একটা ভালো রাজনৈতিক অবস্থা চলছে৷ তাই আমার মনে হয়, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসলে তাঁকে চাপে রাখতে জারি করা হয়েছে৷ এবার হয়ত তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেবেন৷ এ বিষয়টা সাধারণ মানুষও বোঝেন৷ সে জন্যই হয়ত এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি৷ অন্তত আমি সেটা দেখতে পাইনি৷''
মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ
গত বছরের ৬ মে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত শেষে খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ-পত্র দাখিল করে৷ তাতে খালেদা জিয়াসহ মোট ২৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে পুলিশ৷ যাত্রাবাড়ীতে বাসে বোমা হামলা, নাশকতা এবং হত্যার অভিযোগে পুলিশ পৃথক দু'টি অভিযোগ-পত্র আদালতে দাখিল করে৷ এ মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ২০টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে৷ এসব মামলায় মাঝে মধ্যেই তিনি আদালতে হাজিরা দেন৷
২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাঠের পুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে অগ্নিদগ্ধ ও আহত হন অন্তত ৩০ জন৷ এর মধ্যে নূর আলম নামে এক ঠিকাদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারাও যান৷ এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার এসআই কেএম নুরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন৷ মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে হুকুমের আসামি করা হয়৷ মামলা একটি হলেও দু'টি ধারায় পুলিশ আদালতে অভিযোগ-পত্র দাখিল করে৷ এর মধ্যে একটি হত্যার দায়ে শাস্তির দাবি করা হয় আর অন্যটি করা হয় বিশেষ ক্ষমতা আইনে৷
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন যে, ঘটনার দিন খালেদা জিয়া পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ ছিলেন৷ তাঁর বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি৷ তিনি সম্পূর্ণ রূপে নেতা-কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন৷ অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এ মামলায় আসামি করা হয়েছে৷ আর পুলিশ তদন্ত শেষে তাঁকে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগ-পত্র দিয়েছে৷ অথচ তিনি কোথায় আছেন, তা কিন্তু সবাই জানেন৷ এটা শুধু হয়রানির জন্য৷
এর আগে দু-দু'টি দুর্নীতি মামলার ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন৷ সরকার পক্ষের আইনজীবীরা জানান, এই মামলায় ৬০ কর্মদিবসে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়েছেন মাত্র সাতবার৷ তাঁর অনুপস্থিতির কারণে মামলাটি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না৷ সে কারণেই ঐ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা৷ বছর ঘুরে গেলেও সেই মামলায় গ্রেপ্তার হননি খালেদা জিয়া৷ পরে অবশ্য আদালত থেকে সেই মামলায় জামিন পান তিনি৷
আপনার কী মনে হয়? খালেদা জিয়া কি এবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেবেন? জানান নীচের ঘরে৷