ব্রিটেনে আজ (৮ই জুন, বৃহস্পতিবার) সাধারণ নির্বাচন৷ গত কয়েক দিন ধরে প্রবল চাপের মুখে থেকেও শেষ পর্যন্ত টেরেসা মে আবার ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন বলে পূর্বাভাষ দিচ্ছে কিছু জনমত সমীক্ষা৷
বিজ্ঞাপন
দেশে পর পর দুটি সন্ত্রাসী হামলা ও ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্কের মাঝে নিজের কিছু মন্তব্য ও আচরণ নিয়েপ্রবল চাপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে৷ সেই দুর্বলতার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন৷ কিন্তু বুধবারের একাধিক জনমত সমীক্ষা বলছে, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর রক্ষণশীল টোরি দলই সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরও বাড়িয়ে নিতে চলেছে৷
তবে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচন ও গত বছর ব্রেক্সিট সংক্রান্ত গণভোটের পর ব্রিটেনের জনমত সমীক্ষাগুলি ভুল প্রমাণিত হওয়ায় এবার তাদের পূর্বাভাষ নিয়ে সংশয় বেড়ে গেছে৷ তাছাড়া যেসব ভোটার শেষ পর্যন্ত মনস্থির করতে পারেননি, তাদের রায় নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷
নির্বাচনে জয় হলেও বেশ কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন ব্রিটেনের আগামী প্রধানমন্ত্রী৷ নতুন সরকারকে দ্রুত ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করতে হবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে স্পষ্ট ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে৷ ফলে ব্রিটেনের রাজনৈতিক নেতারা যেসব ছাড় চাইছেন, শেষ পর্যন্ত সেগুলি আদায় করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷
গোটা দেশে ৬৫০টি নির্বাচনি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে৷ সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা ভোট দিতে পারেন৷ ৯ই জুন ভোরের আগেই ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান রাজনৈতিক দল বা জোটের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করার আহ্বান জানাবেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ আগামী ১৩ই জুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে স্পিকার নির্বাচন ও সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবার কথা৷ এরপর ১৯শে জুন রানির ভাষণের মাধ্যমে সংসদের অধিবেশন শুরু হবে৷ সেই সপ্তাহেই ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা শুরু হবার কথা৷
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷