এবার কোরবানিতে কমপক্ষে ২০ ভাগ কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়নি৷ বিক্রি হওয়া চামড়ার দামও ছিল কম৷ প্রতিটি গরুর চামড়ার সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়৷ আর ছাগলের চামড়ার দাম ছিল মাত্র ১০ টাকা৷
বিজ্ঞাপন
সরকার এবার এমনিতেই চামড়ার দাম কম ধরেছে৷ অন্যবারের চেয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে ধরা হয়েছে৷ বিশ্ব বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে৷ অন্যদিকে গত বছরের ৭০০ কোটি টাকার চামড়া এখনো অবিক্রিত রয়ে গেছে৷ গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই চামড়া রপ্তানি বন্ধ আছে৷ সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমতি দিলেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি৷
চমড়া কেনার জন্য ৬৮০ কোটি টাকার যে ঋণ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে কাঁচা চামড়া কেনার আড়তদারদের দেয়া হয়েছে মাত্র তিন কোটি টাকা৷ ট্যানারি মালিকরা তাদের ১৫০ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে বলেও দাবি করেছে তারা৷ যার কারণে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি৷ পোস্তগোলার আড়তদার টিপু সুলতান বলেন, ‘‘বিক্রি না হওয়ায় এবার কমপক্ষে ২০ ভাগ চামড়া নষ্ট হয়েছে৷’’
সাখাওয়াত উল্লাহ
গত বছর বাংলাদেশে সব মিলিয়ে এক কোটি ১৫ লাখ গরু, ছাগল, মহিষ কোরবানি হয়েছে৷ এবার তার চেয়ে ৩৫-৪০ ভাগ কম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তারপরও চামড়ার চাহিদা নেই৷ টিপু সুলতান বলেন, ‘‘আমাদের হাতে টাকা ছিল না, তাই তেমন কিনতে পারিনি৷ চাহিদা কম থাকায় চামড়ার দাম এতটা কমে গেছে৷''
কোরবানির সময়ই দেশের ৬০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ করা হয়৷ বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘‘আমাদের গত বছরের চামড়ার ৬০ ভাগ এখনো বিক্রি করতে পারিনি৷ আমাদের চামড়ার প্রধান বাজার চীন৷ করোনার শুরুতে তারা চামড়া নেয়া বন্ধ করে দেয়৷ এরপর ইটালি, জাপান ও কোরিয়াতেও রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়৷ আর এখন চীনে করোনা কমে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র চীনের চামড়াজাত পণ্য নিচ্ছে না৷’’
করোনার কারণে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও কমে গেছে৷ সিপিডি'র অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, ‘‘বাংলাদেশের চামড়া শিল্প এখন ২৮ ভাগ নেগেটিভ প্রবৃদ্ধির শিকার৷ বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সরকারকে ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমতি দিতে বলেছিলাম৷ সরকার শেষ পর্যন্ত সেই অনুমতি দিয়েছে কিন্তু সময়মত না দেয়ায় তার ফল কিন্তু কোরবানির কাঁচা চামড়ায় পাওয়া যায়নি৷ ভারত হয়তো আমাদের ওয়েট ব্লুর বড় বাজার হতে পারে৷ কিন্তু তার জন্য তো আগাম প্রস্তুতির দরকার ছিল৷’’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
এই অর্থনীতিবদ মনে করেন, গতবারের তুলনায় এবার চামড়ার দাম কমানো ভাল সিদ্ধান্ত ছিল না৷ কম দামের কারণেই অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে৷ সরকার দাম কমানোয় আড়তদাররা আরো কমিয়ে দিয়েছে৷ চামড়ার সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে বলে জানান তিনি৷
চামড়ার পর বাংলাদেশে এবার কোরবানিতে অবিক্রিত পশু নিয়ে আরেকটি সংকট সৃষ্টি হতে পারে৷ ভারত থেকে গরু আনা বন্ধ করার পর বাংলাদেশ দেশীয় গরুতে স্বয়ংসম্পূর্ন হয়েছে৷ ৭০ হাজার খামারি আছেন যারা শুধু কোরবানিতে বিক্রি করার জন্য গরু পালন করেন৷ তাদের ৪০ ভাগের মত গরু এবার বিক্রি হয়নি৷ ফলে এই গরু নিয়ে তারা সংকটে আছেন৷ তাই বাংলাদেশের গরু রপ্তানির জন্যও বাজার খোঁজা উচিত বলে মনে করেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷
ছবিতে ঢাকার ঈদ উদযাপন
করোনার প্রকোপের পর সারা পৃথিবীতে ব্যাপক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনেও৷ বাংলাদেশে জাতীয় ঈদগাহের পরিবর্তে বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাতের আয়োজন করা হয়ে৷ গত বছরগুলোর তুলনায় এবার কোরবানির সংখ্যাও ছিল কম৷
ছবি: Mortuza Rashed
সন্তানকে নিয়ে নামাজে
বাবার সাথে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছে ছয় বছরের মাইশা করিম৷ রোযার ঈদের মতো এবারও জাতীয় ঈদগাহে দেশের প্রধান জামাত হয়নি৷ নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের গন্তব্য ছিল তাই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে৷
ছবি: Mortuza Rashed
ছিল জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা
ঈদের জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের জন্য মসজিদের প্রবেশপথে ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক স্প্রে বুথের ব্যবস্থা৷
ছবি: Mortuza Rashed
জামাতে দূরত্ব
বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার ছয়টি প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়৷ সকাল সাতটায় শুরু হয় প্রথম জামাত৷ মুসল্লিরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নামাজে অংশগ্রহণ করেন৷
ছবি: Mortuza Rashed
মোনাজাতে আকুতি
ত্যাগের মহিমায় পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা৷ করোনার কারণে এই বছর ঈদের বাস্তবতাও অন্যবারের চেয়ে আলাদা৷ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ঈদের জামাতের মোনাজাতে একজন মুসল্লি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন৷
ছবি: Mortuza Rashed
কোলাকুলি
মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের প্রতি সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান ছিল৷ কোলাকুলিতেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে৷ তবে অনেকেই তা মানেননি৷
ছবি: Mortuza Rashed
পশুর গোসল
কোরবানি দেয়ার আগে শান্তিনগরে একটি ছাগলকে পরিচ্ছন্ন করে নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed
উৎসর্গ
কোরবানি দেওয়ার জন্য পশুটিকে কোনভাবেই মাটিতে শোয়ানো যাচ্ছিল না৷ আনাড়ি হাতগুলোর সাথে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি শেষে অবশেষে পশুটিকে হার মানতেই হলো৷
ছবি: Mortuza Rashed
তদারকি
বাড়ির নিচে কোরবানির কাজ তদারকি করছেন এম এ সালাম৷ ঈদের তিন দিন আগেই ৭৮ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছিলেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed
কসাইদের ব্যস্ততা
জুলহাস খান ও তাঁর সহযোগী রফিক পেশাদার কসাই, তাদের দোকান রয়েছে ঢাকার রায়েরবাজারে৷ সকাল ১০টার মধ্যেই সাতটি পশু কাটাকাটি শেষ করে তারা রওনা দিয়েছেন আরও ৪ টি পশু প্রক্রিয়ার কাজে৷ এই দিনটাতে তাদের প্রচুর ব্যস্ততা থাকে৷
ছবি: Mortuza Rashed
পরিচ্ছন্নতা
বাসার সামনের রাস্তায় পশু জবাই করা হয়েছে৷ বর্জ্য থেকে যেন দূর্গন্ধ না ছড়ায় তাই দ্রুত একজন পানি দিয়ে সেসব পরিষ্কার করে নিচ্ছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মেয়র ২৪ ঘণ্টার মাঝেই সকল বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন৷ এরই অংশ হিসেবে প্রায় ৭০০ গাড়ি নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করতে দেখা গেল৷
ছবি: Mortuza Rashed
কোরবানির সংখ্যা কম
শান্তিনগরের একটি আবাসিক ভবনে প্রায় ১০০ টি পরিবারের বাস৷ প্রতিবছর কমপক্ষে ৬০ টি পশু কোরবানি হলেও এবার হচ্ছে মাত্র নয়টি৷
ছবি: Mortuza Rashed
আজ কোরবানি নয়
বিজয়নগরে একটি পার্টি সেন্টারের মালিক ৩ টি গরু কোরবানির জন্য কিনেছেন কিন্তু সেগুলোকে আগামীকাল জবাই করা হবে৷ রিপন নামের একজন কর্মচারী তাই গরুগুলোকে দেখেশুনে রাখছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed
নির্ধারিত স্থানে কুরবানি হচ্ছে না
ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ার খেলাঘর মাঠটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত পশু জবাইয়ের স্থান৷ স্থানীয়দের মতে, এখানে শেষ পশু জবাই হয়েছিল ২-৩ বছর আগে৷ বিভিন্ন অসুবিধা ও অসচেতনার কারণে এখানে এখন আর কেউ কোরবানি দেয় না, মাঠটি ফাঁকাই পড়ে ছিল কোরবানির দিনে৷