1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চারিদিকে মৃতদেহ, কান্না, অ্যাম্বুলেন্সের হুটারের শব্দ

৩ জুন ২০২৩

চারপাশে শুধু মৃতদেহ। তিনটি ট্রেনের অধিকাংশ কামরা পড়ে গিয়েছে পাশে। ঘটনাস্থল থেকে বিশেষ প্রতিবেদন।

দুর্ঘটনার পর এই অবস্থা হয় ট্রেনের কামরার।
দুর্ঘটনার পর এই অবস্থা হয় ট্রেনের কামরার।ছবি: Satyajit Shaw/DW

তিনটি ট্রেনের প্রায় সব কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনও কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। চাকা উপরে উঠে গেছে। আশেপাশে, সামনে পিছনে শুধু মৃতদেহ। চারপাশ থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। ছবি তুলছি। আর সেই সঙ্গে ভয়ংকর মন খারাপ গ্রাস করছে আমাকে।। অতি কষ্টে চোখের জল চেপে ধরে ছবি তুলে যাচ্ছি।

ওড়িশায় বালেশ্বরের কাছে বাহানগাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে চেন্নাই থেকে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া  সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। দুর্ঘটনার পর এখানে পৌঁছে দেখছি ভয়ংকর ছবি।

এমন দৃশ্য যা দেখে মাঝেমধ্যেই আঁতকে উঠছি। আতঙ্কিত হচ্ছি। চোখের সামনে যা দেখছি, তাতে একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, কী করে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে? একটা কামরার উপরে উঠে গেছে একটা ইঞ্জিন। অধিকাংশ কামরা আর দাঁড়িয়ে নেই। প্রায় সব পড়ে গেছে মাটিতে। কোনওটা গিয়ে পড়েছে রেললাইনের পাশের নয়ানজুলিতে।

কিছু সময় আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, তারা এখন লাশ মাত্র। রেলমন্ত্রণালয় তাদের সংখ্যা জানাচ্ছে। একটু পর পরই সেই সংখ্যা বাড়ছে। শুরুতে ছিল ৩৩, এখন ২৩৮। কোথায় গিয়ে সেই সংখ্যা থামবে তা বুঝতে পারছি না। অ্যাম্বুলেন্সের তীক্ষ্ণ হুটারের শব্দ মাঝেমধ্যেই কানে আসছে। প্রার্থনা করছি, যাদের নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে, তারা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

লাইন থেকে পাশে পড়ে গেছে ট্রেনের কামরা। ছবি: Satyajit Shaw/DW

চোখের সামনে এই মৃত্যুমিছিল সহ্য করতে পারছি না। যতই পেশাদার চিত্রসাংবাদিক হই না কেন, নিজের কাজের দিকে যতই মন দেয়ার চেষ্টা করি না কেন, সামনের এই দৃশ্যের একটা অভিঘাত তো থাকবেই।

কিছু জায়গায় লাইন বলে কিছু নেই। লোহার লাইন ভেঙে গেছে। কংক্রিটের স্লিপার ভেঙেচুরে গেছে।  কামরা থেকে বের করা হচ্ছে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই দেহ তোলা হচ্ছে ম্যাটাডোরে। স্বজনদের খুঁজছেন মানুষ। তাদের আশা একটাই, যদি এখনো কামরার ভিতরে বেঁচে থাকেন তারা। জানি না, তাদের আশাপূরণ হবে কি না, তবে তারাও শিউরে উঠছেন, যখন মৃতদেহ বের করা হচ্ছে।

স্থানীয় মানুষ বলছেন, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা মারে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যূত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটলো তা রেল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা যাবে। সেটা ভবিষ্যতের কথা। বর্তমান হলো, মৃত্যুমিছিলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি।