চারুকলায় আগ্রহী বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা
১৫ নভেম্বর ২০১০জার্মানিতে প্রতি দশ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে একজন বিদেশি৷ বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা আজকাল শিল্পকলার দিকেও ঝুঁকে পড়ছে৷ বিশেষ করে চারু ও কারুকলা এবং সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের ভীড় বাড়ছে৷ সেখানে প্রতি চারজন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে একজন বিদেশি৷ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং জাপান৷ শিল্পকলা ও সংগীত পাঠের ক্ষেত্রে এসব দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা অন্যান্য দেশ থেকে এগিয়ে৷ এর মূল কারণ হল এরা নিজ দেশেও শিল্পকলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে৷ এবং এরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে পারদর্শী৷ এদের আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশন৷
উৎসাহ যোগাচ্ছে ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশন
ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশনের চত্বর৷ উঁচু দেয়াল আর ছাদ৷ চকচক করছে মেঝে৷ ছাদ থেকে ঝুলছে অসংখ্য জুতো৷ জুতোগুলো মেয়েদের৷ সব রঙের জুতোই শোভা পাচ্ছে৷ এর পাশাপাশি রাখা রয়েছে প্রতিটি জুতোর বাক্স৷ এগুলো জুতোরই বাক্স৷ এই বিশেষ শিল্প-প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিল্পকলার ছাত্র থান লং৷ প্রদর্শনীর নাম ইনসাইড আউট– ‘ভেতরে-বাইরে, নিজেকে খোঁজা - মাতৃভূমিকে খুঁজে বের করা'৷
রাজনীতিকদের কাছে বিশেষ একটি বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছে এই প্রদর্শনী৷ ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মী বেয়াটে একস্টাইন এই প্রদর্শনী প্রসঙ্গে জানান, ‘‘ শান্তি রক্ষায় বা শান্তি প্রতিষ্ঠায় হেঁটে যাওয়া অথবা সেসব মানুষের জন্য এক জোড়া জুতো যাদের পা নেই৷ আর এই মোটো নিয়েই জুতোর বাক্স আর জুতো দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী হল আর কোরিডর৷ এই জুতো এবং বাক্সগুলো ভিয়েতনামে তৈরি৷ এরপর সেগুলো রপ্তানি করা হয় অ্যামেরিকায়৷ যে সব জুতো আর ফ্যাশনে নেই সেগুলোই এই প্রদর্শনীতে পাঠানো হয়েছে৷ থান লং'কে প্রদর্শনীর জন্য জুতোগুলো দেওয়া হয়েছে৷ জুতোগুলো প্রদর্শনীর পর বিক্রি করা হবে৷ সেই অর্থ যাবে ভিয়েতনামে এজেন্ট-অরেঞ্জ'এর শিকার হওয়া মানুষদের কাছে৷''
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় অ্যামেরিকা এক ধরণের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল৷ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এক ধরণের ফসল ও পাতা নাশক বিষাক্ত গ্যাস মাঠে ঘাটে৷ ‘এজেন্ট অরেঞ্জ' সেই ক্ষতিকর গ্যাসেরই সাংকেতিক নাম৷ সেই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের চরম মূল্য ভিয়েতনাম এখনও দিচ্ছে৷ সেই সময় যেসব মার্কিন সেনা ভিয়েতনামে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল তাদেরও অনেকে রেহাই পায়নি৷ যুদ্ধের পর ভিয়েতনামের বেশির ভাগ শিশুই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নয়তো বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছে৷ সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে৷
মাতৃভূমির সংজ্ঞা এখন অনেক বিস্তৃত
২৯ বছর বয়স্ক জার্মান-ভিয়েতনাম বংশোদ্ভূত থান লং লাইপশিসের হোখশুলে ফুয়র গ্রাফিক উন্ড বুখড্রুক অর্থাৎ গ্রাফিক্স এবং প্রিন্টিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে৷ সে বৃত্তি পেয়েছে ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে৷ তার পড়াশোনা, উৎসাহ উদ্দীপনাকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশন থান লংকে সাহায্য করেছে৷
কারোলিনা আর্জেন্টিনার মেয়ে৷ কোলনের হোখশুলে ফুয়র মেডিয়েন অর্থাৎ মিডিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছে৷ কারোলিনা বললেন, ‘‘ আমি মনে করি আর্জেন্টিনা বা বুয়েনস আয়রেস আমার মাতৃভূমি৷ এর কারণ হল আমি সেখানে জন্মেছি, সেখানে বড় হয়েছি৷ তবে আমি বিশ্বাস করি মাতৃভূমির সংজ্ঞা এখন অনেক বিস্তৃত৷ আমার মনে হয় যে যখন যেখানে থাকে, বসবাস করে – সেই মুহূর্তে সেটাই তার মাতৃভূমি৷ ''
কারোলিনা এবং থান লং অনেক ছোট বেলা থেকেই জার্মান ভাষার সঙ্গে পরিচিত৷ কারোলিনা জার্মান ভাষী স্কুলে পড়াশোনা করেছে আর থান ছোট বেলায় জার্মানিতে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছে৷ স্কুলে গেছে৷ দু' জনের কাছেই জার্মানি দ্বিতীয় মাতৃভূমির মতো৷ এর মূল কারণ হল দু'জনেই জার্মান ভাষায় দক্ষ৷
থান লং জানায়, শিল্পকলা নিয়ে যত ছাত্র-ছাত্রী জার্মানিতে পড়োশোনা করছে তার মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ হল বিদেশি৷ এখানে পড়াশোনার সুযোগ অনেক বেশি এছাড়া জার্মানি আর্থিকভাবেও বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করছে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক