1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধা রমা

২৫ জুলাই ২০১২

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নয় নম্বর সেক্টরে ১১৮ জন সদস্যের মহিলা মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন রমা দাস৷ যুদ্ধ চলাকালে নানা ঝুঁকিপূর্ণ ও হৃদয় বিদারক ঘটনার মুখোমুখী হয়েছেন রমা৷ দীর্ঘ চার দশক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন তিনি৷

ছবি: privat

‘‘আমরা একবার সাতক্ষীরা গিয়েছিলাম মেয়েদের নিয়ে৷ আমি যখন স্পায়িং করছিলাম, সব খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম, তখন একজন রাজাকার আমাদের খুব সন্দেহ করে এবং বলে যে, এরা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ৷ তরপর বলে, এরা নিশ্চয়ই মুক্তি৷ তখন একজন পাকিস্তানি সেনাও এসে বলল, মুক্তি হ্যায়? তখন আমরা বহুকষ্টে এক পরিবারের কাছ থেকে বোরখা নিয়ে সেটি পরে ওদেরকে ফাঁকি দিয়ে চলে আসি৷ সেই ভয়ংকর ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও গা শিউরে ওঠে৷ কারণ আমাদের দেহ তল্লাশি করলে তারা বোমা পেতো৷ আমাদের সাথে বোমা ছিল৷ কিন্তু ভাগ্য ভালো ছিল বলে ধরা পড়িনি৷'' এভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রমা দাস৷

একবার ভুল করে শান্তিবাহিনীর চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েও কীভাবে বেঁচে যান, সেসস্পর্কে রমা দাস বলেন, ‘‘আরেকবার শান্তি বাহিনীর এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম৷ প্রথমে আমাদের ভুলটা বুঝতে পারিনি৷ তবে সেই ভদ্রলোক শান্তি বাহিনীর চেয়ারম্যান হয়েও আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন৷ আমাদের খেতে দিয়েছেন৷ এরপর যখন দেখছেন যে, আমরা খুব বিপদগ্রস্ত মহিলা তখন তিনি আমাদেরকে রাতের আঁধারে গরুর গাড়িতে করে যশোর সিএন্ডবি রোড থেকে পার করে দিয়েছেন৷ আমাদের সামনে কিন্তু পাক সেনারাও পড়েছিল৷ তারা বলল যে, গাড়ি তল্লাশি করবো৷ কিন্তু শান্তি বাহিনীর চেয়ারম্যান আমাদের সাথে একজন লোক দিয়ে দিয়েছিলেন৷ সে তখন বলল যে, না৷ এই গাড়ি উনাদের একটা জায়গার নাম বলল যে, সেখানে যাবে৷ সাথে শান্তি বাহিনীর ঐ চেয়ারম্যানের নাম বলল যে, তাঁর পরিবারের সদস্য গাড়িত আছে৷ তখন আর আমাদের গাড়ি তল্লাশি করেনি পাক সেনারা৷ তারপর ঐ লোক এভাবে আমাদের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে৷ সেখানে আমাদের লোক ছিল৷ তাদের সাথে আমরা সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায়৷''

রমা দাসছবি: Pinaki Das

মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশবাসীর সহায়তার কথা উল্লেখ করে রমা দাস বলেন, ‘‘আমরা মুক্ত এলাকায় যেতাম৷ তথ্য সংগ্রহ করে আনতাম৷ দেশবাসী আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে৷ তারা যদি দেখতো যে, রাজাকার আসছে তাহলে তারা আমাদেরকে গোপনে তাদের কথা বলে দিতো৷ এছাড়া যারা আওয়ামী লীগের ছিল সাধারণত তাদের বাড়িতে গিয়েই আমরা থাকতাম এবং সেই অঞ্চলের খোঁজ খবর নিতাম৷''

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নানা দৃশ্য ও ঘটনা নিয়ে জহির রায়হানের তৈরি কিছু তথ্যচিত্রে তাঁর সাক্ষাৎকার ও প্রশিক্ষণের ছবি রয়েছে বলে জানিয়েছেন রমা দাস৷ স্বাধীন দেশে জাতি গঠনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি৷ এছাড়া শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি মহিলা সংস্থা, গালর্স গাইড এবং রেড ক্রিসেন্ট এর কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি৷

কিন্তু এতো নিষ্ঠার সাথে ঝুঁকি নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য কাজ করেও দীর্ঘ প্রায় চার দশক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি কিংবা কোন সুযোগ-সুবিধা পাননি মুক্তিযোদ্ধা রমা দাস, তাঁর মুক্তিযোদ্ধা স্বামী কিংবা তাঁদের ছেলে-মেয়েরা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘দুঃখ হলো সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কিছুই পাইনি৷ আমার স্বামী এখানে একটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন৷ তিনিও কিছু পাননি, আমিও কিছু পাইনি৷ কোন বেতন বৃদ্ধি, আর্থিক সুবিধা কিংবা কোন সম্মানী কিছুই পাইনি আমরা৷ আমাদের ছেলেমেয়েরাও সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাকরি কিংবা কোন সুযোগ-সুবিধা পায়নি৷''

এমনকি ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যাচাই বোর্ড তাঁর কাছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যোগদান এবং সমাপ্তির দলিল-প্রমাণ দেখতে চেয়েছিলেন৷ সেগুলো দেখাতে না পারায় তাঁকে অপমাণ করা হয়৷ তবে গত এক বছর আগে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন বলে জানান রমা দাস৷ এজন্য জেলা প্রশাসক বিশ্বাসের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই ত্যাগী নারী মুক্তিযোদ্ধা৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ