নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত মার্কিন ভিডিও গেম বিক্রেতা ‘গেমস্টপ'-এর একটি শেয়ারের দাম ২১ জানুয়ারি ছিল ৪৩.০৩ ডলার (তিন হাজার ৬৫৩ টাকা)৷ সেই শেয়ার ২৭ জানুয়ারি ৩৪৭.৫১ ডলারে (২৯ হাজার ৫০৪ টাকা) বিক্রি হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
অর্থাৎ মাত্র চারদিনে (মাঝে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল) গেমস্টপের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৫ হাজার ৮৫১ টাকা৷
একবছর আগে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি তাদের শেয়ার দাম ছিল ৪.২১ ডলার (৩৫৭ টাকা)৷
গত ১১ জানুয়ারি তিনজন নতুন পরিচালক নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল গেমস্টপ৷ সেদিন শেয়ারের দাম ছিল ১৯.৯৪ ডলার (১,৬৯৩ টাকা)৷ এরপর থেকে শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে৷ এতে মূল ভূমিকা রাখে সামাজিক মাধ্যম ‘রেডিট’-এর চ্যাট ফোরাম ‘ওয়ালস্ট্রিটবেটস’ (reddit.com/r/wallstreetbets/)৷ রিটেল ট্রেডাররা এই ফোরামে বেশ সক্রিয়৷ এই ফোরামের মাধ্যমে রিটেল ট্রেডাররা নিজেরা গেমস্টপের শেয়ার কেনার পাশাপাশি অন্যদেরকেও তা কিনতে উৎসাহ দেন৷ ফলে দিনদিন শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে৷
তবে গেমস্টপের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়া শুরু করে ‘শর্ট-সেলার’ গুরু বলে পরিচিত সিট্রোন রিসার্চ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ড্রু লেফটের একটি সিদ্ধান্তের পর৷ ২১ জানুয়ারি তিনি জানান যে, তিনি গেমস্টপের বিপরীতে বাজি ধরেছেন৷ এর মানে হচ্ছে, লেফট মনে করছেন গেমস্টপের শেয়ারের দাম শিগগিরই পড়ে যাবে৷ এবং সেখান থেকে তিনি লাভবান হবেন৷ আসলে শর্ট-সেলার মানেই হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট একটি শেয়ারের দাম পড়ে যাবে, তা ধরে নিয়ে তার কাছে থাকা ঐ শেয়ার বিক্রি করেন৷ এবং আশা করেন, যখন ঐ শেয়ারের দাম পড়ে যাবে তখন তিনি আবার তা কিনবেন৷ অর্থাৎ শেয়ারের দাম পড়বে সেই বাজি ধরেন একজন শর্ট-সেলার৷
এই কৌশল কাজে লাগিয়ে প্রখ্যাত হয়েছেন অ্যান্ড্রু লেফট৷ তাই তিনি যখন গেমস্টপের শেয়ার নিয়ে বাজি ধরেন তখন রেডিটের ওয়ালস্ট্রিটবেটসের রিটেল ট্রেডাররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন৷ তারা লেফটকে হুমকি দেয়া শুরু করেন৷ হুমকির বিষয়টি লেফট এফবিআইকে জানিয়েছেন৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Ozbilici
9 ছবি1 | 9
এছাড়া গেমস্টপের শেয়ারের দাম যেন না কমে তার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন ওয়ালস্ট্রিটবেটসের রিটেল ট্রেডাররা৷ ফলে গেমস্টপের দাম বেড়ে বর্তমানের পর্যায়ে এসেছে৷
অ্যান্ড্রু লেফট অবশেষে হার মেনে বুধবার বাজি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
এদিকে রেডিটের ওয়ালস্ট্রিটবেটস ফোরামে এতজন মেসেজ দিচ্ছিলেন যে মডারেটররা কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না৷ তাই ঘণ্টাখানেকের জন্য ফোরামটি শুধু আমন্ত্রিতদের জন্য খোলা রাখা হয়েছিল৷ ঐ সময়টুকুতে গেমস্টপের শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল৷ পরে ফোরামটি সবার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে৷
অ্যান্ড্রু লেফটের মতো ওয়াল স্ট্রিটের অনেক বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গেমস্টপের শেয়ার নিয়ে বাজি (শর্ট পজিশনস) ধরে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে৷ গেমস্টপ ছাড়াও এএমসি এন্টারটেইনমেন্ট, কস কর্পোরেশন, ব্ল্যাকবেরির মতো প্রতিষ্ঠান নিয়েও বাজি ধরেছিল ওয়াল স্ট্রিটের বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো৷ এসব বাজিতে হেরে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ওয়াল স্ট্রিটের মূল সূচকগুলোর মান দুই শতাংশের বেশি পড়ে যায়৷
ফলে বিষয়টি বাইডেনের নতুন প্রশাসনের নজরে পড়েছে৷ নতুন নিয়োগ পাওয়া অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেনসহ প্রশাসন ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ' করছে বলে জানা গেছে৷
এই ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমের পোস্টের কারণে শেয়ারের দাম বাড়া-কমার বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আর্থিক খাতে কর্মরত পেশাদার ব্যক্তিরা৷