আগামী চার মাসের মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু এবং কাশ্মীরের পরিস্থিতি আগামী চার মাসের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ রোববার পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য মহারাষ্ট্রে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন তিনি৷ এ সময় মোদী বলেন, ‘‘জম্মু এবং কাশ্মীরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে৷''
ভারতের একমাত্র এই রাজ্যটিতেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে৷ গত ৫ আগস্ট বিজেপি সরকারের নেয়া উদ্যোগে সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেয়া স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যসভা৷ এরপর থেকে সেখানে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিপুল সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি মানুষের চলাচলের স্বাধীনতা এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে সরকার৷
তবে সোমবার থেকে বন্ধ মোবাইল সংযোগ পুনরায় চালু শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, সেখানে গত ৪০ বছরব্যাপী চলমান যে অস্বাভাবিক পরিবেশ ছিল তা স্বাভাবিক হতে আর চার মাসের বেশি সময় লাগবে না৷''
জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখ ভারতের জন্য কেবল একখণ্ড জমি নয় বলেও অভিহিত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ভারতের অংশ হবার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ছিল সংবিধানসম্মত ‘বিশেষ মর্যাদা'৷ তবে নতুন আইন অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বা ‘ইউনিয়ন টেরিটোরি' করা হয়েছে, যার একটি লাদাখ অন্যটি জম্মু ও কাশ্মীর৷
দিল্লির দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের সাথে পুরোপুরি যুক্ত করার পাশাপাশি হিমালয় অঞ্চলটিতে উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্যই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ তবে স্থানীয়রা এই সিদ্ধান্তকে এখনও মেনে নেয়নি৷ অব্যাহত আছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভও৷
এফএস/এআই (রয়টার্স)
কাশ্মীরে উড়ছে ভারতের পতাকা
সংস্কৃতি, ইতিহাস, রাজনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে স্বকীয়তা নিয়ে থাকা জম্মু-কাশ্মীরে উড়ছে ভারতের জাতীয় পতাকা৷ বলা হচ্ছে, ভাষা, ধর্ম ও বর্ণে এই অঞ্চলে যে বৈচিত্র্য, সেটাকে পুঁজি করেই জম্মু-কাশ্মীরও লাদাখকে করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বাতিলে বদল
ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিকভাবে কাশ্মীরের যে অনন্য চরিত্র, তা ৩৭০ ধারা বাতিলের মধ্য দিয়ে বদলে ফেলা যাবে কি না তানিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা৷ কারণ জম্মু ও কাশ্মীরের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং রাজনীতি ভারতের অন্য অঞ্চলের থেকে একেবারেই আলাদা৷
ছবি: Imago Images/S. Majeed
বহু ভাষার মিশ্রণ
কাশ্মীরের উপত্যকা ও পাকিস্তানি অঞ্চলের বেশিরভাগ মুসলিম উর্দু ও কাশ্মীরি ভাষায় কথা বলেন৷ জম্মুর পশ্চিমাঞ্চলে মুসলিম ও পূর্বে বসবাসকারী হিন্দুদের ভাষা হিন্দি, পাঞ্জাবি ও ডোগরী৷ আর লাদাখের বৌদ্ধরা কথা বলেন লাদাখি ভাষায়৷
ছবি: Getty Images/S. Barbour
ধর্মীয় বৈচিত্র্য
কাশ্মীরে থাকেন মুসলিম, পন্ডিত ও শিখরা; জম্মুতে হিন্দু-মুসলিম এবং লাদাখে বৌদ্ধ ও মুসলিমরা বসবাস করায় এই অঞ্চলে ছিল ধর্মীয় বৈচিত্র্য৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid
খাবার-পোশাকেও ভিন্নতা
জম্মু ও কাশ্মীরীদের জীবনযাত্রা ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষের থেকে ভিন্ন৷ তারা যে খাবার খান, যেসব পোশাক পরেন সেগুলোর রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য৷ আর লাদাখের জনগণ অনুসরণ করেন তিব্বতীয়দের৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
‘কাশ্মীরিয়াত’
মুসলিম, হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধের ধর্মীয় এবং নিজস্ব সামাজিক রীতি জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখে ভিন্নধর্মী একটি সম্মিলিত সংস্কৃতি তৈরি করেছে, যাকে ‘কাশ্মীরিয়াত’ হিসেবে অভিহিত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
ক্ষোভ
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চল৷ তবে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে ফুঁসে উঠেছেন কাশ্মীরের জনগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শিথিল হলেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তারা৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
নতুন আশা
‘৩৫এ’ ধারা বাতিল হওয়ায় জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে যে কেউই এখন সম্পত্তি কিনতে পারবেন৷ এই দুই অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও করা যাবে সরকারি চাকরির আবেদন৷ সংখ্যালঘু সংরক্ষণ আইনের সুবিধার পাবেন কাশ্মীরে সংখ্যালঘুরা এবং কার্যকর হবে তথ্য অধিকার আইন৷