নেতা আবু হুসেইন আল হুসেইনি আল কুরাইশির মৃত্যুর খবর প্রায় চার মাস পর নিশ্চিত করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। গত এপ্রিলে তুরস্কের গোয়েন্দারা আবু হুসেইন আল হুসেইনি আল কুরাইশিকে হত্যার দাবি করেছিল।
বিজ্ঞাপন
আইএস-এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত একটি রেকর্ডিংয়ে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মুখপাত্র দাবি করেন, তাদের মৃত নেতার নাম আবু হাফস আল-হাশিমি আল-কুরাইশি। তুরস্কের গোয়েন্দাদের পক্ষে আইএস-এর প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে।
আইএস-এর মুখপাত্র আরো দাবি করেন, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ও সেখানকার প্রধান জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামস (এইচটিএস)-এর সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সময় মারা যান কুরাইশি।
যুদ্ধ আর ভূমিকম্পে সিরিয়ায় বাড়ছে পঙ্গুত্ব
এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ অভিশাপ হয়ে এসেছে সিরিয়ার মানুষের জীবনে৷ তার সাথে যুক্ত হয়েছে ভূমিকম্প৷ যুদ্ধে মৃত্যুর মিছিল তো আছেই, বেঁচে থাকাদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে তাকিয়ে আছেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে৷
ছবি: WFP/Photolibrary
চোখ আর পা হারালো রুয়া ও দোয়া
সিরিয়ার ইডলিবে শরণার্থী শিবিরের বাইরে খেলাধুলা করছিল ছোট্ট দুই বোন রুয়া আল-হাসান আর দোয়া-আল হাসান৷ শিশু দুটি জানতো না, ক্যাম্পে পদে পদে লুকিয়ে আছে অবিস্ফোরিত ক্লাস্টার বোমা৷ রাশিয়ার ফেলা এমনই এক অবিস্ফোরিত বোমার হঠাৎ বিস্ফোরণে চোখ হারায় রুয়া৷ আর বোমার আঘাতে পা হারায় ছোট্ট দোয়া৷
ছবি: Omar alBam/DW
বাবাকে হারিয়েছে দুই শিশু
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রুয়া-দুয়ার পরিবার দুইবার বোমা হামলার শিকার হয়৷ প্রথমবার হামলার শিকার হয়ে মারা যান তাদের বাবা৷
ছবি: SANA/REUTERS
দশক ধরে চলা যুদ্ধ
এক সময়ের সমৃদ্ধ দেশ সিরিয়িা এখন রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ৷ ২০১১ সালের মার্চে দেশটিতে যে সংকটের সূচনা তার আজও সমাধান হয়নি৷ এর ফল- হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু৷ সেই সাথে আরেক বাস্তবতা নীরবে অভিশাপের মতো দেখা দিয়েছে৷ তা হলো- দেশটিতে ক্রমেই বাড়ছে পঙ্গু হওয়া লোকের সংখ্যা৷
ছবি: Firas Makdesi/REUTERS
চার জনে একজন পঙ্গু!
জাতিসংঘের তথ্যমতে, দেশটির দুই বছরের বেশি বয়সি মোট জনসংখ্যার ২৮ ভাগ কোনো-না-কোনো ধরনের পঙ্গুত্বের শিকার৷ উত্তর সিরিয়ায় এমন মানুষ সবচেয়ে বেশি৷ সেখানে পঙ্গুত্ব বরণ করা লোকের সংখ্যা ৩৭ ভাগ৷ এর বড় কারণ হলো দশক ধরে চলা যুদ্ধ৷
ছবি: Omar Haj Kadour/AFP/Getty Images
৬৭ ভাগ যুদ্ধ-পঙ্গু
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানায়, দেশটিতে পঙ্গু হয়ে পড়া লোকেদের ৬৭ ভাগের পঙ্গুত্বের কারণ হলো যুদ্ধ৷ অর্থাৎ, বোমার আঘাত, গুলির আঘাত বা ক্লাস্টার বোমার বিস্ফোরণে পঙ্গুত্ব বরণ করছে তারা৷
ছবি: AFP
ভূমিকম্প আর পঙ্গুত্ব
একদিকে যুদ্ধের ভয়াবহতা কেড়ে নিচ্ছে জীবন আর পঙ্গু করে দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে৷ আরেকদিকে চলতি বছর ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহাণির পাশাপাশি শত শত মানুষ পঙ্গু হয়েছেন৷ ভূমিকম্পে ঠিক কতজন মানুষ পঙ্গু হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা বলা না গেলেও, হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল, সিরিয়ার প্রধান মিরিয়াম আবোর্দ-হুগোন জানান, ভূমিকম্পের কারণে পঙ্গু হয়ে পড়া লোকের সংখ্যা কম নয়৷
ছবি: Muhammed Said/AA/picture alliance
কেমন আছে রুয়া, দোয়া
স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সংগ্রাম করছে রুয়া আর দোয়া৷ বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দোয়ার হাত কেটে ফেলা হয়েছে৷ চোখ হারিয়ে বোন রুয়াও সংগ্রাম করছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার৷
ছবি: Omar alBam/DW
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
শারীরিক পঙ্গুত্ব মানে চাকরি পাওয়ায় অনিশ্চয়তা, জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা৷ আছে সামাজিক এবং মানসিক চাপও৷ গবেষক রায়া আল-জাদির বলেন, আরব সংস্কৃতিতে ডিজঅ্যাবিলিটি থাকলে সমাজের চোখে আপনি ‘ব্যার্থ’৷ এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় পঙ্গুত্ব বরণ করা হাজারো মানুষ৷
আইএস-এর জঙ্গিরা ইরাক ও সিরিয়ায় এখনও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুই দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় হাজারো জঙ্গি আত্মগোপন করে আছে বলে ধারণা করা হয়। ২০১৪ সালে আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি এই অঞ্চলে তাদের খেলাফত ঘোষণা করার পর সংঘাত আরও প্রকট হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী আইএসকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করে। ২০১৯ সালে সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় বাগদাদি নিহত হন। কুরাইশি আইএস-এর নেতৃত্বে আসেন ২০২২ সালের নভেম্বরে, দলটির তৎকালীন নেতা নিহত হওয়ার পর।
এসএফ/এসিবি (রয়টার্স)
দেখুন ২০২২ সালের ছবিঘর...
আইএস প্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের কিছু দৃশ্য
বুধবার মাঝরাতে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর প্রধান আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি মৃত্যুবরণ করেন৷ দেখুন অভিযানের কিছু মুহূর্ত...
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
মার্কিন অভিযান
সিরিয়ার আতমেহতে বুধবার মার্কিন সেনারা এক অভিযান চালায়৷ সেই অভিযানে মৃত্যুবরণ করেন আইএস প্রধান আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
নজরদারি বাইডেনের
অভিযান চলার সময় হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুম থেকে নজর রাখছিলেন জো বাইডেন৷ কমলা হ্যারিস ও অন্য উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা আধিকারিকরাও তার সঙ্গে ছিলেন৷
ছবি: The White House/REUTERS
বিস্ফোরণে ছারখার
তুরস্ক সীমান্তের কাছে আতমেহতে জঙ্গি নেতার লুকিয়ে থাকার খবর ছিল মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে৷ পরিকল্পনামাফিক অভিযান চালায় তারা৷ বিস্ফোরণের পর বাড়ির অন্দরের ছবি ধরা পড়েছে আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
আত্মঘাতী বোমা হামলা
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা বাড়ি ঘিরে ফেলার পর আত্মঘাতী বোমায় সপরিবারে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন আইএস প্রধান৷ সেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের৷ তাদের মধ্যে ছয়জন নারী এবং চারজন শিশুও রয়েছে৷ ভয়াবহ বিস্ফোরণে আশপাশের কিছু বাড়িরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
হামলার ক্ষত
এলাকার একটি বাড়ির রান্নাঘর৷ মার্কিন সেনা অভিযানের পর তা একেবারে ভেঙেচুরে গিয়েছে৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
শাটারে গুলির দাগ
আতমেহ এলাকার একটি দোকানের শাটারের এই ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে অভিযানের সময় কী পরিমাণ গোলাগুলি চলেছে৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
ডিসেম্বর থেকে নজরে কুরেশি
২০১৯ সালে সিরিয়াতে মার্কিন সেনাদের আরেক অভিযানে আইএস-এর সাবেক প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির মৃত্যুর পর কুরেশি দায়িত্ব পান৷ তার গতিবিধির উপর নজর রাখছিল যুক্তরাষ্টের সেনারা৷ গত ডিসেম্বরে অভিযানের পরিকল্পনা নেয় তারা৷ ছবিতে অভিযান শেষে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করছেন জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
বিস্ফোরণে ধ্বংস
আতমেহ অঞ্চলের সেই এলাকার অনেক বাড়িই অভিযানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত৷ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সেখানে উদ্ধার তৎপরতায় ব্যস্ত৷ বাইডেন এই অভিযানের জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ সেনারা নিরাপদে ফিরে আসায় স্বস্তিও প্রকাশ করেছেন তিনি৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
স্থানীয়দের সরিয়ে অভিযান
অভিযান শুরুর আগে স্থানীয়দের হাত তুলে দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে বলা হয়৷ ছবিতে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক বাড়ির কিছু পোশাক৷