চালকদের জন্য ডোপ টেস্ট
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে চালকদের ৮০ ভাগই মাদকাসক্ত৷ আর ১৬ থেকে ২০ ভাগ চালক অপ্রাপ্ত বয়স্ক৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছ ফিটনেসহীন যানবাহন, চালকদের ভুয়া লাইসেন্স, লাইসেন্স ছাড়া চালক৷ বিআরটিএ যে ৪০ লাখ যানবাহনের লাইসেন্স দিয়েছে তার মধ্যে চার লাখ যানবাহন ফিটনেস ছাড়াই সড়কে চলাচল করছে৷ আর ৪০ লাখ যানবাহনের জন্য লাইসেন্সধারী চালক আছেন ১৮ লাখ৷ ২২ লাখ চালক কম আছে৷ বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশের সড়ক মহাসড়কে চলাচল করে আরো ১৫ লাখ অবৈধ যান্ত্রিক যানবাহন৷ এই ১৫ লাখ অবৈধ যানবাহনের চালকদেরও লাইসেন্স নাই৷ আবার এক লাখের মত চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ভুয়া৷
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিউটিউটের(এআরআই) হিসাব মতে ২০১৮ সালে সারা দেশে তিন হাজার হাজার ৫১৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ এতে নিহত হয়েছেন চার হাজার ৭৬ জন৷ আহত হয়েছেন আট হাজার ৭১৩ জন৷
২০১৭ সালে দুর্ঘটনা ছিল গত বছরের তুলনায় কম৷ ওই বছর সারা দেশে দুর্ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৯১৭টি৷ নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৬৭২ জন, আহত হয়েছেন সাত হাজার ৪০০ জন৷
আর চলতি বছরের প্রথম আট মাসে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে দুই হাজার ৬৬৪টি৷ এতে দুই হাজার ৯৮৩ জন নিহত এবং পাঁচ হাজার এক জন আহত হয়েছেন৷
এআরআই-এর গবেষণা মতে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বেপরোয়া ড্রাইভিং৷ এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, ‘‘আর এই বেপরোয়া ড্রাইভিং-এর মূলে রয়েছে মাদকাসক্তি , অদক্ষতা, ভুয়া লাইসেন্সধারী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক৷ সড়ক দুর্ঘটনায় মাদকসক্তির বড় একটি ভূমিকা থাকলেও তা ঠিক কত ভাগ সে গবেষণা আমরা করিনি'' তিনি বলেন, ‘‘এটা জানাও কঠিন ৷ কারণ চালকরা দুর্ঘটনার সময় পালিয়ে যান৷ মারা যান শতকরা ১৯ ভাগ৷ ফলে চালক কি অবস্থায় ছিলেন তা অনেক সময়ই জানা সম্ভব হয় না৷''
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে যত বৈধ যানবাহন তার অর্ধেকও বৈধ চালক নেই৷ আবার যাদের বৈধ লাইসেন্স আছে তারাও কতটুকু ফিট তা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ তাদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক যেমন আছেন৷ মাদকাসক্ত চালকও আছেন৷ মাদকাসক্ত চালক আমাদের জন্য বড় সমস্যা৷ ঢাকা শহরের বাইরের কথা আমি জানিনা৷ তবে ঢাকায় আমরা নানাভাবে তথ্য নিয়ে দেখেছি চালকদের শতকরা ৫০ ভাগ মাদকাসক্ত৷''
তিনি বলেন,‘‘আমরা গাড়িতে মাদকাসক্ত চালক রাখতে চাই না৷ এজন্য চালকদের ডোপ টেস্ট বা তারা মাদকাসক্ত কিনা তা পরীক্ষার বিধান চাই৷ আগামীকাল(১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় মালিক শ্রমিকদের বৈঠক আছে৷ সেই বৈঠকে বিস্তারিত মাদকাসক্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে৷''
জানা গেছে, চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রস্তাবের মধ্যেই মাদকাসক্ত কিনা তা পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে৷ আর শুধু লাইসেন্স ও নিয়োগের সময় নয়, সড়কেও চলাচলের সময় ঝটিকা মাদকাসক্তির পরীক্ষা যাতে করা হয় তারও প্রস্তাব দেয়া হচেছ৷ মালিক শ্রমিকরা এক হতে পারলে এনিয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হবে৷ আর এই মাদক পরীক্ষা শুধু চালকদের জন্য নয় সব ধরনের পরিবহণ শ্রমিকদের জন্যই প্রস্তাব করা হবে৷ এই কাজে চিকিৎসক ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতেরও প্রস্তাব করা হচ্ছে মালিকদের পক্ষ থেকে৷
কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন,‘‘অবিশ্বাসের কারণে যদি মাদক পরীক্ষা করা হয় তাহলে আমাদের আপত্তি আছে৷ আমাদের বিশ্বাস করতে হবে৷ আর নিয়োগপত্রসহ সব সুবিধা দিতে হবে৷ এসব না দিয়ে এইসব পরীক্ষা করা হবে হয়রানীর সামিল৷''
এআরআই-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন,‘‘ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নিলে কিছুটা সুফল পাওয়া যাবে৷ তবে পরিবহণ শ্রমিকদের জীবন মান উন্নত করাসহ সচেতনতার ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ তাদের যে জীবন মান, কাজের পরিবেশ ও থাকার পরিবেশ তাতে মাদকাসক্ত হওয়ার কারণ আছে৷ তারা কেন মাদকাসক্ত হন তা চিহ্নিত করে দূর করতে হবে৷''
তার মতে,‘‘গাড়ি চালানোর সময়তো বটেই অন্য সময়ও চালকরা মাদক গ্রহণ করলে তা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে৷''
এদিকে বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন,‘‘চালকদের লাইসেন্স দেয়ার সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিধান আছে৷ তবে ডোপ টেস্ট বা মাদকাসক্তি পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই৷''