1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চালের দাম বাড়লো কেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অন্তত দু'জন মন্ত্রী চালের দাম বাড়ার জন্য সাংবাদিকদের দায়ী করেছেন৷ তাঁদের কথা, সাংবাদিকরা গুজব ছড়ানোর কারণেই দাম বেড়েছে৷ আসলে চালের কোনো ঘাটতি নেই৷ তারপরও দাম বাড়ার জন্য তাঁরা মিল মালিকদেরও দায়ী করেছেন৷

Lebensmittel in Markt in Bangladesch
ছবি: DW

দেশের বিভিন্ন অটো রাইস মিলে অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ প্রায় প্রতিদিনই চাল জব্দ এবং জরিমানা করছে ভ্রাম্যমান আদালত৷ সরকারের কথা, কেউ কেউ চাল গুদামে রেখে দাম বাড়াচ্ছে৷ এই অভিযোগে রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলিকে পাঁচ দিন আগে গ্রেপ্তারের নির্দেশও দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷ তবে শেষ পর্যন্ত তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ তাঁরা মঙ্গলবার ঢাকায় এসে মন্ত্রনালয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফয়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে করে গেছেন বিনা বাধায়৷ বৈঠকের পর দুই মন্ত্রী জানিয়েছেন, মিলারদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমেই চালের চাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে৷

সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে খোলা বাজারে ন্যায্য মূল্যে চাল বিক্রি শুরু করেছে গত রবিবার থেকে৷ ৩০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৭ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করা হচ্ছে৷ ঢাকায় ১০৯টিসহ সারাদেশে ৬২৭টি ট্রাকে করে এই চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে৷ তবে এরইমধ্যে ক্রেতা ও ডিলার উভয়ই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে৷ আতপ চাল হওয়ায় ক্রেতারা পছন্দ করছেন না৷ বাংলাদেশে ভাত রান্নার জন্য সেদ্ধ চালের ব্যবহার বেশি৷ ক্রেতাদের আটা কেনার শর্ত হিসেবে আতপ চাল কেনা বাধ্যতামূলক করায়ও কাজ হচ্ছে না৷ আর ডিলাররা আগ্রহ হারাচ্ছেন আতপ চালের চাহিদা না থাকায়৷

হাওর অঞ্চলে বন্যা এবং ব্লাস্ট রোগের কারণে এবার চলতি মাস পর্যন্ত ২০ লাখ টন চালের ঘাটতি তৈরি হয়৷ আর এই ঘাটতি মেটাতে সরকার চাল আমাদি শুরু করে৷ সরকারি পর্যায়ে সাড়ে চার লাখ টন চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন আছে৷ গত জুলাইয়ে  ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ টন আতপ চাল আমদানি করা হয়৷

কামরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

থাইল্যান্ড থেকে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল ও ভারত থেকে ২ লাখ টন আতপ ও সেদ্ধ চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ কিন্তু ভারত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত  চাল না দেয়ার সিদ্ধান্তের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে চালের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়৷ এর আগে খাদ্যমন্ত্রী মিয়ানমারে চাল আমানির জন্য গেলেও তিনি চুক্তি সই করে আসতে পারেননি৷ এটাও চালের বাজারে প্রভাব ফেলে৷ পরে অবশ্য চলতি সপ্তাহেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে এক লাখ টন আতপ চাল বাংলাদেশে রপ্তানির চুক্তি করে৷

অটো রাইস মিলগুলোর মালিকদের মধ্যে দু'টি গ্রুপ আছে৷ সরকার সমর্থক গ্রুপটির নেতৃত্ব দেন মো. খোরশেদ আলম খান৷ তিনি রবিবার বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন মো. আব্দুর রশিদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি চাল মজুদ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে৷ আর তখনই বাণিজ্যমন্ত্রি ওই গ্রপের সভাপতি আব্দুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং চালের বাজার আরেক দফা অস্থির হয়৷

গত সপ্তাহে বাংলাদেশে সব ধরনের চালের দাম প্রতিদিন কেজিতে দুই টাকা করে বৃদ্ধি পায়৷ মোটা চালের কেজি হয় ৫০ টাকা। যা বাংলাদেশের চালের দামে একটি রেকর্ড৷

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চালের দাম গত অগাস্টে মোটা চালের কেজি ছিল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা৷ এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে  ৫০ থেকে ৫৪ টাকা৷ একইভাবে, একই সময়ে ৫০ টাকার সরু চাল এখন হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা৷ তবে চালের গুদামগুলোতে অভিযান শুরুর পর গত দু'দিনে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে৷

লায়েক আলী

This browser does not support the audio element.

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছিল তিন মাস ভারত চাল দেবে না৷ আর এ কারণেই চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়৷ এর সঙ্গে মজুদদারী তো ছিলই৷ তবে আমরা মজুদদারীর বিরুদ্ধে অভিযান এবং খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু করায় চালের দাম এখন কমছে৷ ভবিষ্যতে আরো কমবে৷''

তবে কী পরিমান চাল ব্যবসায়ীরা মজুদ করেছিলেন বা এখনো মজুদ আছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী  কোনো পরিসংখ্যাণ দিতে পারেননি৷ তাঁর কথা,‘‘ অভিযানের কারণে চালের দাম কমেছে এটাই আসল কথা। মজুদ চালের পরিমান জেনে কী হবে৷''

আর অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘আমরা চাল মজুদ করিনি৷ আমাদের মিলগুলোতে অভিযান চালিয়ে কোনো মজুদ চাল পাচ্ছে না পুলিশ৷ আমাদেরা অযথাই দোষারোপ করা হচ্ছে৷''

তাহলে চালের দাম বাড়লো কেন? তিনি বলেন, ‘‘ টিভিতে বড় করে খবর দেখানো হয়েছে, ভারত চাল দেবে না৷ তারপর যা হওয়ার হয়েছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার প্রশ্ন, বাজারে এখন এত চাল আসছে কোথা থেকে? আমাদের চাল তো কেউ নিচ্ছে না৷ এই চাল কাদের কাছে ছিল?''

মন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে লায়েক আলী বলেন, ‘‘মন্ত্রী যদি বলেন আমরা চাল মজুদ করেছি, তাহলে তো আমাদের কিছু বলার থাকে না৷ আমরা তো মজুদ করি নাই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ