1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চালের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ জুন ২০১৭

বাংলাদেশে চালের মজুত গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে৷ এখন দেশের গুদামগুলোতে মজুত চালের পরিমাণ এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন৷ ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের এই সময়ে খাদ্যগুদামে চাল মজুদ ছিল পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন৷

Symbolbild Bäuerin auf den Philippinen
ছবি: AFP/Getty Images/R. Gacad

বাজারে সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে৷ আর চালের দাম বাড়ার এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত পাঁচ মাস ধরে৷ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী সরু চালের কেজি গত সপ্তাহে ছিল ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা৷ আর চলতি সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে গড়ে ২ টাকা করে৷ মোটা চালের দামও একই রকম৷ কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৪৬ থেকে হয়েছে ৪৮ টাকা৷ গত একমাসে সব ধরনের চালের দাম ৪ থেকে ৮ শতাংশ৷ আর বছরে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে৷

আর চালের এই অব্যাহত দাম বাড়ায় বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ও নিম্নবিত্ত মানুষ৷ দিনাজপুর থেকে কাজের জন্য ঢাকায় আসা দিনমজুর আলি হোসেন একটি বাস কোম্পানিতে হেলপারের কাজ করেন৷ পরিবার নিয়ে থাকেন শ্যামলী এলাকায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাসের ট্রিপ অনুযায়ী টাকা পাই৷ যানজটের কারণে ট্রিপ কম হওয়ায় আয়ও কমে যাচ্ছে৷ আর চালসহ জিনিসিপত্রের দামও বাড়ছে৷ আগে দিন শেষে চারশ টাকা পেলেই চাল ডাল কিনে বাসায় যেতে পারতাম৷ এখন পারি না৷ চাল কিনতেই বাড়তি খরচ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা৷ চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছ, মাংস ও সবজি, হলুদ, মরিচ, পেয়াজের দাম৷ তাই ৪০০ টাকার বাজার করতে এখন লাগে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা৷''

Kamrul Islam.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক দরিদ্র ও দিনমজুর পরিবার হিমশিম খাচ্ছে৷ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কোনো কোনো পরিবারের সদস্যরা এখন দুই বেলার পরিবর্তে একবেলা খাচ্ছেন৷ শহরে ওএমএস-এর চালের জন্য লাইন লম্বা হচ্ছে৷ অনেকে আবার কষ্টে থাকলেও সামাজিক কারণে এই লাইনে দাড়িয়ে চাল কিনতে পারছেন না৷

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘এবার হাওরে জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার কারণে ধানের যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে৷ ঢাকার বাবুবাজার- বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে চাল আমদানি করা হয়নি৷ দেশে উৎপাদিত চাল দিয়েই চাহিদা মিটেছে৷ কিন্তু এবার হঠাৎ হাওড়ে ফসল নষ্ট হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন ভারত থেকে কিছু চাল আমদানি হচ্ছে৷ কিন্তু চালের ওপর আমদানি ট্যাক্স নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বড় চালানে কেউ চাল আমদানি করছেনা৷ এখন চাল আমদানিতে শতকরা ২৫ ভাগ ট্যাক্স দিতে হয়৷ সরকার বলছে ট্যাক্স কমাবে৷ তাই কেউ আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেনা৷ ট্যাক্স কমালে এখন যারা আমদানি করবেন তারা লোকসানে পড়বেন৷ সরকারের উচিৎ ট্যাক্সের বিষয়টি এখনই ঠিক করে ফেলা৷''

সরকারের হিসাবে হাওরের বন্যায় ছয় লাখ টন বোরো ধান নষ্ট হয়েছে৷ এখন ছয় লাখ টন চাল আমদানি করলেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে৷ তাই এই চাল আমদানির সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার৷ এর অংশ হিসেবে দেড় লাখ টন চাল আমদানির টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে৷ আরও তিন লাখ মেট্রিক টন ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি আমদানির চুক্তি হয়েছে৷ কিন্তু যে দরে টেন্ডারে চাল পাওয়া যাচ্ছে জিটুজি পর্যায়ে দর তার থেকে বেশি৷

গত ১৪ জুন আবার আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি৷ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার হাওড়ে বন্যা ছাড়াও এবার ব্লাস্ট রোগে ফসলহানি হয়েছে৷ কিন্তু সেজন্য এখন চালের সংকট হওয়ার কথা নয়৷ সংকট হওয়ার কথা ৩-৪ মাস পরে৷ আর তা যাতে না হয় সেজন্য এখনই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি৷ কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের মজুদ থাকার পরও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে৷ তারা ভয় ছড়িয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এই সব মজুতদার ও বিএনপি ঘরানার ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷ তবে আমারা এরইমধ্যে নিয়ন্ত্রণে এনেছি৷''

Nizam.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাল আমদানি শুরু করেছি৷ এনবিআরের কাছে চালের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের লিখিত আবেদন করেছি৷ প্রত্যাহার করা হলে চালের দাম কমে যাবে৷''

সরকার এবার ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন কম হবে বললেও বাস্তবে এটা আরো বেশি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘হাওর অঞ্চলের সাত জেলায় এ বছর আগাম বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে৷ আর ১৯ জেলায় ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণে (ব্লাস্ট রোগ) উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এই দুই কারণে এ বছর ১০ লাখ টনের বেশি বোরো ধান নষ্ট হয়েছে৷''

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ খায় বিআর-২৮ এবং পাইজম চাল৷ এই দুই প্রকারের চালেও দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি৷ বাজারে এখন প্রতি কেজি বিআর-২৮ চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৬ টাকা৷ আর পাইজম চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা৷ অথচ জানুয়ারিতেও এই দুই প্রকার চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা৷ আর গত বছরের এই সময় দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা৷ এক বছরে এই চালে দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫১ শতাংশ৷

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টন ধান-চাল উৎপাদন হয়৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি টনের মতো৷ বাকি প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে৷ গত বছর সরকারিভাবে ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানি করা হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও এবার চাল সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ