1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমারের বিপ্লবীরা

রডিয়ন এবিশহাউজেন/এসি৮ আগস্ট ২০১৩

মিয়ানমারে গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস দীর্ঘ ২৫ বছরের৷ ইয়াঙ্গনে সাবেক বিপ্লবীদের একটি ঘরোয়া বৈঠক থেকে বোঝা যায় যে, অতীত আজও পুরোমাত্রায় বর্তমান৷

Burma erhält Schuldenerlass über sechs Milliarden Dollar YANGON, MYANMAR - NOVEMBER 30: Traffic moves along a busy downtown street November 30, 2012 in Yangon, Myanmar. Business is booming in this newly opened Southeast Asian country. Import restrictions have been eased resulting in many new cars seen on the streets. (Photo by Paula Bronstein/Getty Images)
ছবি: Getty Images

ইয়াঙ্গনের প্রাচীন অংশে একটি ব্রিটিশ আমলের বসতবাড়ি৷ বাড়ির না আছে নম্বর, না আছে রাস্তার নামের ফলক৷ একটি সরু, নোংরা সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠতে হয়৷ সেখানে একটি লাইব্রেরি৷ লাইব্রেরিটি কিন্তু পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন৷ তাকে সারি সারি বইয়ের পরে বই৷

লাইব্রেরির এক কোণায় একটি টেবিলে সাদা টেবিল ক্লথ পাতা, তার উপর চায়ের কেতলি আর কেক৷ টেবিলে বসে আছেন তুন উইন নায়িন, যিনি একটি পত্রিকার সম্পাদক, আবার গ্র্যাফিক ডিজাইনের কাজও করেন৷ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কিয় মিন, যিনি একটি বইয়ের দোকানের মালিক এবং তিন নায়িং তো, যিনি ইতিহাসের অধ্যাপক৷

বিপ্লবের তৃণমূলে

১৯৮৮ সালে যখন সারা দেশে সমাজতন্ত্রী দল বিএসপিপি ও সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান চলেছে, তখন এই টেবিলের তিনজন ছিলেন বর্মা সরকারের ইঞ্জিনিয়ার৷ তুন উইন নায়িন এবং তিন নায়িং তো আন্দোলনে যোগ দিতে বেশি দেরি করেননি৷ তুন ইয়াঙ্গনের একটি শহরতলিতে শ্রমিক আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দেন৷ তিন নায়িং ফিরে যান ইরাবতী নদীর তীরে যে গ্রামে তাঁর জন্ম হয়েছিল৷ সেখান থেকে তিনি ইঞ্জিনিয়ারদের একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ধর্মঘটের আয়োজন করেন৷ কিয় মিন ছিলেন সরকারি কর্মচারী – তাঁর গণ-অভ্যুত্থানে যোগ দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না৷

জেনারেল অং সানছবি: AP

সে বছরই সেনাবাহিনী নির্মম হাতে গণ-অভ্যুত্থানের অন্ত ঘটায়৷ তুন, তিন ও কিয়, তিনজনের সামনে তখন তিনটি পথ খোলা: কিছুটা ঝুঁকি সত্ত্বেও পুরনো জীবনে ফিরে যাওয়া; গুপ্তপ্রতিরোধে যোগ দেওয়া, কিংবা মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া৷ তুন উইন নায়িন গুপ্তপ্রতিরোধকেই বেছে নেন৷

তুন তাঁর জন্মের শহর মান্ডালাতে ‘‘ওত্তামা'' নাম দিয়ে একটি গুপ্তপ্রতিরোধের পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন৷ মিয়ানমারের ইতিহাসে প্রখ্যাত ওত্তামা ছিলেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন৷ তুনকে পরে ঐ পত্রিকা প্রতিষ্ঠার কারণে গ্রেপ্তার হতে হয় এবং বহুবছর কারাবাস করতে হয়৷

তিন নায়িং তাঁর পুরনো কর্মস্থানে ফেরেন বটে, কিন্তু মাস তিনেক পরেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন, যখন সরকারের তরফ থেকে সব কর্মচারীদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, তারা গণ-অভ্যুত্থানের সময় কি করছিলেন৷ কিয় মিন বিপ্লবের সময় তাঁর চাকরি ছাড়েননি বটে, কিন্তু শেষমেষ চাকরি ছেড়ে একটি বইয়ের দোকান খোলেন৷

অং সান-এর উত্তরাধিকার

লাইব্রেরির সাদা টেবিলক্লথে ঢাকা টেবিলের আলোচনাচক্রে পরে যোগ দেন তুন উইনের স্ত্রী নেইন নেইন নোয়ে, যিনি পেশায় রাজনীতিক এবং ‘‘নতুন সমাজ গণতান্ত্রিক দল'' বা ডিপিএনএস নামধারী একটি ছোট বিরোধী দলের মুখপাত্রী৷ টেবিলে চারজনেরই মত এই যে, অতীতের গণ-অভ্যুত্থান আর বর্তমানের আন্দোলনের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই: ‘‘জেনারেল অং সান ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন৷ তিনি ছিলেন সমগ্র জাতির প্রতিভূ এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন৷ আজ আমরা লড়ছি সামরিক একনায়কতন্ত্রে নাগরিক অধিকার দমন ও লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে৷''

এবং সে লড়াই এখনো শেষ হয়নি৷ ‘‘স্বভাবতই আজকের পরিস্থিতি ২৫ বছর আগের চেয়ে ভালো৷ সেটাই হল ১৯৮৮ সালের সাফল্য'', বললেন তুন উইন৷ ‘‘কিন্তু বর্মায় আজ অবধি খুব কমই বদলেছে, যদিও আমি এই পরিবর্তনে বিশ্বাস করি৷ যেমন এ দেশে আজও শ্রমিক-কৃষকদের আইনগত সুরক্ষা নেই৷ সংবাদপত্র ও রাজনৈতিক দলগুলির স্বাধীনতাও পর্যাপ্ত নয়৷ এছাড়া সংখ্যালঘু উপজাতিগুলির জন্য একটি ফেডারাল প্রণালীর প্রয়োজন৷''

১৯৮৮ সালে সামরিক সরকার গণ-অভ্যুত্থানছবি: Roselle Assirelli/AFP/Getty Images

আস্থা-অনাস্থা, আশা-আকাঙ্খা

অতীতের এই বিপ্লবীরা কি বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন-এর উপর আস্থা রাখেন? থেইন সেইন ব্যক্তি হিসেবে আন্তরিক হলেও, বস্তুত তাঁর হাত-পা বাঁধা, বলে কিয় মিন-এর বিশ্বাস৷ থেইন সেইন আসলে সামরিক নেতৃত্বের হাতের পুতুল৷ তুন উইনের মতও তাই৷ নেইন নেইন নোয়ে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সমালোচনা করেন৷ ১৯৮৮ সালে সামরিক সরকার গণ-অভ্যুত্থান দমন করতে পেরেছে – আর তারা আজ রোগিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করে অক্ষম? এই প্রশ্নই তোলেন নেইন নেইন৷ বরং সরকার সহিংসতায় উস্কানি দিয়ে মিয়ানমারের উন্মোচনের পথ বন্ধ করার চেষ্টা করছে বলে তাঁর ধারণা৷

তুন উইন চান একটি ফেডারাল শাসনপ্রণালী৷ ‘‘২০০৮ সালের সংবিধানে আর কাজ চলবে না৷'' ফেডারাল কাঠামো ছাড়া সংখ্যালঘুদের সঙ্গে একমত হওয়া কিংবা গৃহযুদ্ধের অন্ত ঘটানো সম্ভব হবে না৷ মিয়ানমারের গণতন্ত্র আন্দোলনের এই চার প্রবীণ সেনানীর চারজনেরই পশ্চিমের মনোভাব সম্পর্কে দ্বিধা আছে: পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে নিয়েছে, কেননা ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্তাবলী অন্তত খাতাপত্রে পূরণ করা হয়েছে, মিয়ানমারের বাস্তব যাই হোক না কেন'', বললেন তুন উইন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ