যুগ পাল্টাচ্ছে আর তার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের জীবনধারা, মূল্যবোধ৷ আগে যেখানে বলা হতো, মানাও হতো, ‘লজ্জাই নারীর ভূষণ', সেখানে আজ খোলাখুলি আলোচনা হচ্ছে যৌনতা, এমনকি নারীর যৌনসুখ নিয়েও৷
বিজ্ঞাপন
‘ফ্রি সেক্স', ‘ওপেন সেক্স', ‘লিভ টুগেদার', ‘ফ্রিডম অফ দ্য ইউটার্স' – এ সব আলোচনা আজ শুধু সিনেমা-থিয়েটার বা নারীবাদী সাহিত্যে নয়, চলে এসেছে আড্ডায়, সাংবাদিকতাতেও৷ যৌনতা নিয়ে কথা বলা আজ আর ‘ট্যাবু' নয়৷ সমাজ পরিবর্তনের স্বার্থে, নারীকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে এই আলোচনার গুরুত্ব আছে বৈকি৷
আজ যেখানে খবরের কাগজ খুললেই ধর্ষণ, নিপীড়নের খবর দেখা যায়, সেখানে নারীর যৌনসুখ বা যৌনমিলনে নারীর সম্মতি (তা সেই নারী বিবাহিত বা অবিবাহিত – যা-ই হোন না কেন) নিয়ে খোলাখুলি কথা বলাটা যে আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে৷ দরকার হয়ে পড়েছে ধর্ষণের সংজ্ঞাকে নতুন করে ব্যাখ্যা করার, দাম্পত্য ধর্ষণকে আরো পরিষ্কার করে তুলে ধরার৷
কিন্তু প্রশ্ন হলো এ সব কথা রুচিশীলভাবে কীভাবে বলা যায়? কীভাবে একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে বোঝানো যায় যে, নারীর অনুমতি নেয়াটা আবশ্যক৷ কীভাবে বোঝানো যায় যে নারীও ‘না' বলতে পারে? তারও সেই অধিকার আছে?
এই ভিডিওতে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে এককাপ চায়ের মাধ্যমে৷ অবাক হচ্ছেন? অনেক ক্ষেত্রে কেউ চা খেতে চায় কিনা জানতে চেয়েই কিন্তু আমরা চা পরিবেশন করি৷ চায়ের ক্ষেত্রে যেমন মানুষ মতামতের গুরুত্ব দিতে জানে, ‘সেক্স' বা যৌনমিলনের ক্ষেত্রে সেরকমই মতামতের গুরুত্ব দেয়া উচিত৷ নারীর উত্তর ‘না' হলেও তা মেনে নেয়াই সভ্য মানুষের লক্ষণ৷ চা-প্রিয় ব্রিটেনের পুরুষরা কিন্তু এভাবেই বুঝেছেন পুরো বিষয়টি৷ চা-প্রিয় বাঙালি বুঝবেন না, সেটা হয় নাকি? তাই ভিডিওটা দেখুন, জানান কেমন লাগলো৷
ডিজি/এসিবি
যৌনতা: অনন্তকাল ধরে বিতর্কিত
‘সেক্স’ কথাটা উঠলেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায়৷ সেক্স নিয়ে যেমন বহু কেলেঙ্কারি, সেভাবেই যৌনতা নারীমুক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বন শহরের একটি প্রদর্শনীতে জার্মান সমাজে যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন ঝড়ঝাপটার একটা খতিয়ান দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নিষিদ্ধ’ বিষয়
গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যৌনতা সংক্রান্ত মনোবৃত্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে৷ জার্মানিতে ‘ব্রাভো’-র মতো টিনেজার ম্যাগাজিনগুলিতে খোলাখুলি সেক্স সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷ এর আগে ফিল্মেও যা ‘নিষিদ্ধ’ বিষয় ছিল, তাই নিয়েই তৈরি হয় ১৯৬৮ সালের হিট ছবি ‘সুয়র জাখে, শ্যাটসেন’ বা ‘পথে এসো, প্রেয়সী’৷ এখানে ছবির নায়ক-নায়িকা ভ্যার্নার এঙ্কে ও উশি গ্লাস; মাঝের মহিলাটি হলেন পরিচালিকা মাই স্পিল্স৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মা যা ছিলেন
পঞ্চাশের দশকেও দুনিয়াটা ‘ঠিকঠাক’ ছিল – অন্তত নবীন পশ্চিম জার্মানির নীতি-নৈতিকতা যাদের দায়িত্বে, তাদের চোখে৷ নারীর স্থান ছিল গৃহে, সংসারে, পতিব্রতা স্ত্রী, স্নেহময়ী জননী, নিপুণা গৃহকর্ত্রী হিসেবে৷ কাজে যেতেন শুধু পুরুষরা৷ জনসমক্ষে সেক্স নিয়ে কথা বলা কিংবা রাস্তায় চুমু খাওয়া চলত না৷ ব্যক্তিগত জীবন ও নৈতিকতা ছিল গির্জা বা সরকারের তাঁবে৷
ছবি: DW/H. Mund
আদম ও হবার কাহিনি
১৯৫১ সালের জার্মান ছবি ‘দি জ্যুন্ডারিন’ বা ‘পাপিনী’ জার্মান ফিল্ম জগতে কেলেংকারির অবতারণা ঘটায়৷ রক্ষণশীল চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার-এর আমলে এ ধরনের ‘নোংরামি’ সেন্সর করা উচিত, এই ছিল অধিকাংশ মানুষের অভিমত৷ ‘পাপিনী’ ছবির যৌনোদ্দীপনামূলক দৃশ্যগুলো ছিল অতি সংক্ষিপ্ত, তা সত্ত্বেও ছবিটিকে কেন্দ্র করে নৈতিকতা ও প্রকাশ্য যৌনতা নিয়ে বিপুল তর্ক শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: ullstein - Thomas & Thomas
নারীমুক্তি
শেরিং কোম্পানি যখন ১৯৬১ সালে প্রথম গর্ভনিরোধক ‘পিল’ বাজারে ছাড়তে শুরু করে, তখন জার্মানির গির্জায় গির্জায় ‘যুবসমাজের নৈতিক অধোপতন’ সম্পর্কে ভাষণ শোনা গেছে৷ পিল নেওয়ার ফলে মহিলাদের যৌন আসক্তির খবর বেরোয় পত্রপত্রিকায়৷ সব সত্ত্বেও, গর্ভনিরোধের নতুন উপায়গুলি মহিলাদের স্বনির্ধারণে সাহায্য করে৷
ছবি: DW/H. Mund
ছাত্র বিপ্লব, যৌন বিপ্লব
ষাটের দশকের শেষে জার্মানিতে যে ছাত্র বিপ্লব দেখা দেয়, তার সঙ্গে তথাকথিত ‘কাউন্টার কালচার’ বা বিকল্প সংস্কৃতিরও যোগ ছিল৷ সেই বিকল্প সংস্কৃতি – হিপি আমলের রূপরেখা অনুযায়ী – খোলা এবং স্বাধীন যৌনতায় বিশ্বাস করত, যার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় ‘কমিউন ওয়ান’-এর মতো কুখ্যাত কলোনিতে স্ত্রী-পুরুষের একসঙ্গে বাস ও সহবাসে৷ যে কারণে রাইন্যার লাংহান্স এবং উশি ওবারমায়ার-এর মতো চরিত্র আজও অবিস্মৃত৷
ছবি: picture-alliance/KPA TG
যৌনশিক্ষা
৬৮-র ছাত্র বিপ্লব পশ্চিমে পরিবারজীবনের সংজ্ঞাই বদলে দেয়৷ তরুণ বাবা-মায়েরা নিজেদের ‘বাবা’ কি ‘মা’ বলে অভিহিত না করে, নাম ধরেই ডাকতে শুরু করেন৷ ১৯৬৯ সালে স্কুলের জীববিজ্ঞান ক্লাশে একটি যৌনশিক্ষার ‘মানচিত্র’ চালু করা হয়৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অর্থানুকুল্যে সৃষ্ট ‘হেলগা’ নামধারী একটি যৌনশিক্ষার ফিল্ম দেখতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হতো৷
ছবি: DW/H. Mund
মেইল-অর্ডার যৌনতা
‘বেয়াটে উজে’ বললেই জার্মানির শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ আজও বোঝেন: মেইল-অর্ডার সেক্স-শপ৷ যদিও সে-ধরনের দোকানে বাস্তবিক ঢোকার মতো সাহস আজও সকলের নেই – লোকলজ্জা বলে একটা কথা আছে তো৷ বেয়াটে উজে-র বাণিজ্যিক সাফল্যের সূচনা ১৯৪৮ সালে, যখন তিনি মহিলাদের গর্ভনিরোধের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করার জন্য একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেন৷ তার পরে আসে তাঁর মেইল-অর্ডার সেক্স-শপ৷
ছবি: imago
পশ্চিমের আগে পুব
সাবেক পূর্ব জার্মানির মানুষরা তাদের পশ্চিমের সতীর্থদের চেয়ে অনেক বেশি যৌন স্বাধীনতা ভোগ করেছেন৷ গোটা পূর্ব জার্মানি জুড়ে ছিল নিউডিস্ট ক্লাব৷ যৌনতার বিচারে পুবের মেয়েরা পশ্চিমের মেয়েদের চেয়ে বেশি ‘স্বাধীন’ ছিলেন, বাচ্চাদের সরকারি ডে-কেয়ারে জমা করে প্যান্ট-শার্ট পরে কাজে যেতেন৷ স্বাধীনতার অপরপীঠে ছিল রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা৷ যেমন এই সাইনটিতে পূর্ব জার্মানির মায়েদের ‘ধন্যবাদ’ জানানো হচ্ছে৷
ছবি: DW/H. Mund
‘বিকারগ্রস্ত সমাজ’
যে সব চিত্রপরিচালক সর্বপ্রথম সমকামিতা নিয়ে ছবি তৈরি করেন, রোজা ফন প্রাউনহাইম ছিলেন তাঁদের অন্যতম৷ ১৯৭১ সালে তিনি একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন, যার বক্তব্য ছিল: সমকামী নিজে বিকারগ্রস্ত নয়, বিকারগ্রস্ত হল তার সমাজ৷ এভাবেই তিনি জার্মানির ‘গে’ এবং ‘লেসবিয়ান’ সম্প্রদায়ের জন্য সম্মান ও সমানাধিকার আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগ-যুগান্তের সংস্কার
জার্মানিতে সমকামিতা ছিল একটি বিতর্কিত বিষয়, রাজনীতিকরাও যা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেতেন৷ আইনের যে সূত্র – ১৭৫ নং অনুচ্ছেদ – দু’টি পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করেছিল, সেই অনুচ্ছেদটি ১৯৬৯ সালে কিছুটা নরম করার পর, ১৯৯৪ সালে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়৷ কিন্তু – বিশেষ করে খেলাধুলার জগতে – সমকামীদের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব আজও পুরোপুরি উধাও হয়নি৷
ছবি: DW/H. Mund
নারী না পুরুষ?
ট্র্যান্সভেস্টাইট আর্টিস্ট, ২০১৪ সালের ইউরোভিশন সং কনটেস্ট বিজয়ী কনচিটা ভুয়র্স্ট ওরফে টম নয়ভির্থ আজ একজন সেলিব্রিটি৷ দাড়ি-সম্বলিত, ইভনিং গাউন পরিহিতা কনচিটা ২০১৫ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় উপস্থাপিকা ছিলেন৷ তা-তে কারো কোনো আপত্তি দেখা যায়নি – আপাতদৃষ্টিতে৷...
ছবি: DW/H. Mund
ইতিহাস
জার্মানির ‘ড্র্যাগ কুইন’ তথা টিভি হোস্ট লিলো ভান্ডার্স এই প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন৷ ‘নির্লজ্জ? পরিবর্তনের মুখে যৌন নৈতিকতা’ প্রদর্শনীটি চলবে ২০১৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি অবধি, বন শহরের ‘হাউড ডেয়ার গেশিস্টে’ বা ইতিহাস ভবনে৷