1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কমে যাচ্ছে চায়ের রপ্তানি

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৯ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশে চায়ের ইতিহাস অনেক পুরনো৷ পাটের পর চা রপ্তানি করে একসময় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত বাংলাদেশ৷ দেশটি এখনও চা রপ্তানি করলেও, রপ্তানির চারগুণ চা তাদের আমদানি করতে হয় শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানোর জন্য৷

বাংলাদেশের একটি চা বাগান
ছবি: DW/K. Thaunaujam

বাংলাদেশে চা উৎপাদনকারী মালিকদের সংগঠন চা সংসদ-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৪০ লাখ কেজি চা পান করেছে এ দেশের মানুষ, যা ২০০৯ সালের তুলনায় এক কোটি কেজি বেশি৷

আসলে গত প্রায় ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানি কমে চলেছে৷ ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ২৩ বছরে ধারাবাহিকভাবে চা রপ্তানি থেকে আয়ও কমেছে৷ চা রপ্তানি করে ১৯৯০ সালে যেখানে আয় হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, তখন ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকায়৷

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছিল৷ অথচ ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার কেজিতে৷ যদিও ২০১৪ সালে তা বেড়ে মোট চা রপ্তানি প্রায় ১৬ লাখ ৬০ হাজার কেজিতে উন্নীত হয়৷

আরদাসির কবির

This browser does not support the audio element.

রপ্তানি কমলেও চা উৎপাদন অবশ্য বাড়ছে বাংলাদেশে৷ ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে মোট ১ কোটি ৮৩ লাখ ৬ হাজার কেজি চা উৎপাদন করা হয়৷ ২০১৫ সালের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার কেজি৷

শুধু তাই নয়, চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগও বাড়ছে বাংলাদেশে৷ ১৯৯০ সালে অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার কেজি৷ সেখানে ২০১৫ সালে এই অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার কেজি৷

২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে চা আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৩ হাজার কেজির মতো৷

চা চাষের শুরু, অবস্থার অবনতি

সিলেটের মালনিছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে ১৮৫৪ সালে বাংলাদেশে চা চাষ শুরু হয়৷ তবে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে৷ বর্তমানে হেক্টর প্রতি গড়ে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২৪৭ কেজি চা৷

চা সংসদের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে এ, বি এবং সিএই – এই তিন শ্রেণির ১৬৩টি চা-বাগান রয়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯০টি চা-বাগান রয়েছে মৌলবীবাজার জেলায়৷ এছাড়া হবিগঞ্জ ও সিলেটে ২০টি করে, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে ৯টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাঙামাটিতে একটি করে চা-বাগান রয়েছে৷

চা বোর্ড জানায়, নব্বইয়ের দশকে চা রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম৷ দেশীয় চায়ের গুণগত মান ভালো থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে চায়ের চাহিদা ছিল বেশি৷ তাই তখন এ দেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকাতে ওপরের দিকেই ছিল চা৷ সে কারণেই নব্বইয়ের দশকে চা রপ্তানিকারক হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম৷ আর এখন কোনো অবস্থানই নেই বাংলাদেশ৷

চা বাগানগুলোতে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাংলাদেশে আজ প্রায় ৯০ হাজার৷ অস্থায়ীভাবে কাজ করছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক৷ বাংলাদেশ সরকারের সাথে ২০০৯ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, বাগানের শ্রেণিভেদে শ্রমিকরা যথাক্রমে দৈনিক ৪৮.৪৬ টাকা এবং ৪৫ টাকা হারে মজুরি পেতেন৷ এছাড়া স্থায়ী শ্রমিকদের রেশন হিসেবে প্রতিদিন আধা-কেজি চাল অথবা আটা দেয়া হয়৷ তবে সেই মজুরি বেড়ে এখন ৮০ ও ৭৫ টাকা হয়েছে বলে জানান চা বাগান মালিকরা৷

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র , ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, রাশিয়া, চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, জাপান, মিশর, সুদান, জর্ডান, গ্রিস, সাইপ্রাস, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে চা রপ্তানি করা হয়৷ এই দেশের চা পৃথিবীব্যাপী ‘সিলেট টি' নামে খ্যাত৷

বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান আরদাসির কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা বাড়াই চা রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ৷ মুশকিল হলো, প্রতিবছর শতকরা দু'ভাগ হারে চা উৎপাদন বাড়ছে আর চাহিদা বাড়ছে তিনভাগ হারে৷'' তিনি বলেন, ‘‘চা এমন একটি পণ্য, যার উৎপাদন রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়৷ গত দু'বছর চায়ের উৎপাদন যে ব্যাপকভাবে বেড়েছে, তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ১০ বছর আগে৷ একটি চারা চা গাছ থেকে চা পেতে সময় লাগে ১০ বছর৷''

ছবি: DW/Prabhakar

তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশে চা আমদানি বাড়ার পিছনে সরকারের কিছু নীতিমালা দায়ী৷ অন্যান্য চা উৎপাদনকারী দেশ আমদানি নিরুৎসাহিত করলেও বাংলাদেশ হেঁটেছে উল্টো পথে৷ এখন ৯২ শতাংশ শুল্ক হারে এ দেশে চা আমদানি করা যায়৷ অথচ ভারতে এ হার ১১০ এবং শ্রীলঙ্কায় ১৩০ শতাংশ৷ এছাড়া নিম্নমানের চায়ে সয়লাব হচ্ছে দেশ৷''

তিনি বলেন, ‘‘গত দু'বছর চা ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করতে পারেননি৷ অভ্যন্তরীণ বাজারে বাংলাদেশের চা এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে৷ তারপরও বাজারে নিম্নমানের চা আসায় দেশের চা শিল্প ক্ষতিপ্রস্ত হচ্ছে৷ তার ওপর সরকার চা শিল্পের জন্য কোনো প্রনোদনা দিচ্ছে না৷ বরং ভূমিকরসহ নানা ধরনের কর নিচ্ছে তারা৷''

বাংলাদেশ এখন অরগ্যানিক চা উৎপাদন করা শুরু করেছে৷ এর উৎপাদক ‘কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট'৷ ময়াগুড়ি টি এস্টেট ও টিটিসিএল চা বাগানও অরগ্যানিক চা উৎপাদন করছে৷

চা সংসদ জানায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশে বর্তমানে চা উৎপাদিত হচ্ছে এবং বিশ্ববাসী দিনে ৩০০ কোটি কাপ চা পান করছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ