1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

সমীর কুমার দে, ঢাকা১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খুলনার উপকূলীয় এলাকা আজ আর সবুজ নেই৷ সেখানে নেই কোনো গাছপালা, নদ-নদীতে নেই সুস্বাদু মাছ৷ নোনা পানির কারণে এলাকার মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত৷ খাদ্য অনিশ্চয়তাও বাড়ছে দিন দিন৷ আর এ সবের মূলে রয়েছে চিংড়ি চাষ৷

Shrimp
ছবি: AP

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে খুলনায় সাংবাদিকতা করছেন গৌরাঙ্গ নন্দী৷ আশির দশকে তিনি যখন সাংবাদিকতা শুরু করেন, তখনই তার নজরে আসে সাধারণ কৃষকদের জমি দখল করে কিভাবে চিংড়ি ঘের বানানো হচ্ছে৷ তখন থেকেই তিনি নোনতা পানির প্রভাব নিয়ে কাজ শুরু করেন৷ চিংড়ি চাষ নিয়ে তার একটি বইও রয়েছে, নাম – ‘চিংড়ি ও জন অর্থনীতি, কার লাভ-কার ক্ষতি'৷ এ নিয়ে অসংখ্য রিপোর্টও করেছেন তিনি৷

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এই প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, ‘‘এখানে এখন আর সবুজ গাছপালা নেই৷ সুস্বাদু মাছও হারিয়ে গেছে৷ এই এলাকার মানুষ মূলত পুকুরের পানি পান করতো৷ কিন্তু নোনা পানির প্রভাবের কারণে পুকুরেও এখন আর মিঠা পানি পাওয়া যায় না৷ এমনকি ভূগর্ভাস্থ পানিও নোনা৷ এক সময় পুকুরগুলোর পাশাপাশি খালগুলো ছিল মিঠা পানির আধার৷ এখন সেগুলোও মরে গেছে৷ ফলে অনেক দূর থেকে, বহু কষ্ট করে নারীদের খাবার পানি বয়ে আনতে হচ্ছে৷ এভাবে অতিরিক্ত ভারবহনের ফলে নারীদের মধ্যে নানা রকমের কিডনি জাতীয় রোগ বাড়ছে৷''

গৌরাঙ্গ নন্দি

This browser does not support the audio element.

স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, নোনা পানির প্রভাবে গোটা দক্ষিণ উপকূল থেকে ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৬০ প্রজাতির মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি৷ এছাড়া চরম আকারে হ্রাস পেয়েছে কৃষি উৎপাদন৷ কৃষিজমি চাষের অনুপোযোগী হওয়ায় গত তিন দশকে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে বাইরে পাড়ি জমিয়েছে৷ দেশও ত্যাগ করেছেন অনেকে৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হুমকির মুখে পড়বে উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য৷ কৃষিবিদ বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, বছরের পর বছর বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি জমি লবণ পানিতে তলিয়ে রাখায় ঊর্বতা শক্তি হ্রাস পেয়েছে৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আর কোনো ফসল উৎপাদন হবে না৷

চিংড়ি ঘেরে কাজ করে নোনতা পানির প্রভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে ঐ এলাকার মানুষ৷ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মিথুন দেবনাথ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নোনা পানির প্রভাবের কারণে পাতলা পায়খানা ও বমি বেশি হয়৷ পাশাপাশি চর্মরোগ তো আছেই৷ পেটব্যথা থেকে শুরু করে অনেক রোগীই আসেন আমাদের কাছ৷ দীর্ঘক্ষণ নোনা পানির মধ্যে থাকার ফলে প্রজননতন্ত্রও সংক্রমিত হয়৷''

ড. মিথুন দেবনাথ

This browser does not support the audio element.

তবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চিংড়ি চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা অর্থনীতির স্বাভাবিক অগ্রগতিকে চলমান রাখতে সহায়তা করে৷ চিংড়ি রপ্তানি বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত, যা প্রতিবছর জাতীয় রিজার্ভে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রার যোগান দেয়৷ বহির্বিশ্বে চিংড়ি শিল্প বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে, তবে এর জন্য সাধারণ মানুষকে যে মূল্য দিতে হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন৷ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালে চিংড়ি চাষ নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার, যাতে পরিবেশের ক্ষতি এড়িয়ে চিংড়ি চাষের নির্দেশনা রয়েছে৷ তবে লাভজনক এই চাষ কোথাও নিষিদ্ধ করা হয়নি৷

গত ১লা ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং খুলনা এলাকার সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘‘কোনো ফসলি জমিতে নোনা পানি আবদ্ধ করে চিংড়ি চাষ করতে দেয়া ঠিক হবে না৷ সেটা করতে হলে আগে এর পরিপূর্ণ ‘প্রটেকশন' নিয়ে গবেষণা করতে হবে৷ নদী তীরে নোনতা পানির উৎসের কাছে চিংড়ি চাষ করা যায় কিনা – সেটা এখন পর্যালোচনার ব্যাপার৷ পর্যালোচনা করে বর্তমান নীতিমালা বতিলযোগ্য হলে বাতিল, কিংবা সংশোধন যোগ্য হলে সংশোধন করা হবে৷''

তাহলে কি বাংলাদেশকে চিংড়ি চাষ একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে? জানান নীচের ঘরে৷

ভিয়েতনামে চিংড়ি চাষ

03:29

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ