অনেক ক্ষেত্রে মানুষ বর্ণ ও জাতিভেদের শিকার হয়৷ কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য ইচ্ছাকৃত না হলেও তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ বার্লিনের দুই বিশেষজ্ঞ বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
আজকের যুগেও চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ মানুষদের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়৷ ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে৷ এমারজেন্সির সময়ে দেখা যায়, কোনো রোগীর ঠোঁট নীল হয়ে গেছে৷ অথবা লাল ছোপ বা ফুসকুড়ি প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে৷ যেমন বার্লিনের শারিটে হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. এফসোনা শেনকোরু মনে করেন, কৃষ্ণাঙ্গ রোগীদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশি ত্রুটি দেখা গেছে৷
কিন্তু কালো ত্বকের মানুষের ক্ষেত্রে এমন লক্ষণ শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে৷ কারণ, সে ক্ষেত্রে ঠোঁটের রং ও ত্বকের অবস্থা বোঝা সহজ নয়৷ ড. শেনকোরু নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘আমি কোনো এমার্জেন্সি রুমে থাকলে শুধু শেখানো বিষয় বা লক্ষণের সন্ধান করতে পারি৷ ফলে পরিণতি হিসেবে আমি ভুল করতে পারি, কঠিন রোগের ক্ষেত্রেও হয়তো গুরুত্ব না বুঝতে পারি৷ এর অর্থ, আমি হয়তো চিকিৎসার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবো না৷''
ড. শেনকোরু সেই অবস্থা বদলাতে চান৷ তিনি চর্মরোগবিদ্যার ক্ষেত্রে ত্বকের রংয়ের বিশেষজ্ঞ৷ তাঁর মতে, ‘‘আমার সময়কার টেক্সট বইয়ের দিকে তাকালে উজ্জ্বল বর্ণের প্রতিনিধিত্ব চোখে পড়বে৷''
তিনি বার্লিনের শারিটে হাসপাতালে কাজ করেন৷ জালিদ সেহুলিও সেখানে কর্মরত৷ তিনি চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বহুকাল সোচ্চার রয়েছেন৷ জালিদ মনে করেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রিন্ট মিডিয়ার দিকে নজর দিলে লক্ষ্য করবেন যে, তারা খুব ঘনঘন বাঁধাধরা উপকরণ ব্যবহার করে৷ যে কোনো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যায়৷''
যেমন মাংকি পক্সের মতো রোগ প্রায়ই কালো ত্বকের উপর দেখানো হয়৷ এমনকি ২০২২ সালে সেই ভাইরাস গোটা বিশ্ব, বিশেষ করে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শ্বেতাঙ্গ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেও সেই মনোভাবে কোনো পরিবর্তন হয়নি৷
ডেনমার্কে এক ল্যাবে বানরের মধ্যে সেই ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ায় সেটির নাম মাংকি পক্স রাখা হয়েছিল৷ করোনা ভাইরাসের মতো সেটিও পশু থেকে অন্য পশু বা মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে৷ তবে বানর নয়, ইঁদুর জাতীয় প্রাণীই সেই সংক্রমণ ঘটায় বলে জানা গেছে৷ আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্যভাগে সেই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও সেটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷
ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শ্বেতাঙ্গ মানুষও আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ কিন্তু মিডিয়ায় মূলত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ছবি দেখা গেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাংকি পক্স নামকরণের মধ্যে বর্ণবাদী এবং কলঙ্কজনক প্রবণতার পরিচয় রয়েছে৷
বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ মানুষের মনে বানর, পক্স ও আফ্রিকাকে সমান চোখে দেখার বাঁধাধরা এক ধারণা কাজ করে৷ শ্বেতাঙ্গ মানুষের চোখে সেই রোগ ‘অন্যদের' আক্রান্ত করে বলে যে ধারণা চালু আছে, গবেষণার ক্ষেত্রে সেটাকে ‘আদারিং' বলা হয়৷ ডাব্লিউএইচও এখন সেই রোগকে ‘এম পক্স' হিসেবে বর্ণনা করার পরামর্শ দিচ্ছে৷ জালিদ সেহুলি বলেন, ‘‘ভিজিবিলিটির ক্ষমতা কম নয়, কারণ আমরা অনেক কিছু ছবি ও চাক্ষুস অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অবচেতনেই শিখি৷''
জালিদ হাসপাতালে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন৷ তিনি বলেন, রোগীরা জার্মান না বুঝলে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি ও বৈষম্য দেখা যায়৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দোভাষীও সব সময়ে পাওয়া যায় না৷ ফলে অতি কম তথ্যের ভিত্তিতে ভুল চিকিৎসা হয়৷ যেন কী ঘটছে, রোগীরা তা না বুঝলেও কিছুই এসে যায় না৷
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এফসোনা শেনকোরু ব্যক্তিগত উদ্যোগে সোশাল মিডিয়ায় ‘পিপল অফ কালার' বা ভিন্ন বর্ণের মানুষের জন্য তথ্য দেন৷ হাসপাতালেও তিনি এখন ‘স্কিন অফ কালার ডার্মাটোলজি' বিষয়ে পরামর্শ দেন৷
আনিয়া কিমিশ/এসবি
কম খরচে কসমেটিক সার্জারি, তুরস্কে বাড়ছে বিদেশিদের ভিড়
খরচ কম বলে চুল এবং নাকের সৌন্দর্য বাড়ানোর কসমেটিক সার্জারি করাতে তুরস্কে বাড়ছে আগ্রহীদের ভিড়৷ এমন চিকিৎসায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি কেমন?
ছবি: YAY Images/IMAGO
যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ-তরুণীরা
তুরস্ক থেকে নাকের সৌন্দর্য বর্ধনের সার্জারি করিয়েছেন ২৮ বছর বয়সি বেনিটা পালোজা৷ তার বান্ধবীদের অনেকেই তুরস্কে এমন সার্জারি করিয়েছেন৷ তা দেখেই উৎসাহিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তরুণী পালোজা৷ সার্জারির জন্য এক সপ্তাহ তুরস্কে অবস্থান করে দেশে ফিরেছেন তিনি৷ সার্জারি বাবদ তার খরচ হয়েছে ৫ হাজার ইউরো৷
ছবি: privat
তুরস্কে যেসব কসমেটিক সার্জারি
গত কয়েক বছর ধরে তুরস্কে কসমেটিক সার্জারির জনপ্রিয়তা বাড়ছে৷ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে কসমেটিক সার্জারির ক্লিনিকের সংখ্যা বেড়েছে৷ ক্লিনিকগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য বর্ধনের চিকিৎসা, যেমন, চুল লাগানো, নাকের গড়নের সৌন্দর্ব বর্ধন, লম্বা হওয়ার সার্জারি, ভুরির সার্জারি, স্তনের আকার পরিবর্তনের সার্জারি, কিংবা নিতম্বের গঠন পরিবর্তনের কসমেটিক সার্জারি করা হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/M. Baumann
খরচ কম
এসকল সার্জারিতে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় খরচ কম৷ যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের বেনিটা পালোজা যে চিকিৎসাটি করতে তুরস্কে ৫ হাজার ইউরো খরচ হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রে একই চিকিৎসার খরচ ২৭-২৮ হাজার ইউরোও হতে পারে৷
ছবি: Kim Hong-Ji/REUTERS
বাড়ছে আগ্রহীর সংখ্যা
করোনা মহামারির পর থেকে তুরস্কে কসমেটিক সার্জারিতে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে৷ তুরস্ক সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২০২১ সালে এমন সার্জারির উদ্দেশ্যে দেশটিতে ছয় লাখ ৭০ হাজার বিদেশি পাড়ি জমায়৷ এর এক বছর পর এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার৷ আর ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ্বেও এই সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
বাড়ছে সরকারের আয়
মেডিক্যাল খাতের এই ব্যবসায় বাড়ছে তুরস্ক সরকারের আয়৷ ২০২২ সালে এই খাত থেকে দেশটির আয় ছিল দুই বিলিয়ন ডলার৷ তবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ্বে আয় কিছুটা কমে এসেছিল৷ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে সেই সময় আয় কমে থাকতে পারে৷
২০২২ সালে তুরস্কে এমন চিকিৎসা নিতে যাওয়া লোকেদের বেশিরভাগই ছিলেন জার্মান৷ এরপরে ছিলেন ব্রিটিশ এবং সুইসরা৷
ছবি: Hakan Akgun/Anadolu/picture alliance
ঝুঁকি কম নয়
তুরস্কের ক্লিনিকগুলোতে এ ধরনের চিকিৎসা নেওয়ার পর রোগীদের শরীরে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে- এমন খবরও ছড়িয়ে পড়ছে৷ এক বছর আগে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট জানায়, ভুড়ির চিকিৎসা গ্রহণের পর ২৭জন বিষাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল৷ তাছাড়া কোনো কোনো রোগীর শরীরে পেশির দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তি কমে আসা, শ্বাসকষ্টের সমস্য এমনকি প্যারালাইসিস হওয়ার মতো ঘটনার কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
হ্যার্ট অ্যাটাক
জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ মিডিয়ার খবরে বলা হয়, ইস্তাম্বুলে কসমেটিক সার্জারির করানোর চার দিনের মাথায় হার্ট অ্যাটাক হয় এক ব্রিটিশ নারীর৷ব্রিটিশ মিডিয়া বলছে, ফ্যাট এমবোলিজম থেকেই তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল৷ শরীরের চর্বি দিয়ে নিতম্বের আকার বৃদ্ধি করিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Fotolia/beerkoff
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
তুরস্কের ক্লিনিকগুলো কসমেটিক সার্জারিতে যথেষ্ট দক্ষ কিনা জানতে চাইলে জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার কনজিউমার অ্যাডভাইস সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ড. সুজানে পুনসমান বলেন, অন্য অনেক জায়গার মতো তুরস্কেও ভালো এবং খারাপ মানের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে৷ তুরস্কে এমন চিকিৎসা করানোয় আগ্রহীদের ক্লিনিক এবং ডাক্তারদের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷