1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিকিৎসা ব্যবস্থাই সংকটে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৩ জুলাই ২০২০

শুরুর দিকে দরকার হলেও কোভিড পরীক্ষা করানো যাচ্ছিল না৷ এখন সরকারি, বেসরকারি, দু'জায়গাতেই পরীক্ষা সম্ভব, কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর না হলে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না৷

চন্দননগরে পরিযায়ী শ্রমিকদের শিবিরের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক প্রশাসনিক কর্ত্রী৷ মাত্র ৩৮ বছর বয়সি সেই মহিলা অফিসারের কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু নতুন করে শোক ছড়িয়েছে রাজ্যের বেসামাল কোভিড পরিস্থিতিতে৷ সংবাদ মাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়া এখনও বিচলিত ইছাপুরের ১৮ বছরের তরুণ শুভ্রজিৎ চ্যাটার্জির কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুতে৷ তিনটি সরকারি হাসপাতালে ঘুরে জায়গা না পেয়ে অবশেষে কলকাতার মেডিকেল কলেজে তাঁকে নিয়ে আসেন বাবা–মা৷ সেখানেও দীর্ঘক্ষণ ভর্তি না করে ফেলে রাখা হয় তাঁকে৷ শেষে শুভ্রজিতের মা আত্মঘাতী হওয়ার হুমকি দিলে তড়িঘড়ি ভর্তি করা হয়, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে৷ পরে যদিও জানা গেছে শুভ্রজিতের ব্লাড সুগারের মাত্রা বিপজ্জনক রকমের বেশি ছিল৷ অর্থাৎ চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে ‘কো–মর্বিডিটি’ বলে৷ কিন্তু তার পরেও এই অকালমৃত্যু অনেকেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না৷

আমাকে বিরক্ত করতে আসবে না!: ব্রীজেশ দে

This browser does not support the audio element.

কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হালচালে ভরসার থেকে ভয়ই বেশি হচ্ছে৷ দু'মাস আগে বাড়ির সর্বক্ষণের পরিচারিকা মহিলা হঠাৎই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় গভীর সংকটে পড়েন কলকাতার বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা ব্রীজেশ দে৷ একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও প্রাথমিক কোভিড পরীক্ষাটিই করাতে পারছিলেন না তিনি৷ কারণ তখন নিয়ম ছিল, একমাত্র ভর্তি হলে তবেই পরীক্ষা হবে৷ কিন্তু নিজের বৃদ্ধা মা–কে হাসপাতালে ভর্তি করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে ভরসা পাননি তিনি৷ সম্প্রতি তাঁকে ফের কোভিড চিকিৎসার দ্বারস্থ হতে হয়েছিল এক পরিচিতের জন্য৷ এবারের অভিজ্ঞতা অন্যরকম৷ ব্রীজেশ দে জানাচ্ছেন, ‘‘দু'মাস আগে সরকারের মনোভাব ছিল, ভর্তি না হয়ে কোভিড পরীক্ষা করা যাবে না৷ কেন?না, যে কোভিড পজিটিভ হবে, তাকে আমরা ধরে রেখে দেব৷ বেরোতে দেব না৷ অতএব এটা ছড়াবে না, এভাবে কন্ট্রোল করে দেব৷ এটা দু'মাস আগে ছিল৷ এখন হচ্ছে, ‘গেট লস্ট’! বাড়িতে চিকিৎসা করো, হোম কোয়ারেন্টাইন করো, প্রাইভেটে পরীক্ষা করো, যা খুশি করো, কিন্তু আমাকে বিরক্ত করতে আসবে না৷ এখন মনোভাব এরকম৷ যতক্ষণ না একটা অক্সিজেন, বা ভেন্টিলেটর ধরনের কিছুর দরকার হচ্ছে, এসে জ্বালাবে না৷’’
স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এই মানসিকতার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে৷ যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর মধ্যে নিজেদের ওয়েবসাইটে একটা আলাদা ডেটাবেস তৈরি করেছে, যেখানে জানা যাচ্ছে, সরকারি, বা বেসরকারি, কোন হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্যে কতগুলো শয্যা ফাঁকা আছে৷ কিন্তু তার পরও হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে, চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার মতো ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না৷

সব জায়গা থেকেই বলে দিয়েছিল বেড নেই: কৃষ্ণেন্দু দে

This browser does not support the audio element.

উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু দে–র কাকিমার কোভিড ধরা পড়েছিল৷ তার পর ওঁদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক৷ কৃষ্ণেন্দুবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘আমরা কিছু প্রাইভেট হসপিটালে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু সব জায়গা থেকেই বলে দিয়েছিল বেড নেই, বেড নেই৷ তার পর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরে, ওখানে কথাবার্তা বলার পর, ওরাও প্রথমে না করেছিল৷ রিপোর্ট দেখার পর বলেছিল, কেন নিয়ে এসেছেন!তার পর আল্টিমেটলি ভর্তি নেয়৷ ওখানে তো আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি, ওরাই নিয়ে চলে যায়৷ তা মাঝেমাঝে আমরা ফোন করে খবর নিতাম৷ এমনি কোনও খবর দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না৷ যোগাযোগ করে খবর নেওয়া হতো কেমন আছেন না আছেন৷ ১০ দিনের মাথায় হঠাৎ একদিন ফোন করে জানাল, যে আপনাদের (রোগীকে) আমরা নিয়ে এসেছি, আপনারা নিয়ে যান৷ আমার ভাইয়ের কাছে ফোন করেছিল, যে আপনার মাকে নিয়ে এসেছি, আপনারা নিয়ে যান৷’’
শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যে কোভিড সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে এভাবে রাস্তাতেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যান মেডিকেল কলেজের স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ এবং তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার যে সার্টিফিকেট, তাতেও কোথাও লেখা ছিল না যে উনি এখন কোভিড নেগেটিভ!
অবশ্য এরকম অবিশ্বাস্য ঘটনাই একের পর এক ঘটে চলেছে কলকাতা, তথা সারা পশ্চিমবঙ্গে৷ যেখানে সরকারের দায় এড়ানোর প্রবণতার পাশাপাশি সুস্থ মানুষেরও সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে৷ একটি মেয়ের কথা ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে সোশাল মিডিয়ায়, একটা ছোট অপারেশনের আগে কোভিড পরীক্ষা করানোর জন্য যাকে ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে৷ বাকি সম্ভাব্য কোভিড রোগীদের সঙ্গে থাকতে হয়েছিল একই ওয়ার্ডে, ব্যবহার করতে হয়েছিল একই শৌচালয়৷ এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কোভিড অতিমারী রোখার ক্ষেত্রে এখনও কতটা অপ্রস্তুত সরকার এবং তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ