1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিকুনগুনিয়া কি মহামারির আকার ধারণ করেছে?

Sanjiv Burman১০ জুলাই ২০১৭

ভাইরাস জ্বর চিকুনগুনিয়াই এখন বাংলাদেশে প্রধান ইস্যু৷ এই জ্বর কি মহামারির আকার ধারণ করেছে? বিষেশজ্ঞরা শুধু বলেছেন, ‘‘যেখানে এই রোগ হয় সেখানে লাখো আক্রান্ত হন৷ ঢাকা শহরেও হাজার হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন৷''

Denguefieber Moskito
ছবি: picture-alliance/dpa

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ফাতেমা আবেদীন নাজলা৷ থাকেন ঢাকার পান্থপথ এলকায়৷ গত ডিম্বেরে তিনি চিকুনগুানিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন৷ কিন্তু বাংলাদেশে তখন এই ভাইরাস জ্বর সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না৷ ফলে কমপক্ষে ১৭ ধরনের পরীক্ষা করার পরও রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছিল না তাঁর৷ এমনকি চিকিৎসকরা তাঁকে হাই অ্যান্টিবায়োটিকও দিয়েছিলেন৷ নাজলা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমার প্রথম ১০ দিন প্রচণ্ড জ্বর ছিল৷ অথচ চিকিৎসকরা রোগই ধরতে পারছিলেন না৷ শেষ পর্যন্ত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর পরীক্ষায় আমার চিকুনগুনিয়া নিশ্চিত হয়৷

নাজলা বর্তমানে সুস্থ, তবে তাঁর শরীরে এখনো ব্যথা আছে৷ এরইমধ্যে গত সপ্তাহে তাঁর স্বামীও চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন৷ নাজলা বলেন, ‘‘আমার পরিচিত এমন কোনো পরিবার নাই যে পরিবারে চিকুনগুনিয়ায় কেউ আক্রান্ত হননি৷ আমার মনে হয়, এখন ঢাকার ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়া৷''

ফাতেমা আবেদীন নাজিয়া

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায়, এ পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ায় কতজন আক্রান্ত হয়েছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ তাছাড়া সেই হিসাব রাখার কোনো কেন্দ্রীয় পদ্ধতিও বাংলাদেশে গড়ে উঠেনি৷

তবে আইইডিসিআর এ পর্যন্ত জ্বরের ৮০০টি স্যাম্পল পরীক্ষা করে দেখেছে এবং তার মধ্যে ৬০৫ জনের চিকুনগুনিয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করা গেছে৷ এছাড়া মোবাইল ফোনে সাধারণভাবে ৪,৭৭৫ জনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মধ্যে ৩৫৭ জন চিকুনগুনিয়ার রোগী বলে প্রমাণ পেয়েছে তারা৷

অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যত রোগী আসেন, তাঁদের ১১ জনের মধ্যে একজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত৷ শুধু তাই নয়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যাঁরা ঢাকা মেডিক্যাল-এ আসেন, তাঁদের প্রতি তিনজনের একজন চিকুনগুনিয়ার রোগী৷

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর জানান, ‘‘বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালে, রাজশাহীতে৷ এরপর ২০৯ থেকে ১২ সাল পর্যন্ত ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি এলাকায় পর্যায়ক্রমে চিকুগুনিয়ার রোগী পাওয়া যায়৷ ঢাকার কলাবাগান এলাকায় গত বছরের আগস্ট মাসে চিকুনগুানিয়ার রোগী পাওয়া যায়৷ ডিসেম্বর থেকে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে৷''

এএসএম আলমগীর

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘মশাই এই রোগের ভাইরাস ছড়ায়৷ সুতরাং ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং শহরে মশার উপদ্রপ কমানোই এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়৷''

এটা ঢাকায় মহামারির আকার ধারণ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধারণত বলি যেখানে চিকুনগুনিয়া হয় সেখানে লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়৷ ঢাকার ক্ষেত্রে আমরা বলছি হাজার হাজার৷ এ রোগের প্রাদুর্ভাব তো স্পষ্ট৷ তবে এই রোগে মৃত্যুর রেকর্ড নেই এ দেশে এখনও৷ আমাদের কাছে ৬-৭টি মুত্যুর ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল৷ সেগুলো আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে, সেই মৃত ব্যক্তিদের কেউ-ই চিকুনগুনিয়ায় মারা যাননি৷''

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডীন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস জ্বর৷ তাই এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নাই৷ শরীরে ব্যথা হয়, তাই সাধারণভাবে প্যারাসিটামল ও পথ্য হিসেবে তরল খেতে বলা হয়৷ অবশ্য এর উপসর্গ দেখে সে অনুযায়ী চিকিৎসা হতে পারেষ৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ তবে যদি কেউ আগে থেকেই ‘ক্রনিক' কোনো অসুখে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে৷''

এবিএম আব্দুল্লাহ

This browser does not support the audio element.

বলা বাহুল্য, চিকুনগুনিয়া নিয়ে ঢাকায় রীতিমত তোলপাড় চলছে৷ হাইকোর্ট এরইমধ্যে চিকুনগুানিয়ায় আক্রান্তদের কেন সরকার ক্ষতিপুরণ দেবে না – তা জানতে তিন সপ্তাহের রুল জারি করেছে৷ এছাড়া সিটি কর্পোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদে মসজিদে মোরাজাত ও সচেতনতামূলক বয়ানের ব্যবস্থা করেছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, তারা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন৷ কিন্তু মশা তো আর তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না৷ এ কাজটা সিটি কর্পোরেশনকেই করতে হবে৷''

এদিকে চিকুনগুনিয়ার টেস্ট নিয়েও আছে বিভ্রান্তি৷ কারণ একমাত্র আইইডিসিআর এবং বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোথাও এই ভাইরাস রোগের টেষ্ট করা হয় না৷ তাও আবার চিকিৎসকদের ‘রেফারেন্স' ছাড়া যে কেউ চাইলেই এ পরীক্ষা করাতে পারেন না৷ আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর জানান, ‘‘র‌্যাপডি টেস্ট নামে বাজারে প্রচলিত যে টেস্ট আছে, তা নির্ভরযোগ্য নয়৷''

প্রসঙ্গত, ১৯৫২-৫৩ সালে তাঞ্জানিয়ায় প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করা হয়৷ ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে ভারতে ভাইরাস বাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর এবার বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায়, চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ক ছাড়াচ্ছে৷ ঢাকার বাইরে অবশ্য এখনো এটা ছড়ায়নি৷ তবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলছেন, ‘‘ভোগন্তি ছাড়া আতঙ্কের কোনো কারণ নেই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ