1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিকেনস নেক কেন ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ?

১০ মে ২০২৫

নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা চিকেনস নেক। ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সংঘাতের আবহে এই অংশের নিরাপত্তা আরো আঁটোসাঁটো করা হয়েছে।

নেপাল সীমান্তের সাইনবোর্ড।
চিকেনস নেকের সঙ্গে একদিকে বাংলাদেশ ও অন্যদিকে নেপালের সীমান্ত রয়েছে। ছবি: Nishal Lama/NurPhoto/picture alliance

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশে এক চিলতে ভূখণ্ড চিকেনস নেক। সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব সময় ভারতের কাছে বাড়তি চিন্তা এই অংশটি। 

চিকেনস্ নেক

উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডরের মধ্যে পড়ে এই অংশটি। এটি ২২ থেকে ৩৫ কিলোমিটার চওড়া, ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের একমাত্র যোগসূত্র হওয়ায় এর গুরুত্ব। সরু বলেই একে মুরগির গলার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। নিরাপত্তার দিক থেকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে, পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি জায়গায় সিভিল ডিফেন্সের মক ড্রিল আয়োজনের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়, তার মধ্যে ১৭টি ছিল চিকেনস নেক-এ। 

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে খুবই গুরুত্ব পেয়েছে চিকেনস নেক। শিলিগুড়ি করিডরের একদিকে রয়েছে নেপাল, অন্যদিকে বাংলাদেশ। দুইটি দেশের সীমান্ত থাকায় এই সরু অংশটি ভারতের নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই অনুযায়ী রাজ্যকেও সতর্ক করা হয়েছে।

দুষ্কৃতীদের নজরে

স্থলভাগের বিচারে চিকেনস নেক অপ্রশস্ত হওয়ায় এটাকে ব্যবহার করতে পারে জঙ্গি এবং অপরাধী সংগঠনগুলি । তিন দেশের সীমান্ত কাছাকাছি একটি জায়গায় এসে মেশায় এই পথকে পাচারের কাজে ব্যবহারের নিরন্তর চেষ্টা চলে। অস্ত্র থেকে মাদক, সবই এই তালিকায় রয়েছে।

অনুপ্রবেশ থেকে জঙ্গি গতিবিধি, দুটি ক্ষেত্রেই আশঙ্কা থাকে চিকেনস নেক-কে ঘিরে। বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়লে তার প্রভাব চিকেনস নেকে পড়ে বলে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মনে করেন। 

চিকেনস নেক-এর অন্যদিকে থাকা নেপাল সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। এখানে আবার পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সক্রিয় বলে সরকার মনে করে। তাদের মাধ্যমে নেপালের দিক থেকে অনুপ্রবেশ ও নাশকতার আশঙ্কা থেকে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে আরো গুরুত্ব বেড়েছে চিকেনস নেকের।

লেখক ও সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "চীন আমাদের উত্তর-পূর্বে অশান্তি তৈরির জন্য বিভিন্ন সময় কাজ করেছে। চীন অরুণাচল প্রদেশকে আমাদের অংশ বলে স্বীকার করে না। তারা মনে করে, এটা তাদের লাদাখেরই সম্প্রসারিত অংশ। ফলে চীনের পক্ষে এই চিকেনস নেককে আক্রমণ করে ভারত থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটা রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করা একটা রাজনৈতিক বা স্ট্র্যাটেজিক কৌশল হতে পারে।"

ভারতের প্রস্তুতি 

সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ, সিআরপিএফ, আইটিবিপি, এসএসবি ও সিআইএসএফের মতো সব আধাসামরিক বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে রাজ্য সরকার।

চিকেনস নেক-এ নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা তৈরি রাখা হয়েছে। সারফেস টু এয়ার মিসাইল বা স্যাম রাশিয়ার তৈরি। এই ব্যবস্থায় মাটি থেকে আকাশে কোনো লক্ষ্যবস্তুকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে আঘাত করা যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে পাড়ি দিতে পারে এখান থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র। তার সাহায্যে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোনকে আকাশে ধ্বংস করে দেয়া যায়। 

অর্থাৎ ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি এলাকায় নিরাপত্তার জন্য আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার সাহায্যে অনেক দূর থেকে আসা আগ্রাসন রুখে দেওয়া সম্ভব স্যাম এর মাধ্যমে।

ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কোর উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের দায়িত্বে রয়েছে। বাহিনীর সদরদপ্তর সুকনায় সম্প্রতি একটি সমন্বয় বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের কথা ভেবে আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ভারতের লক্ষ্য। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা সে কারণেই তৈরি রাখা হয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী ডিডাব্লিউকে বলেন, "সমগ্র উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে শুরু করে উত্তর পূর্ব ভারতের ট্রানজিট পয়েন্ট একমাত্র চিকেনস নেক। সে জন্য ভারত স্ট্র্যাটেজিকালি পদক্ষেপ নিচ্ছে। সার্বিকভাবে এই অঞ্চলটাকে সুরক্ষিত করতে গেলে চিকেনস নেক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

আমাদের কাছে যে রুশ অস্ত্র বা নজরদারি ব্যবস্থাপনা আছে, সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে: সুমন ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেন, "চীন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে । পাকিস্তান একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র, যার অর্থনীতি ধসে গিয়েছে, যারা ভিক্ষাপাত্র নিয়ে ঘুরছে, তার জন্য চীন খুব বেশি সময় বা সম্পদ নষ্ট করবে না। কিন্তু থিওরিটিক্যালি সম্ভাবনা থাকে। কাজেই চীনের কাছ থেকে যদি কোনো আক্রমণ এই পথ ধরে আসে, তার জন্য ভারত সতর্ক হয়ে আছে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতির সময়ে এই ধরনের সতর্কতা নেয়া প্রয়োজনীয়। "

সুমন বলেন, "একটা ইঙ্গিতপূর্ণ জিনিস মনে করাই, আজ সকালে একটা ছবি দেখা গিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাশাপাশি বসে আছেন। এই চীনের যে কোনো ধরনের অভিযান ঠেকাতে আমাদের কাছে যে রুশ অস্ত্র বা নজরদারি ব্যবস্থাপনা আছে, সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।"

জেএমবি সন্দেহে ধৃত

পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের স্লিপার সেল যে সক্রিয়, তার প্রমাণ মিলেছিল বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে। চলতি পরিস্থিতিতে এরা তৎপরতা বাড়াতে পারে বলে অনুমান করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

এদের তৎপরতার নমুনা সামনে এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। নিষিদ্ধ জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুক্রবার। রাজ্য পুলিশের এসটিএফ বীরভূমের নলহাটি থেকে পাকড়াও করে আজমল হোসেনকে। তাকে জেরা করে সাহেব আলি খান নামে আর একজনকে এই জেলারই মুরারই থেকে ধরা হয়। 

সূত্রের খবর, এই দু'জন জেএমবি-র হয়ে রাজ্যে প্রচার চালাচ্ছিল। বছর দুয়েক ধরে আনসারুল্লাহ বাংলা-সহ একাধিক জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার কথা জানা গেলেও এখানে জেএমবি কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। এই দু'জনের গ্রেপ্তারিতে প্রশ্ন উঠেছে, ফের জেএমবি কি সক্রিয় হচ্ছে? 

গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্তা গদাধর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "জঙ্গিদের স্লিপার সেল পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় রয়েছে, এই গ্রেপ্তারি থেকে এটা প্রমাণিত হয়। এদের সঙ্গে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের যোগ রয়েছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ