1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিটফান্ডের প্রত্যাবর্তন রুখতে প্রয়াস তৃণমূল স্তরে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১০ জানুয়ারি ২০১৮

সারদা, রোজভ্যালি, এমপিএস, ভিবজিওর— এমন বহু ভুইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা কেড়ে নিয়েছিল মানু্ষের ঘুম, সঞ্চয়ের শান্তিটুকু৷ সেখান থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোগে কীভাবে চলছে চিটফান্ডের গ্রাস থেকে খেটে খাওয়া মানুষদের উদ্ধারের কাজ?

Indien Geldverleiher in Ahmedabad
ছবি: REUTERS/File Photo/A. Dave

চিটফান্ডের জালে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার নজির পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর রয়েছে৷ সারদাকাণ্ডের পর থেকেই বিভিন্ন ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টদের আত্মহত্যা শিরোনামে এসেছে৷ কিন্তু শিরোনামে আসেনি যাঁরা ‘দিন আনি দিন খাই', তাঁদের লড়াই, হাহাকারের ঘটনা৷ এঁরা কেউ রিকশা চালান, কেউ পরিচারিকার কাজ করেন, কেউবা হোটেলে রান্নার কাজ করেন৷ সারদা, রোজভ্যালির সবচেয়ে বড় টার্গেট ছিলেন এঁরাই৷ ব্যাংকের কথা বাদ দিলেও পোস্ট অফিসে স্বল্প সঞ্চয় সুদের প্রকল্প এঁদের কাছে টানতে পারেনি৷ সঞ্চয় সম্পর্কে এখনকার মতো সচেতনতামূলক প্রচারও তখন ছিল না৷

উত্তর ২৪ পরগনার প্রমোদনগরের শিখা বিশ্বাসের লড়াই ছিল তখন থেকেই৷ ‘‘রোজ নামমাত্র টাকা জমিয়ে, বছরের শেষে থোক টাকা হাতে নাও, নিজের পায়ে দাঁড়াও'' — এই স্লোগান সামনে রেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৫-১০ টাকা সংগ্রহ করেন তিনি৷ সঞ্চয় প্রকল্প চালানোর এমন নজির দেখতে ডয়চে ভেলে পৌঁছে গিয়েছিল প্রমোদনগরে৷

 মেয়াদ শেষের পরও টাকা না পেয়ে এজেন্টদের বাড়িতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আমানতকারীরা৷ কয়েক বছরেই টাকা দ্বিগুণ হওয়ার লোভ দেখিয়ে অনেকের সঞ্চয়ে থাবা বসিয়েছিল বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলো৷ সেসব কথা মনে করেই শিখা বললেন, ‘‘পরিচারিকা ললিতা মিস্ত্রি বা সুমিত্রা চন্দ্রের মতো অনেকেই ওই ভুঁইফোঁড় সংস্থায় টাকা রেখে ঠকেছেন৷ অনেকে স্বামীকে গোপন করে এসব জায়গায় টাকা রেখেছিলেন, তাঁদের অসুবিধে আরও৷ আজ তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন৷''

শিখার প্রত্যয়ী কন্ঠস্বরে উঠে এল, ‘সোসাইটি ফর পিপলস্ অ্যাওয়ারনেস', সংক্ষেপে ‘স্প্যান'-এর কথা৷ এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাত ধরেই শিখার মতো বহু মহিলার উঠে আসা৷ ১৯৮৯ থেকে স্প্যানের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প শুরু হয়৷ শিখাদের প্রশিক্ষন দিয়ে তৈরি করে নিয়েছিল এই সংস্থাই৷ তারপর ১৯৯৪ সাল থেকে শিখার হাতে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের দায়িত্ব এসে পড়ে৷ মহিলা চালিত এই দলে শিখার সঙ্গে রয়েছে রেবা রায়, অপর্ণা সাহা, মিঠু মণ্ডল, কনক বৈদ্য, পারুল মণ্ডল, চম্পা মল্লিকের হাত৷ ১৯৯৭ সাল থেকে স্প্যানের আর্থিক সাহায্য ছাড়া শিখারা নিজেরাই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন৷ শিখার অতীতচারিতায় এসে পড়ে সেই প্রথমদিকের ১০ জনের কথা৷ সে সময় ৫০ পয়সা, এক টাকা বা দু' টাকা দিয়ে যাঁরা এই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প শুরু করেছিলেন৷ আজ শিখাদের প্রকল্পের গ্রাহক ৭০০-৮০০ জন৷

‘এমনভাবে তো আর ব্যাংকে টাকা জমানো যাবে না’

This browser does not support the audio element.

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখারা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন৷ ৪৪ বছরের শিখাই নেতৃত্ব দেন প্রচেষ্টা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির৷ এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্যোগে মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে চলে সেলাই শিবির, ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা৷ শিখাদের কোনও মাসিক বেতন নেই৷ সেলাই করে বা ক্যাটারিংয়ের অর্ডার সরবরাহের উপার্জিত টাকা থেকেই চলে সব ব্যয়ভার৷ শিখাদের অফিস যেখানে, সেই ভবনটি অবশ্য স্প্যানের৷ এ জন্য শিখাদের আলাদা ভাড়া গুণতে হয় না৷

কীভাবে চলে স্বল্প সঞ্চয়ের প্রকল্প?

৬-৭ জনের দল করে প্রতি সন্ধেবেলা ‘প্রচেষ্টা'র সদস্যরা বেরিয়ে পড়েন৷ সামর্থ্য অনুযায়ী যে যেমন পারেন, তাই নেওয়া হয় সকলের কাছ থেকে৷ গ্রাহকদের কেউ ভ্যান রিকশা চালান, কেউ মাছ বিক্রি করেন৷ এমন খেটে খাওয়া মানুষদের ওপর জোরাজুরি চলে না৷ বাড়ির মহিলারা রোজ যা ৫-১০-২০ টাকা করে পারেন, জমা দেন৷ তাতে কোনওদিন ১-২ হাজার টাকা হলো, তো কোনওদিন ৫০০ টাকা! কেউ আবার মাসে ১০০ টাকাও জমা দেন৷

শিখা বলেন, ‘‘এমনভাবে তো আর ব্যাংকে টাকা জমানো যাবে না৷ আবার বাড়িতে রাখলে খরচ হয়ে যাবে৷ তার চেয়ে এই ভালো!'' বছর শেষে অনেকটা থোক টাকা হাতে পাওয়া আর নিশ্চিন্তের ঘুম৷ এখানে গ্রাহকদের ১০ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয়৷ এমনকি ইচ্ছে করলে তাঁরা জমা টাকা থেকে ঋণও নিতে পারেন৷ তাতে সুদ নেওয়া হয় ২ শতাংশ হারে৷ এইভাবেই অনেক গ্রাহক মেয়ের বিয়ের টাকা জমিয়েছেন, কেউ স্বামীকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, কেউ বা এই সঞ্চয়ের টাকা খাটিয়েই ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছেন৷

‘ক্যুইক অ্যান্ড ইজি মানি'র অসুবিধা অনেক’

This browser does not support the audio element.

এরকম ছোট ছোট স্থানীয় উদ্যোগের সাফল্য সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করলেন পিয়ারলেস জেনারেল ফিনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির অন্যতম প্রেসিডেন্ট পতিতপাবন রায়৷ তিনি বললেন, ‘‘সারদা বা রোজভ্যালির ‘ক্যুইক অ্যান্ড ইজি মানি'র অসুবিধা অনেক৷ এসব সংস্থা রিটার্ন এবং মার্কেটিংয়ের জোরে মানুষের কাছে পৌঁছেছিল৷ স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প বেশি রিটার্ন না দিতে পারলেও তা নিশ্চিত এবং নিরাপদ৷ একসময় পিয়ালেসও কম রিটার্ন দিয়েছে৷'' তাঁর মতে, শিখাদের মতো এমন উদ্যোগের ভবিষ্যতে অনেক সুযোগ রয়েছে৷ তিনি স্বল্প উদ্যোগে বড় হয়ে ওঠার নজির তুলে ধরতে বন্ধন ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশে আনিসুর রহমানের এমন উদ্যোগের উদাহরণ দেন৷

সারদা, রোজভ্যালির টোপে ক্ষতি হয়েছে অনেক৷ সেলাই করে জীবিকানির্বাহরত কবিতা দাস এবং স্প্যানের কর্মী প্রমীলা গাইনও বাদ যাননি সারদার কবল থেকে৷ তাঁদের হাহাকার আজ অনেকটাই বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছে৷ নিজেদের ভুল শুধরে তাঁরা আবার ফিরে এসেছেন স্বল্প সঞ্চয়ের ঘরে৷ শিখারা আরও আত্মপ্রত্যয়ী এবার— ৮০০ থেকে গ্রাহকসংখ্যা আরও বাড়াতে হবে যে! কোটি কোটি মানুষের দেশে এ ধরনের প্রয়াস হয়তো খুবই ক্ষুদ্র৷ কিন্তু এই চারাগাছ বড় সামাজিক আন্দোলনের পথ দেখাতে পারে ভবিষ্যতে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ