চিনিযুক্ত খাবার নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
২০ এপ্রিল ২০১০ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই দায়ী উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকের শর্করা জাতীয় খাবার৷ এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে নারীদেরই বেশি৷
উচ্চ মাত্রার গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট শর্করা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়৷ তবে এই ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কা সবার নয়৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষদের নয় বরং শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রেই এই ঝুঁকির মাত্রা বেশি৷ দীর্ঘ গবেষণার পর প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ইটালির বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেছেন এই উদ্বেগজনক তথ্য৷
গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে যখন উচ্চ ও নিম্ন মাত্রার গ্লাইসেমিক আলাদা করে ফেলা হয়, তখন এর প্রভাব আরো প্রকটভাবে ধরা পড়ে৷ যেসব নারী উচ্চ গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ শর্করা খায়, তারা নিম্নমাত্রার গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ খাবার ভক্ষণকারীদের চেয়ে ২.২৪ গুন বেশি হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকে বলেই এতে লক্ষ্য করা গেছে৷
অ্যামেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন'এর আর্কাইভস অব ইন্টারনাল মেডিসিন নামক সাময়িকীতে এই গবেষণার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়৷ ইটালির ফন্ডাসিওন আইআরসিসিএস ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী সাবিনা সিয়েরির নেতৃত্বে গবেষক দল প্রায় ৪৮ হাজার ইটালি নারী-পুরুষের উপর এই গবেষণা চালান৷ এই গবেষণার আওতায় প্রায় ১৫ হাজার পুরুষ এবং সাড়ে ৩২ হাজার ৫০০ নারীকে তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়৷
উচ্চ মাত্রার গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাবারের মধ্যে রয়েছে সাদা রুটি, মিষ্টি, বরফ এবং চিনি, ময়দা ও তেল দিয়ে ভাজা পিঠা জাতীয় খাবার৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই খাবারগুলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং ট্রাই-গ্লিসেরাইডস নামের ফ্যাট বাড়িয়ে দেয়৷ একই সাথে, রোগ প্রতিরোধক উপাদান এইচডিএল তথা ‘ভালো কোলেস্টেরল' বলতে যা বোঝাই তার মাত্রা হ্রাস করে দেয় এই শর্করাগুলো৷ অন্যদিকে, নিম্নমাত্রার গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাবারের মধ্যে রয়েছে সিম, মসুর ডাল এবং বাদাম জাতীয় খাদ্য৷ ফলে বিশেষ করে মায়েরা এখন বুঝতে পারছেন যে কোন্ খাবার এখন বেশি করে খাবেন আর কোনগুলো খাওয়া কমাতে হবে৷
উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাবারের ক্ষতিকর দিকসমূহ নিয়ে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সাঈদ বিন জামালের সাথে৷ বাংলাদেশের নারীরা কতটা এই ধরণের শর্করা খাবার জনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত৷ আর অনেকেই তিন বেলায় ভাত খেয়ে থাকেন৷ এছাড়া চিনি সমৃদ্ধ খাবার যেমন মিষ্টি, মধু ইত্যাদি খাদ্যও বেশ গ্রহণ করায় বাংলাদেশের নারীরাও হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে৷
এই ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের নারীদের কী করা উচিত, এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. সাঈদ বলেন, জীবনযাত্রার ধরণে কিছুটা পরিবর্তন আনা উচিত৷ ভাতের বদলে আলু খাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, যা আগে থেকেই বলা হচ্ছে৷ আর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একটু মোটা মানুষদের নিয়মিত শরীর চর্চা, দৌড়ানো কিংবা কমপক্ষে আধা ঘণ্টা করে হাঁটা উচিত৷ আর বিশেষ করে ত্রিশ বছরের বেশি বয়স্ক নারী-পুরুষ সবারই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত৷
প্রতিবেদক : হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক