মিষ্টির প্রতি দুর্বলতা অনেকেরই আছে৷ আবার বেশি মিষ্টি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়৷ চিনির বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম সুইটনারের চল বাড়লেও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা তাই প্রকৃত প্রাকৃতিক বিকল্পের খোঁজ করছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ব্রেন লিমিটেড নামের বায়ো-ইকোনমি কোম্পানির গবেষকরা এমন এক পদার্থের খোঁজ করছেন, যা চিনির মতো মিষ্টি হলেও তার উৎস প্রাকৃতিক হতে হবে৷ সেই সঙ্গে আরেকটি কড়া শর্ত পূরণ করতে হবে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি ড. কাটিয়া রিডেল বলেন, ‘‘আমরা এমন সুইটনার সৃষ্টি করতে চাই, যার স্বাদ হবে একেবারে চিনির মতো অথবা তা মিষ্টির স্বাদ বাড়িয়ে দেবে৷ ফলে কম চিনি সত্ত্বেও স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকবে৷''
ওষুধ ছাড়া ডায়বেটিসকে দূরে রাখার কিছু উপায়
আগে বলা হতো, একবার ডায়বেটিস হলে তা নাকি সারাজীবন থাকে৷ যা আর এখন সত্য নয়, বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন৷ তাঁদের মতে, সতর্কভাবে সঠিক খাবার খাওয়া হলে ডায়বেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Colourbox/L. Dolgachov
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে ওজন কমানো
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে অতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে ডায়বেটিস শতকরা ৯০ ভাগ কমানো সম্ভব৷ যদি সে রোগীর ডায়বেটিসে ভোগার সময়কাল চার বছরের কম হয়ে থাকে৷ একথা জানান, জার্মান ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ প্রফেসার স্টেফান মার্টিন৷
ছবি: Colourbox
নুডলস যখন ‘বিষ’
নুডলস বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের শর্করা রক্তে চিনির মাত্রা মুহূর্তের মধ্যেই বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে শরীরের কোষে ইনসুলিন হরমোন ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: dapd
দিনে মাত্র ৬০০ ক্যালোরি
২০০ ডায়বেটিস রোগী নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডায়বেটিস রোগীরা কড়া ডায়েটিং করে, অর্থাৎ দিনে মাত্র ৬০০ ক্যালরি প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পর ঔষুধ সেবন বন্ধ করতে পেরেছেন৷ তাছাড়া দীর্ঘ তিন মাস শর্করা জাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিয়ে শুধু প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়েও একই ফল পাওয়া গেছে৷
ছবি: picture alliance/chromorange
তিন বেলা প্রোটিন
তিন সপ্তাহ ধরে তিন বেলাই প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে অবশ্যই রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ স্টেফান মার্টিন৷ মাছ, মুরগি, ডিম, মটরশুটি এবং দুধ জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন৷
ছবি: picture-alliance/Food and Drink Photos/H. Tupper
বাদামও খুব উপকারী
ডায়বেটিস রোগীকে প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম, আখরোট খাওয়ার কথা পরামর্শ দেন ডাক্তাররা, কারণ, বাদামের ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখে৷
এ সবে ক্যালরি প্রায় নাই বললেই চলে৷ তবে এতে থাকা পানি পেট ভরায় এবং খুব ধীরে ধীরে রক্তে প্রবেশ করে৷ সালাদের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিলে অনেকক্ষণ খিদেও পায় না৷ তাই প্রচুর সালাদ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা৷
ছবি: colourbox.de
colourbox.de
colourbox.de
স্ট্রবেরি, আপেল
এ সব ফলে অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক কম শর্করা রয়েছে৷ কাজেই ওজন কমাতে এবং ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোনো চিন্তা না করে এ ধরনের ফল যত খুশি খাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
বাইরের কেনা খাবার একেবারেই বাদ রাখুন
ডায়বেটিস রোগীর এক প্লেট খাবারের অর্ধেকটাই হতে হবে সালাদ বা সবজি৷ আর বাকি অর্ধেকে চার ভাগের তিন ভাগ প্রোটিনযুক্ত খাবার আর এক ভাগ থাকতে পারে শর্করা জাতীয় খাবার৷ বাইরের কেনা খাবার একেবারেই বাদ রাখুন৷ এই নিয়মগুলো মেনে চললে ডায়বেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মোটেই কষ্টকর নয়৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃত্রিম সুইটনারের মধ্যে আসল মিষ্টির স্বাদ পাওয়া যায় না৷ এমনই এক বিকল্প হলো অ্যাসপার্টাম৷ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সেই পদার্থকে নিরাপদ হিসেবে ছাড়পত্র দিলেও সমালোচকরা তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক করে দেন৷ তাঁদের মতে, মাথাব্যথা বা দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
সুইটনার রক্তে শর্করার মাত্রার উপরও প্রভাব রাখতে পারে৷ এমনকি মিষ্টি খাবার ইচ্ছাও বাড়িয়ে দিতে পারে৷ ফলে মানুষ বাস্তবে আরও বেশি মিষ্টি খেয়ে ফেলে৷ তখন দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ওজন কমার বদলে আরও বেড়ে যেতে পারে৷
ইইউ-অনুমোদিত সব সুইটনারই কৃত্রিম পদার্থ দিয়ে তৈরি৷ স্টেভিয়া তার একমাত্র ব্যতিক্রম৷ ২০১১ সালে প্রথম প্রাকৃতিক সুইটনার হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পর বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল৷ কিন্তু সীমিত কিছু ক্ষেত্রেই সেটি প্রয়োগ করা সম্ভব৷ ড. রিডেল বলেন, ‘‘সব পণ্যের সঙ্গে স্টেভিয়া ভালোভাবে খাপ খায় না৷ যেমন দুগ্ধজাত পণ্যে স্টেভিয়ার প্রয়োগ বেশি দেখা যায় না, কারণ সে ক্ষেত্রে স্বাদ পাওয়া যায় না৷ আমরা স্টেভিয়ার চেয়েও ভালো সুইটনারের সন্ধান করছি৷''
সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গবেষকরা প্রকৃতির মধ্যে কর্নুকোপিয়া নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ করছেন৷ এই কোম্পানি একটি ডিপ ফ্রিজকে সিন্দুক হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে৷ বিভিন্ন গাছপালা ও ছত্রাক থেকে নিষ্কাশিত কোষের নমুনা ও কম্পাউন্ড তাতে রাখা আছে৷ সেটি বিশাল এক সংরক্ষণাগার৷ বহু বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত নমুনা সেখানে রাখা আছে৷
অতিরিক্ত ওজন বাড়া বন্ধ করতে চিনির দাম বাড়াবে জার্মানি
অনেক দেশের মতো জার্মানিতেও অতিরিক্ত মোটা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা নিঃসন্দেহে ডায়বেটিস, হৃদরোগ বা ক্যানসারের জন্য হুমকিস্বরূপ৷ তাই তো মিষ্টি খাবার ও পানীয়তে ‘ট্যাক্স’ বা কর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা৷
ছবি: imago/imagebroker
দু’শ কোটিরও বেশি মানুষ অতিরিক্ত মোটা
বিশ্বে যাঁদের ওজন অতি দ্রুত কমানো প্রয়োজন, তাঁদের সংখ্যা আকাশচুম্বী৷ হ্যাঁ, এ কথাই জানিয়েছেন একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল৷ তাঁরা জানিয়েছেন, সারা বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন৷
ছবি: dpa
সমীক্ষার ফলাফল
স্বাস্থ্যকর খাবারের ওপর ‘কম’ কর এবং অস্বাস্থ্যকর বা মিষ্টি জাতীয় খাবার ও পানীয়তে করের পরিমাণ বাড়ালে মানুষের অতিরিক্ত ওজন বাড়া বন্ধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জার্মানির অর্থনীতিবিদ টোবিয়াস এফের্টস৷ এ তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে জার্মানির অতিরিক্ত ওজন বা ‘ওবিসিটি’ সোসাইটি ও ‘ডায়বেটিস সোসাইটি’-র অনুরোধে করা এক গবেষণা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Media for Medical
স্বাস্থ্যকর খাবারে কম কর, অস্বাস্থ্যকর খাবারে বেশি
স্বাস্থ্যকর খাবার, অর্থাৎ সবজি ও ফলজাতীয় খাবার থাকবে করমুক্ত৷ এছাড়াড নুডলস, দুধ ও মাংসে থাকবে আগের মতোই শতকরা ৭ ভাগ কর৷ কিন্তু চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারে কমপক্ষে শতকরা ১৯ ভাগ এবং চিনি যুক্ত পানীয় বা সফটড্রিকংস-এ ২৯ শতাংশ ‘ট্যাক্স’ চাপানোর কথা বলা হয়েছে গবেষণায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ওজন বাড়ার পরিবর্তে ১০ ভাগ কমতে পারে
জার্মানির প্রায় অর্ধেক মানুষেরই ওজন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি৷ তাই বিভিন্ন খাবারে কর বাড়ানো আর কমানোর পরিকল্পনাটি যদি সত্যিই প্রয়োগ করা হয় তাহলে যাঁদের অতিরিক্ত ওজন, তাঁদের ওজন আর ‘না’ বাড়ার বদলে ১০ ভাগ কমতে পারে বলে জানান অর্থনীতিবিদ টোবিয়াস এফের্টস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hesse
রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট
জার্মানির রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট জানায়, ইতিমধ্যে জার্মানিতে নাকি প্রতি চার থেকে পাঁচজনেরই ওজন বেশি৷ বিশেষ করে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের৷ বলা বাহুল্য, দিনের পর দিন এদের কিনা হার্ট, ডায়বেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
মিষ্টি পানীয়তে কর বাড়িয়েছে যে সব দেশ
ফ্রান্স কিন্তু অতিরিক্ত ওজন বাড়া বন্ধ করতে ২০১২ সাল থেকেই মিষ্টি পানীয়তে কর বাড়িয়ে দিয়েছে৷ আর ব্রিটেনে আগামী ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে মিষ্টি পানীয়র ওপর কর ধার্য করা হবে বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিষ্টি জিনিসের মূল্য বাড়নো হোক
ডায়বেটিস সোসাইটিও চায় চিনির তৈরি খাবার বা মিষ্টি পানীয়র ওপর কর বাড়ানো হোক৷ তারা মনে করে, এর মধ্য দিয়ে ডায়বেটিস টাইপ-টু রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনি ওজন বাড়ায়
চিনি শরীরে শক্তির চেয়ে দুই থেকে পাঁচগুণ তাড়াতাড়ি চর্বি তৈরি করে৷ অর্থাৎ চিনি খাওয়া মানে শরীরের ফ্যাট কোষগুলোকে সরাসরি খাবার দেওয়া৷ যার ফলে আপনার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে টাইপ-টু ডায়বেটিস হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Kalaene
অতিরিক্ত ওজন শুধু শারীরিক সমস্যা নয়!
যে মানুষটির ওজন অতিরিক্ত, তাঁর যে শুধু শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা বা ডায়বেটিস, ক্যানসার এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে, তা নয়৷ শিশুরা অতিরিক্ত ওজনের কারণেই স্কুলে মবিং-এর শিকার হয়, যা একসময় মানসিক রোগেরও রূপ নিতে পারে৷ এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
এই সব নুমনা থেকেই ভবিষ্যতে হয়তো আরও উন্নত মানের সুইটনার সৃষ্টি হবে৷ ড. কাটিয়া রিডেল বলেন, ‘‘এটা অনেকটা পরিচিত জীবের মধ্যেই গোপন সম্পদ খোঁজার মতো অভিজ্ঞতা৷ আমরা রেউচিনি বা চিলি পেপারের মতো সাধারণ গাছপালা এবং সেগুলির উপাদান পরীক্ষা করে দেখি, তার মধ্যে মিষ্টি স্বাদ রয়েছে কিনা৷
এই গবেষণা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল৷ কিন্তু কৃত্রিম জিব বা স্বাদ মাপার যন্ত্র ছাড়া সেই কাজ কার্যত অসম্ভব বলা চলে৷ ড. রিডেল বলেন, ‘‘এই জিব দিয়ে, এই কৃত্রিম কোষের সাহায্যে আমরা হাজার হাজার পদার্থের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করতে পারি৷ সেগুলির স্বাদ মিষ্টি না তিক্ত, অত্যন্ত কম সময়ে তা জানতে পারি৷''
তবে কৃত্রিম জিব একা কোনো কিছু বাছাই করতে পারে না৷ একমাত্র আসল জিবের সাহায্যে সূক্ষ্ম স্বাদের পার্থক্য শনাক্ত করা সম্ভব৷ ড. কাটিয়া রিডেল বলেন, ‘‘কিছু সুইটনার অত্যন্ত দ্রবণীয়৷ সেগুলি পানীয়ের জন্য আদর্শ৷ অন্য অনেক সুইটনার তেমন দ্রবণীয় না হলেও সেগুলির স্বাদ খুব ভালো৷ ক্যান্ডি বার বা চুইয়িং গামে তা কাজে লাগানো যেতে পারে৷''
ব্রেন কোম্পানি এর মধ্যে ৬০টি সম্ভাবনাময় সুইটনার আবিষ্কার করেছে, যা বিভিন্ন ধরনের পণ্যে প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ গবেষকরা সেগুলি খাদ্য প্রস্তুতকারকদের হাতে তুলে দিয়েছেন, যাতে তাঁরা আরও গবেষণা চালাতে পারেন৷