বিচিত্র পেশা
১৮ জুলাই ২০১২আমাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবস্থায় একটা রচনা লিখেছি স্কুলে, যার শিরোনাম হতো – ‘বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও'৷ মাস্টারমশাইরা এমন রচনা লিখতে বলতেন কারণ তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তিমুখী মানসিকতা এবং ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা একটা আঁচ পেতে চাইতেন৷ যদিও সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হত বলা শক্ত, কারণ অন্তত নীচু ক্লাসে অনেক ছাত্রই অম্লানবদনে লিখে আসত, বড় হয়ে সে লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের ড্রাইভার বা বাস কন্ডাক্টার হতে চায়৷ মেয়েদের মধ্যে আবার লেখিকা বা শিল্পী হওয়ার প্রবণতা দেখা যেত বেশি৷ অবশ্য একটু বড় হতেই ইচ্ছেগুলো বদলে যেত ডাক্তার বা এঞ্জিনিয়ার হওয়ার দিকে৷ অনেকসময়ই বাড়ির লোকজনের মধ্যে স্থায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার দিকে একটা পক্ষপাতিত্ব দেখা যেত৷ আর খুব উচ্চাভিলাষী হলে তারা হতে চাইত পাইলট৷
কিন্তু সময় বদলেছে৷ এখনকার ছেলেমেয়েরা স্কুলের গন্ডি পার হওয়ার আগেই বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়, সৌজন্য টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট৷ আজকে তারা অনেক খবরই রাখে, ১৫-২০ বছর আগেও যেসব খবর তাদের নাগালে ছিল না৷ এই যে জানার পরিধি বেড়ে যাওয়া, এর প্রভাব পড়ছে আজকের প্রজন্মের পেশাগত পছন্দ অপছন্দের উপরেও৷ এমন অনেক অভিনব পেশার কথা তারা ভাবছে, যা স্রেফ বিষয়গত বৈচিত্র্যে আমাদের অবাক করছে৷
সদ্য আইসিএসই পরীক্ষায় পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে রাজর্ষি হালদার৷ বাবা-মায়ের এক ছেলে রাজর্ষির অবসর সময়ের অনেকটাই কাটে রকমারি ভিডিও এবং কম্পিউটার গেমস খেলে৷ সম্ভবত সেই আকর্ষণের জায়গা থেকেই রাজর্ষি সফটওয়্যার ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, যাতে সে ভবিষ্যতে কম্পিউটার গেমস উদ্ভাবনকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারে৷ মজার কথা হচ্ছে, এই ভার্চুয়াল খেলাকে নিজের বৃত্তিগত দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত করতে চাইলেও, মাত্র ১৬ বছরের রাজর্ষির কিন্তু পরিষ্কার ধারণা আছে এই পেশার দূর্বলতাগুলো নিয়ে৷
তা হলে কি সিদ্ধান্ত বদলাবে রাজর্ষি? না, এখনই সেরকম কোনও সিদ্ধান্ত সে নেবে না, কারণ নিজের দেশে এই পেশার ভবিষ্যৎ এখনও উজ্জ্বল না হলেও বিকল্প সংস্থানের কথাও রাজর্ষির মাথায় আছে৷
ক্লাস নাইনের উন্নতি মুখার্জি৷ ওর বাবা-মা, দুজনেই পেশায় চিকিৎসক৷ কিন্তু উন্নতির ইচ্ছে, বড় হয়ে ও ফ্যাশন ডিজাইনার হবে৷
এটাও কিন্তু নেহাত ছেলেমানুষী ইচ্ছে নয়৷ উন্নতি খুব সহজ কথায় বুঝিয়ে দিতে পারে যে, কেন ফ্যাশন ডিজাইনিং পেশা হিসেবে ওর কাছে আগ্রহজনক৷
উন্নতি এবং রাজর্ষি, দু'জনের সঙ্গে কথা বলেই একটা বিষয় খুব স্পষ্ট হয় যে আজকাল ছেলে-মেয়েদের জানাশোনার পরিধি যতই বাড়ছে, ওদের চিন্তাও ততই উন্মুক্ত হচ্ছে৷ ফলে ওদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও এক অন্য ভুবনের, এক অন্যতর সাফল্যের দিশা দিচ্ছে আমাদের৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ