আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত শিল্পী ডেভিড হকনির বয়স ৮০ ছুঁতে চলেছে৷ বাস করতেন লস অ্যাঞ্জেলেসে; ছেড়েছুড়ে ফিরেছেন ইংল্যান্ডে৷ তাঁর ৬০ বছরের শিল্পকর্ম নিয়ে জার্মানিতে বেরিয়েছে একটি প্রমাণ সাইজের বই, ডেভিড হকনির ছবি দিয়ে ভরা৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ চিত্রকর ডেভিড হকনি গত জানুয়ারি থেকে তাঁর প্রকাশকের সঙ্গে বইটি নিয়ে কাজ করেছেন৷ বইটি হলো তাঁর ছয় দশক ব্যাপী শিল্প ও শিল্পীজীবনের একটি আলেখ্য৷
বইয়ের নাম রেখেছেন ‘এ বিগার বুক', কেননা ৭৯ বছর বয়সি ডেভিড হকনির যে ছবিটি সবচেয়ে বিখ্যাত, সেটির শীর্ষক ছিল ‘এ বিগার স্প্ল্যাশ', একটি সুইমিং পুলের ছবি৷ হকনি জানালেন, ‘‘এ বিগার স্প্ল্যাশ নামটা দেওয়া হয়েছিল কারণ ‘দ্য স্প্ল্যাশ' বলে একটা ছবি ছিল৷ আরেকটা ছোট ছবির নাম ছিল ‘এ স্মলার স্প্ল্যাশ'৷ সেই জন্যই এই ছবিটার নাম হল ‘এ বিগার স্প্ল্যাশ', কেননা এটা একটা বড় ছবি৷ যদিও আমি জানতাম শীর্ষকটা বেশ ভালো৷''
৮ তারকা যাঁরা একসময় শরণার্থী ছিলেন
সংগীত শিল্পী, অভিনেত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ - বিশ্বখ্যাত এমন অনেক তারকাকে নানা কারণে জীবনের একটি সময় শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে হয়েছিল৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কয়েকজনের কথা৷
ছবি: Getty Images
মারলেনে ডিটরিশ
১৯০১ সালে জার্মানিতে জন্ম নেয়া ডিটরিশ গায়িকা ও অভিনেত্রী হিসেবে বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন৷ ১৯৩০ সালে তিনি হলিউডে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান৷ সেখানে থাকলেও নাৎসি আমলের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি৷ ১৯৩৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন বাহিনীর জন্য গান গেয়েছেন৷ নাৎসি সরকার জার্মানিতে তাঁর মুভি প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেনরি কিসিঞ্জার
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে জন্মেছিলেন৷ নাৎসি সরকারের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১৯৩৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schiefelbein
মেডেলিন অলব্রাইট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলব্রাইট চেক প্রজাতন্ত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ ১৯৪৮ সালে সে দেশে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় গেলে তিনি তাঁর পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
আলবার্ট আইনস্টাইন
জার্মান ইহুদি এই নোবেল বিজয়ী যখন ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন তখনই বুঝতে পারেন যে, তাঁর পক্ষে আর জার্মানি ফেরা সম্ভব নয়৷ কারণ ঐ বছরই হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হন৷ ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৪০ সালে সে দেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/United Archives International
গেওর্গ ভাইডেনফেল্ড
ইহুদি এই মানুষটির জন্ম অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, ১৯১৯ সালে৷ নাৎসিরা যখন অস্ট্রিয়া দখল করে নিলে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান৷ সেখানে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থা চালু করেন৷ ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্টের ‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N.Bachmann
বেলা বার্টোক
হাঙ্গেরির কম্পোজার, পিয়ানোবাদক ও লোক সংগীত সংগ্রাহক বার্টোক ইহুদি ছিলেন না৷ কিন্তু নাৎসিদের হাতে ইহুদিদের নিপীড়িত হওয়ার বিষয়টির ঘোর সমালোচক ছিলেন তিনি৷ ফলে ১৯৪০ সালে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে হয়৷
ছবি: Getty Images
ইসাবেল আলেন্দে
১৯৭৩ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চিলির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সালভেদর আলেন্দেকে হটিয়ে দেয়া হয় এবং সেই সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়৷ এরপর একসময় আলেন্দের এক কাজিনের মেয়ে ইসাবেলকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ তা থেকে বাঁচতে প্রথমে ভেনেজুয়েলায়, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ইসাবেল৷ তাঁর লেখা কয়েকটি উপন্যাস আন্তর্জাতিকভাবে বেশ প্রশংসিত হয়েছে৷
ছবি: Koen van Weel/AFP/Getty Images
মিরিয়াম মাকেবা
‘মামা আফ্রিকা’ নামে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত শিল্পী মাকেবা একবার গান গাইতে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন৷ সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বর্ণবাদবিরোধিতার অভিযোগে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়৷ ফলে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি৷ কয়েক দশক পর অবস্থার পরিবর্তন হলে দেশে ফিরে যান মাকেবা৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
ডেভিড হকনির জন্ম ইংল্যান্ডে, ১৯৩৭ সালে৷ ব্র্যাডফোর্ড আর লন্ডনে শিল্পকলা নিয়ে পড়াশুনো করেছেন; ষাটের দশকে তিনি যান ক্যালিফর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে৷ সেখানে তিনি প্রধানত তাঁর দৈনন্দিন জীবন থেকে নেওয়া বিভিন্ন বাস্তবধর্মী ছবি এঁকেছেন৷ ক্যামেরা দিয়ে তোলা স্ন্যাপশট থেকে জন্ম নিয়েছে তাঁর তথাকথিত ‘সুইমিং পুল' পর্যায়ের ছবি বা ‘গার্হস্থ্য জীবন' পর্যায়ের ছবিগুলো, যে সব ছবি তাঁকে বিশ্বখ্যাত করে দেয়৷ ডেভিড হকনি প্রকাশ্যভাবে সমকামী হিসেবে বাস করেন৷
ছবির বাজারে ডেভিড হকনির আঁকা ছবি লক্ষ লক্ষ ইউরো মূল্যে বিক্রি হয়৷ শেষ জীবনে তিনি তাঁর স্বদেশ ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার কাউন্টির নানা প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকেছেন৷ হকনি আবার ব্রিটেনেই বসবাস করছেন কিনা৷ ক্যালিফর্নিয়ার একটানা সূর্যালোকের পরিবর্তে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ঋতুর বিভিন্ন ধরনের আলো পছন্দ করেন তিনি৷
চিরনবীন
তাঁর সাফল্যের একটি সূত্র হলো এই যে, তিনি পরিবর্তনশীল এবং নতুনত্বে আগ্রহী৷ ডেভিড হকনি তাঁর শিল্পকলার জন্য পোলারয়েড, ফ্যাক্স অথবা ফটোকপি ব্যবহার করেছেন৷ সম্প্রতি তিনি আইপ্যাডের গ্র্যাফিক প্রোগ্রামগুলো আবিষ্কার করেছেন৷ বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই নতুন মিডিয়ামে আঁকা ছবি দিয়ে প্রদর্শনী পর্যন্ত করেছেন৷ হকনির বক্তব্য হলো, ‘‘আইপ্যাডের মজা হলো এই যে, তা সবসময়েই তোমার জন্য প্রস্তুত৷ লাগে শুধু আইপ্যাড আর নিজের আঙুল৷ আমি এখানে বসেই আঁকা শুরু করতে পারি৷ সব কিছু এখানেই আছে, আমার কাছে৷ জল আনার দরকার নেই, রঙ-তুলির দরকার নেই, পেনসিল কাটতে হয় না৷ প্রেরণা এলেই আঁকতে শুরু করা যায়৷''
ডেভিড হকনির নতুন বইটার সাইজ প্রায় খবরের কাগজের মতো; ন'হাজার কপির সীমিত সংস্করণ; প্রতি কপির দাম ২,০০০ ইউরো৷ শিল্পীর গোটা শিল্পকর্মকে যেন বছর হিসেবে সাজিয়ে তুলে ধরা হয়েছে৷ প্রকাশক জার্মানির টাশেন-ফ্যারলাগ এই সংস্করণকে একজন মহান সমকালীন শিল্পীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে গণ্য করছে৷ টাশেন-ফ্যারলাগের মার্লেনে টাশেন জানালেন, ‘‘এখানে যে ছবিগুলোকে এই ফরম্যাটে এককভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেটা সব শিল্পীর ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, কেননা প্রতিটি ছবিকে তার নিজস্বতা বজায় রাখতে হবে, ফুটিয়ে তুলতে হবে৷ ডেভিড হকনির ছবিতে সেই কোয়ালিটিটা আছে৷''
ডেভিড হকনি বলেন, তিনি অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে ভালোবাসেন না৷ কিন্তু এই বইটা থেকে দেখা যায়, তিনি সত্যিই কতটা এঁকেছেন: বলতে কি, তিনি আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছেন৷৷
শ্যারন ব্যারকাল/এসি
শিল্পীর চোখে মঙ্গোলিয়ার মরুকরণ
সবুজ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে, ক্রমশ বিস্তীর্ণ এক মরু হয়ে যাচ্ছে মঙ্গোলিয়া৷ সরকারি তথ্যই বলছে, এমন চলতে থাকলে মধ্য এশিয়ার দেশটির পুরোপুরি মরুভূমি হতে বেশিদিন লাগবেনা৷ শিল্পী দায়েসুং লি-র চোখে দেখুন মঙ্গোলিয়ার মরুকরণ৷
ছবি: Daesung Lee
ঐতিহ্যে পরিবর্তন
মরুকরণের ছাপ মঙ্গোলিয়ার যাযাবর ঐতিহ্যেও পড়ছে৷ ছবিতে প্যারিস ভিত্তিক শিল্পী দায়েসুং লি-র আঁকা মরুভূমির বড় একটি ছবি বসানো হয়েছে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠে৷ ঘাসের ওপর দিয়ে সেই ল্যান্ডস্কেপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন মানুষ৷ মঙ্গোলিয়াও কিন্তু এভাবেই সবুজ ছেড়ে মরুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে৷
ছবি: Daesung Lee
মরুর বুকে তৃণভোজী
মঙ্গোলিয়া সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দশকে ব্যাপক সবুজ-নিধন হয়েছে৷ এ সময়ে রাশিয়া এবং চীনের প্রতিবেশী দেশটির প্রায় এক তৃতীয়াংশই হয়ে গেছে মরুভূমি৷ এখানে এক মরুপ্রান্তরে শিল্পীর আঁকা ছবি, ছবিতে ঘাসহীন প্রান্তরে খাদ্যের সন্ধান করছে দুটি ঘোড়া৷
ছবি: Daesung Lee
পানি চাই, পানি...
প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানি সরবরাহ করা না গেলে মঙ্গোলিয়ার মরুকরণ রোধ করা যাবে না৷ তা বোঝাতেই সবুজ মাঠের মাঝখানে বসানো মরুভূমির এই ছবিটি এঁকেছেন দায়েসুং লি৷ ওপর থেকে ছবির মরুভূমিতেই পানি ঢালছেন একজন৷
ছবি: Daesung Lee
পানি যেখানে, সেখানেই জীবন
মরুভূমির বুকে স্বপ্ন কিংবা অতীত এঁকেছেন শিল্পী৷ এই মরুতেও এক সময় ছিল সবুজ-শ্যামলিমা৷ এখানেও ছিল ফুল, ফল, পাখির কলতান৷ এখন শুধু বালি আর বালি৷ বালির ওপর দিয়ে একজন হেঁটে যাচ্ছেন শিল্পীর আঁকা ছবির দিকে৷ ছবিতে জলরাশি আছে, সবুজ আছে, বসতি আছে, জীবনের স্পন্দন আছে৷ পানি আছে বলেই সব আছে৷
ছবি: Daesung Lee
‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’
একসময় এই মরুভূমিও মরুভূমি ছিল না৷ শিল্পী ছবি এঁকে দেখিয়েছেন, এখানেও এসে কেমন সুন্দর, রোম্যান্টিক সময় কাটিয়েছেন তরুণ-তরুণী৷ তাঁদের বিয়ে হয়েছে, সন্তান হয়েছে৷ সন্তানদের নিয়ে এসেছেন বাবা-মা৷ কিন্তু সন্তানদের জন্য এই মাঠে এখন আর কোনো হাসি নেই, আনন্দ নেই৷
ছবি: Daesung Lee
টান...
এখানেও মরুভূমিতে শিল্পীর আঁকা সবুজ প্রান্তর৷ সবুজে বিচরণ করছে সুস্থ-সবল গবাদি পশু৷ ছবির বাইরে একটি ক্ষুধার্ত গরু৷ রাখাল তাকে দূরে নিতে চাইছে, কিন্তু মন মানছে না তার, সবুজ ঘাসের আকর্ষণে ছবির দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে গরুটি৷
ছবি: Daesung Lee
সব সুন্দরই স্বর্গীয় নয়
নীল আকাশ, নীচে ঝিকিমিকি বালু৷ অনেকেরই মন ছুঁয়ে যাবে মরুর এই সৌন্দর্য৷ কিন্তু কখনো কখনো কারো কারো জন্য এই সুন্দরই কদাকার, নিষ্ঠুর৷ ছবিতে এ বারতাই সবার কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন শিল্পী৷