চিড়িয়াখানায় হরিণ জবাই - এ কেমন চিড়িয়াখানা, কেমন মানুষ!
নুরুননাহার সাত্তার
৩১ মে ২০২৩
১৯৭৫ সালে জেলখানায় চার নেতাকে হত্যার মতো কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সাক্ষী হয়েছিল বাংলাদেশ৷ রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে খুনিরা বিচার এড়িয়েছে অনেক বছর৷ তবে এই মৃত্যুটি জেলখানায় নয়, মৃত প্রাণী কোনো মানুষও নয়৷
বিজ্ঞাপন
সরাসরি হত্যা না হলেও জেলখানায় ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু'র ঘটনা এখনো খবরে দেখি৷
পত্রিকায় দেখলাম,শেরপুরের ইকোপার্কের চিড়িয়াখানার একমাত্র চিত্রা হরিণটিকে দুর্বৃত্তরা জবাই করে খেয়ে ফেলেছে৷ রাতের আঁধারে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে অবস্থিত মধুটিলা ইকোপার্কের ভেতরে থাকা মিনিচিড়িয়াখানার একমাত্র চিত্রা হরিণটিকে জবাই করে ৫০ কেজি মাংশ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা৷ এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ অনুযায়ী একটি মামলা করে আটক একজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে৷ হরিণ জবাইয়ের ঘটনায় আরো যারা সম্পৃক্ত রয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ৷
মনে পড়ে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জেলের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও ৪ জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে হত্যা করা হয়েছিল৷ সেই সময় রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা তো দেয়ইনি, উল্টো খুনিদের পালিয়ে যেতে ‘সহায়তা' করেছিল৷
কিছুদিন আগে কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন লেখক মুশতাক আহমেদ৷পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ পুলিশ নিরাপত্তা দেবে কি, উল্টে পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ!
চিড়িয়াখানার হরিণ জবাইয়ের ঘটনাটি যেন অভিযোগের পর্যায়ে সীমিত না থাকে৷ বাংলাদেশে আইন তো রয়েছে অনেক, তবে সেসবের প্রয়োগ কোথায়, কতটা হয়- এ প্রশ্ন থেকেই যায়৷
চিড়িয়া খানার হরিণ চুরি করে খেয়ে ফেলার মতো ঘটনা জার্মানিসহ বিশ্বের অনেক দেশে কল্পনাই করা যায় না৷ এমন অকল্পনীয় একটি অপরাধ করেছে তারা কেমন মানুষ! চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষই বা কেমন কর্তৃপক্ষ? তারা প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে কতটা আন্তরিক? হরিণ হত্যা করে রান্না করে তার মাংস খেয়ে ফেলায় জড়িত সবার যেন কঠিন সাজা হয়৷শেরপুরের ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও যেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়৷
চিত্রা হরিণের নিঝুম দ্বীপ
নোয়াখালী জেলার ছোট্ট একটি দ্বীপ নিঝুম দ্বীপ৷ সেখানকার জাতীয় উদ্যানে আছে অসংখ্য চিত্রা হরিণ৷ দেশের অন্য কোনো বনে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় না৷ নানান পাখিও দেখা যায় এই দ্বীপে৷ ছবিঘরে দেখে নিন অপূর্ব কিছু দৃশ্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
চর ওসমান
হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণাংশে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ এটি৷ শোনা যায়, ওসমান নামে এক ব্যক্তি তাঁর মহিষের বাথান নিয়ে এ দ্বীপে বসতি গড়ার পর এটি পরিচিতি পায় ‘চর ওসমান’ নামে৷ পরে নাম হয় নিঝুম দ্বীপ৷ বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি নামের প্রধান চারটি দ্বীপ ও ছোট ছোট কয়েকটি চর নিয়েই এ দ্বীপ৷ উত্তর-দক্ষিণে এ দ্বীপ প্রায় নয় কিলোমিটার লম্বা আর পূর্ব পশ্চিমে প্রায় সাত কিলোমিটার চওড়া৷
ছবি: DW/M. Mamun
শ্বাসমূলীয় বন
নিঝুম দ্বীপে আছে বড়সড় একটি শ্বাসমূলীয় বন৷ ৭০ এর দশকে বন বিভাগ এ দ্বীপে কেওড়া, ওড়া জাতীয় শ্বাসমূলীয় গাছ রোপণ করে৷ সেই গাছপালাই এখন বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে৷ ২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চিত্রা হরিণ
১৯৭৪ সালে এ বনে সর্বপ্রথম সুন্দরবন থেকে এনে চার জোড়া চিত্রা হরিণ ছেড়ে দেয়া হয়৷ ওই চারটি হরিণের বংশ বিস্তারের ফলে এ বনে হরিণের সংখ্যা এখন বিশ হাজারেরও বেশি৷ নিঝুম দ্বীপের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ চিত্রা হরিণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রধান প্রাণী
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রাণী চিত্রা হরিণ৷ এ ছাড়াও এ বনে আরো আছে উদ্বিড়াল, মেছো বাঘ, খেকশিয়াল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
খুব কাছ থেকে হরিণ দেখা
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানে গাছের আড়ালে দুটি চিত্রা হরিণ৷ দেখতে সুন্দরবনের মতো হলেও তেমন কোনো হিংস্র বন্যপ্রাণী নেই এ বনে৷ তাই নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা খুব কাছাকাছি থেকেই চিত্রা হরিণের দল দেখতে পারেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
হরিণের দল
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম পাশে বিশাল বিশাল খোলা মাঠে পড়ন্ত বিকেলে হরিণের দল৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিঝুম দ্বীপে সূর্যাস্ত
মনোরম এ দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে নিঝুম দ্বীপের নামা বাজারের পশ্চিম পাশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদী ভাঙন
নদী ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের উত্তরাংশের জঙ্গল৷ গত তিন বছরে এ জঙ্গলের বড় একটা অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চৌধুরী খাল
নিঝুম দ্বীপের পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে চৌধুরীর খাল এলাকা৷ নৌকায় চড়ে নামা বাজারের পাশের খাল ধরে যেতে হবে জায়গাটিতে৷ এ খালটি একেবারে জঙ্গলের গহীনে চলে গেছে৷ নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেদের আড়াল করে চুপচাপ বসে থাকলে প্রচুর হরিণ দেখা সম্ভব৷
ছবি: DW/M. Mamun
অপূর্ব জৌড়ালি
নিঝুম দ্বীপে নদীর চরে এক ঝাঁক জৌড়ালি৷ এ দ্বীপে দেখতে পাওয়া নানান পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিশি বক, কানিবক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, লালপা, নানান জাতের মাছরাঙ্গাসহ বিভিন্ন রকম পরিযায়ী পাখি ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিপন্ন দেশি গাঙচষা
নিঝুম দ্বীপের পূর্ব পাশে জেগে ওঠা দমার চরের আকাশে এক ঝাঁক ইন্ডিয়ান স্কিমার বা দেশী গাঙচষা৷ জলচর নানান পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই চর৷ তবে দমার চরের প্রধান আকর্ষণ এই দেশী গাঙচষা৷ এই চরই মহা বিপন্ন এই পাখিটির বাংলাদেশে অন্যতম আবাসস্থল৷
ছবি: DW/M. Mamun
কালো মাথা কাস্তেচরা
নিঝুম দ্বীপের চরে ব্ল্যাক হেডেড আইবিস, বাংলায় পাখিটির নাম ‘কালো মাথা কাস্তেচরা’৷ বিরল এই পাখিটিও নিঝুম দ্বীপের চরে দেখা যায় শীতকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সরকারি নজরদারির অভাব
জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে সরকারি নজরদারি নেই বললেই চলে৷