মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন থেকে পণ্য আমদানির উপর আবারও শুল্ক আরোপ করতে চান৷ এ সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরির জন্য সোমবার তিনি দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবার ২০০ বিলিয়ন ডলার চীনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করতে চান৷ এর আগে ৫০ বিলিয়ন ডলার পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় চীনও সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে৷ দুই দেশের এই সিদ্ধান্ত ৬ জুলাই থেকে কার্যকর হবে৷
চীন ইতিমধ্যে ৫৪৫টি মার্কিন পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে, যার মধ্যে সয়াবিন, কৃষিপণ্য ও গাড়ি রয়েছে৷ ভবিষ্যতে জ্বালানি ও রাসায়নিক পণ্যও এর আওতায় আসবে বলে জানিয়েছে চীন৷
এদিকে, চীন তালিকা তৈরি করলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও শুল্ক আরোপের জন্য সম্ভাব্য চীনা পণ্যের তালিকা তৈরি করতে পারেনি৷
বাণিজ্য যুদ্ধ হলে কী ক্ষতি হবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি রূপায়ন করতে আমদানির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন৷ সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago/Ralph Peters
বাণিজ্য যুদ্ধের অর্থ কী?
কোনো দেশ কোনো এক বা একাধিক পণ্য আমদানির উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলিও পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের জের ধরে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের আকার নিতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেই সহজ হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Peter
অতীত দৃষ্টান্ত
১৯৩০-এর দশকে শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা বিশাল মন্দা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার সে বছর শুল্ক সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর করার ফলে ২০ হাজারেরও বেশি পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হয়েছিল৷ ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও দেশের জন্য শুল্ক চাপানো হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/Library of Congress
ট্রাম্প কেন বাণিজ্য যুদ্ধের পথে এগোচ্ছেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তোপ দেগে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে সমালোচকদের মতে, এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তিনি অ্যামেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না৷ কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে৷ ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ছবি: picture-alliance/K. Ohlenschläger
পালটা পদক্ষেপ
ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করলে বাকি দেশগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না৷ ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যামেরিকার বিরুদ্ধেও পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেয়ে বহুপাক্ষিক সমাধানসূত্রের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
অ্যামেরিকার ক্ষতি
সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প যদি সত্যি আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপান, তার পরিণতি অ্যামেরিকার জন্যও ইতিবাচক হবে না৷ যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে অ্যামেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে৷ তার ফলে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে৷ যে কোম্পানিগুলি ইস্পাত ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে, তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Weihrauch
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকায় ইস্পাত রপ্তানি করতে না পারলে চীন ইউরোপের বাজারে তা আরও সস্তায় বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে৷ স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে এমন আরও দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে৷ সামগ্রিকভাবে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা নানাভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক নানা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে এমন বিপদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/XinHua
আইনি লড়াই
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাব্লিইউটিও সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বাণিজ্যের বিধিনিয়ম স্থির করে এসেছে এবং বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে৷ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে৷ সব পক্ষ ডাব্লিইউটিও-র রায় না মানলে এই সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ এমন কাঠামো তার কার্যকারিতা হারালে ভবিষ্যতে সেই ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না৷
ছবি: Reuters/N. Kharmis
7 ছবি1 | 7
সোমবার ট্রাম্পের নতুন করে ২০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সমপরিমাণ পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণার সমালোচনা করেছে চীন৷ দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘোষণাকে ‘ব্ল্যাকমেল' বলে আখ্যায়িত করেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে চীনও সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে৷
চীনের এই হুমকির প্রেক্ষিতে ট্রাম্প বলেছেন,চীন যদি নতুন করে শুল্ক আরোপ করে, তাহলেযুক্তরাষ্ট্র আরও ২০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করবে৷ তিনি বলেন, ‘‘চীনের নতুন সিদ্ধান্ত বলে দিচ্ছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে সবসময় অসুবিধাজনক অবস্থায় রাখতে চায়৷'' উল্লেখ্য, শুধু চীন নয়, দীর্ঘদিনের বন্ধুরাষ্ট্র ক্যানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গেও বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ট্রাম্প এসব দেশ থেকে ইস্পাত (২৫ শতাংশ) ও অ্যালুমিনিয়াম (১০ শতাংশ) আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করেছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও পালটা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷