মার্কিন সংসদের নিম্ন কক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর থেকেই চীন তাইওয়ানের চারিদিকে সামরিক মহড়া শুরু করে দিয়েছে৷ এর আওতায় কমপক্ষে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের উপর দিয়ে উড়িয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছে চীনা বাহিনী৷ তবে সেগুলি বায়ুমণ্ডলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ায় সরাসরি কোনো হুমকি সৃষ্টি করে নি বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়৷ চীন এখনো এ বিষয়ে মন্তব্য করে নি৷ বৃহস্পতিবার থেকে চলে আসা এই মহড়ার ফলে তাইওয়ানে চরম অস্বস্তি সৃষ্টি হচ্ছে৷ চীন রোববার দুপুর পর্যন্ত এই মহড়া চালাবে বলে জানিয়েছে৷ এর আগে তাইওয়ানের এত কাছে কোনো সামরিক মহড়া চালায় নি সে দেশ৷
তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী সু সেং-চাং শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, চীন নির্বিচারে সামরিক মহ়ড়া চালিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত জলপথ ধ্বংস করে দিচ্ছে৷ তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে ‘দুষ্ট প্রতিবেশী' হিসেবে বর্ণনা করেন৷ সু বলেন, একাধিক প্রতিবেশী দেশ ও গোটা বিশ্ব চীনের আচরণের নিন্দা করছে৷ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেন, তার দেশ সংঘাত উসকে দেবে না, শুধু সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা জোরালোভাবে রক্ষা করবে৷
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে চীনের নয়টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে পাঁচটি সে দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকার উপর পড়েছে৷ ফলে সে দেশ কূটনৈতিক পথে চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ উল্লেখ্য, জাপানের দক্ষিণের দ্বীপগুলি তাইওয়ানের অত্যন্ত কাছে অবস্থিত৷ পেলোসির সফরের সময়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, চীনের ব্যালিস্টিক মিসাইল জাপানের জলসীমার কাছে পড়ায় জাপানের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে৷
চীন অবশ্য তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ককে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে এবং এ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে৷ চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বর্তমান উত্তেজনার জন্য তাইওয়ান ও অ্যামেরিকাকে দায়ী করে বলেন, এই দুই দেশের যোগসাজশের কারণে তাইওয়ান বিপর্যয়ের পথে এগোচ্ছে৷
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে চীনের সামরিক মহড়াকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন' আচরণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে৷ তবে আগামী কয়েক দিনেও চীন এমন মনোভাব দেখিয়ে যাবে বলে ওয়াশিংটন মনে করছে৷
তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে চলছে মহড়া। মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে জাপানের সমুদ্রেও।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture allianceমার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে এলে তার ফল ভালো হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল চীন। এবার কার্যত তাইওয়ান ঘিরে ধরে তারা সামরিক মহড়া শুরু করেছে। চীনের দাবি, রুটিন সামরিক মহড়া চলছে। কিন্তু যেভাবে তারা এই মহড়া শুরু করেছে, তাতে চিন্তিত তাইপেই।
ছবি: Issei Kato/REUTERSবৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টা থেকে চীন এই মহড়া শুরু করেছে। জল, স্থল এবং আকাশে মহড়া চলছে। একের পর এক যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর উপর দিয়ে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে উড়ে গেছে। যুদ্ধ জাহাজ কার্যত ঘিরে রেখেছে তাইওয়ানকে। তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধজাহাজ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Hong Wei /Xinhua/IMAGOনৌ এবং স্থলসেনা লাগাতার গোলাবারুদ ছুঁড়ছে বলে অভিযোগ। একের পর এক ব্যালেস্টিক মিসাইলও তাইওয়ান প্রণালীতে সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সামান্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই তা তাইওয়ানের মূলভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে। তাইওয়ান প্রমালী চীনের মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানকে আলাদা করেছে।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture allianceমহড়ায় নেমেছে চীনের স্থলসেনাও। চীন লিবারেশন আর্মি অবশ্য জানিয়েছে, এটি তাদের রুটিন মহড়া। মূল ভূখণ্ড থেকে সমুদ্র লক্ষ্য করে মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছে।
ছবি: CCTV/AP/picture allianceঅন্যদিকে জাপানের অভিযোগ, সমুদ্রে অবস্থিত জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোনে প্রপেলড মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বস্তুত, তাইওয়ান থেকে জাপানে গেছেন ন্যান্সি পেলোসি। তার যাত্রার অব্যবহিত পরেই ওই মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বুঝিয়ে দিয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের জবাবেই তারা একাজ করছে।
ছবি: Hector Retamal/AFPতাইপেই জানিয়েছে, তাইওয়ানের উপর দিয়েও মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। তাইওয়ান পার করে যা জলে গিয়ে পড়েছে। গোটা তাইওয়ানে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
ছবি: Hector Retamal/AFPসম্প্রতি তাইওয়ান সফরে গেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার পেলোসি। গত ২৫ বছরে এই পদমর্যাদার কোনো মার্কিন রাজনীতিক তাইওয়ানে যাননি। বস্তুত, তাইওয়ানের সঙ্গে অ্যামেরিকার সুসম্পর্ক থাকলেও দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাইওয়ান স্বশাসিত একটি অঞ্চল। চীনের একাধিপত্য তারা মেনে নেয় না। গত কয়েক বছরে চীন তাইওয়ান এবং হংকংয়ের উপর চাপ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পেলোসির তাইওয়ান সফর।
ছবি: Kyodo/dpa/picture allianceচীন আগেই জানিয়ে রেখেছিল, পেলোসি এলে তার ফল ভালো হবে না। চীনের সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে পেলোসি তাইওয়ান যান। তারপরেই ভয়াবহ সেনা মহড়া শুরু করেছে চীন। তাইওয়ানের কার্যত নাকের ডগায় একাজ করা হচ্ছে।
ছবি: EASTERN THEATRE COMMAND/REUTERS এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)