জার্মানিতে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করা এক রাঁধুনি তাঁর রেস্তোরাঁয় কোনো চীনা অতিথি চান না বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ ২০০৪ সালে ঐ শেফ ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পেয়েছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ড্যুসেলডর্ফ শহরে ‘ইম শিফশেন' রেস্তোরাঁয় ১৯৭৭ সাল থেকে কাজ করছেন জ্য-ক্লোদ বুর্গেই৷ করোনার কারণে কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর শুক্রবার থেকে তা খুলেছে৷
এই খবর জানিয়ে নিজের ফেসবুক পাতায় একটি পোস্ট দিয়েছিলেন বুর্গেই৷ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমরা শুক্রবার খুলছি, তবে শুধু বিস্ত্রো খুলছে৷ কোনো চীনা স্বাগত নয়!!!''
এই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়৷ একজন লিখেছেন, ‘‘ইম শিফশেনের লজ্জা পাওয়া উচিত৷'' আরেকজন লিখেছেন, ‘‘বুর্গেই যা বলেছেন তা খুবই বিরক্তিকর৷ একজন ভীরু ও মিথ্যাবাদী৷''
চীনের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার কারণে জার্মানিসহ অনেক দেশেই এশীয়দের বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
সমালোচনা শুরু হওয়ার পর বুর্গেই ইম শিফশেন রেস্তোরাঁর ফেসবুক পাতায় তাঁর করা মন্তব্যের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ তিনি ‘অবিবেচকের মতো কথা' বলেছেন বলে স্বীকার করে নেন৷ তাঁর মন্তব্যটি ঠিকভাবে লেখা হয়নি বলেও দাবি করেন বুর্গেই৷ ‘চাইনিজ' বলতে তিনি চীনা নাগরিক বোঝাননি বলে জানান তিনি৷ এই শব্দ দিয়ে তিনি চীনের ‘একনায়ক' ও ‘স্ট্রংম্যান'দের বুঝিয়েছেন বলে দাবি করেন বুর্গেই৷
‘‘আমি ফরাসি বিপ্লবের একজন সন্তান৷ বিশ্বের একনায়কদের আমি ভালো চোখে দেখি না৷ একনায়কেরা তাদের নাগরিকদের উপর নিপীড়ন চালায় এবং মৃত্যু দিয়ে মানুষকে শাস্তি দেয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘নয়টি দেশের নাগরিক আমাদের রেস্তোরাঁয় কাজ করে৷ আমার স্ত্রী একজন এশীয় এবং আমি নিজে এই দেশে একজন বিদেশি৷
‘‘আমার বিরুদ্ধে অনেক ব্যাপারেই অভিযোগ আনা যেতে পারে, কিন্তু অবশ্যই বর্ণবাদের নয় এবং আমি এটি সমর্থন করি না৷''
বুর্গেইয়ের এই বক্তব্য প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫০০-র বেশি মন্তব্য পড়েছে৷
ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করা বুর্গেই ১৯৭০ সালে স্পেন থেকে জার্মানিতে আসেন৷ তাঁর লেখা দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ ‘জার্মানিতে ফ্রান্সের রান্না বিষয়ক কূটনীতিক' হিসেবে ২০০৪ সালে তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘লিজিয়ন অফ অনার' দেয়া হয়৷
ডেভিস ফানঅপড্রোপ/জেডএইচ
করোনা নজরে রাখার কয়েকটি অ্যাপ
করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপ, সফটওয়্যার, কিউআর কোড ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
অস্ট্রেলিয়া
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ‘কোভিডসেফ’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ এর মাধ্যমে একজন অ্যাপ ব্যবহারকারী আরেকজন ব্যবহারকারীর দেড় মিটার দূরত্বের মধ্যে আসার তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা৷ ব্লুটুথ ওয়্যারলেস সিগন্যালের মাধ্যমে এই তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে৷ একজন ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত কারো সঙ্গে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে থাকলে, সেই তথ্য বার্তা দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
চীন
নাগরিকদের চলাফেরার তথ্য সংগ্রহ করছে দেশটি৷ ‘আলিপে’ ও ‘উইচ্যাট’ অ্য়াপ ব্য়বহারকারীরা ব্যক্তিগত তথ্য, ভ্রমণের ইতিহাস, অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি তথ্য দেয়ার মাধ্যমে একটি কিউআর কোড পেয়ে থাকেন৷ বাসে, ট্রেনে, অফিসে, এমনকি নিজের বাড়িতে ঢুকতে এই কোড স্ক্যান করতে হয়৷ এভাবে হালনাগাদ তথ্য পেয়ে থাকে সরকার৷ কোডের রং সবুজ হলে চলাফেরায় বাধা নেই, হলুদ হলে সাতদিন আর লাল হলে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে যেতে হয় নাগরিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/D. Qing
ইটালি
কেউ করোনা আক্রান্তের স্পর্শে এসেছেন কিনা, সেই তথ্য় জানতে অ্যাপ চালু করতে চায় ইটালি৷ সেজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে৷ শত শত প্রস্তাব জমা পড়েছে৷ শিগগিরই তা চালু হবে৷ তবে এই অ্যাপ ব্যবহার ঐচ্ছিক হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photos/L. Bruno
দক্ষিণ কোরিয়া
‘কোভিড-১৯ স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর মাধ্যমে করোনা রোগী ও যারা কোয়ারান্টিনে আছেন তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ এছাড়া যারা হোম-কোয়ারান্টিন মানছে না ভবিষ্যতে তাদের হাতে ইলেকট্রনিক ব্যান্ড পরানোর চিন্তা করছে দেশটি৷ কেউ এটি না পরলে তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হবে এবং তার খরচ ঐ ব্যক্তিকেই দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
ভারত
করোনা রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধি জানতে ‘আরোগ্যসেতু’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছেন বলে সরকার জানিয়েছে৷ এগারোটি ভাষায় অ্যাপটি চালু হয়েছে৷ এই অ্যাপে করোনা নিয়ে সচেতনতা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সহজে যোগাযোগের উপায়ও বলা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
জার্মানি
আপনি করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছেন কিনা, তা জানাতে অ্যাপল ও গুগল যৌথভাবে একটি সফটওয়্য়ার তৈরি করছে৷ মে মাসে এটি পাওয়া যেতে পারে৷ জার্মানি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে৷ যদিও জার্মানি একই কাজের জন্য নিজ উদ্য়োগে ‘পিইপিপি-পিটি’ নামে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল৷ কিন্তু সমালোচনার কারণে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে৷