চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা
২৩ আগস্ট ২০২৩
জাতিসংঘের তিন বিশেষজ্ঞ গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, চীনে তিব্বতের ১০ লাখের বেশি শিশুকে বিভিন্ন বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে জোরও করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তিব্বতের ঐ শিশুদের চীনের হান সংস্কৃতিতে বড় করে তোলা এই কর্মসূচির লক্ষ্য বলে মনে করছেন ঐ বিশেষজ্ঞরা৷ তারা জানান, স্কুলগুলোতে মান্দারিন ভাষায় লেখাপড়া করানো হয়৷ এছাড়া পাঠ্যসূচিতে তিব্বতের সংস্কৃতির কোনো উল্লেখ নেই৷
তিব্বতে এমন শিক্ষা কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক ও বর্তমান চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, চীনের ‘জবরদস্তিমূলক' নীতি ‘তিব্বতের তরুণ প্রজন্মের মন থেকে তিব্বতের স্বতন্ত্র ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো দূর করতে চায়'৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘আমরা পিআরসি কর্তৃপক্ষকে তিব্বতের শিশুদের সরকার পরিচালিত বোর্ডিং স্কুলে জোর করে ভর্তি করানো এবং দমনমূলক আত্তীকরণনীতি বন্ধ করার অনুরোধ করছি৷''
বিবৃতিতে জাতিসংঘের ঐ তিন বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
চীন কী বলছে?
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ ‘চীন-মার্কিন সম্পর্ককে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে'৷ তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, স্থানীয় শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেনে চীনে বোর্ডিং স্কুল স্থাপন করা হয়৷''
চীনা দূতাবাসের ঐ মুখপাত্র বলেন, ‘‘চীনের জাতিগত সংখ্যালঘু অঞ্চলগুলোতে বোর্ডিং স্কুল ধীরে ধীরে স্কুল পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে৷'' তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধীনে স্কুলগুলো পরিচালিত হওয়ায় জাতিগত সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে যে সমস্যা হত, তারও সমাধান হয়েছে৷
পড়ালেখার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয় ওরা
চীনের ১৫ জন শিশুর কয়েকটি ছবি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে৷ পাহাড়ের ওপরে তাদের বাড়ি৷ স্কুল শেষে বাড়ি ফিরতে মইয়ে চড়ে ৮০০ মিটার ওপরে উঠতে হয় তাদের৷ শিশুদের এমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল থেকে ফেরার দৃশ্য দেখে অবাক না হয়ে পারা যায়!
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jie/VCG
চীন এবং শিক্ষা
বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে, খেলাধুলায়, অর্থনীতিতে বলতে গেলে সবদিকেই দ্রুত উন্নতির পথ ধরে এগিয়ে চলেছে চীন৷ ইউনেস্কোর সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, চীনে শিক্ষার বর্তমান হার ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানে চীনের খ্যাতি অবশ্য প্রাচীন কাল থেকেই৷
ছবি: Getty Images/AFP
অগ্রগতির বিপরীতে
চীনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই৷ তাই কমিউনিস্ট শাসিত দেশটির প্রসঙ্গে দ্রুত উন্নতির বিষয়টির পাশাপাশিই সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters
শিশুমুখগুলো চমকে দিলো...
হ্যাঁ, সেই চীনের গণমাধ্যমেই এসেছে ১৫টি শিশুর এমন এক কিছু ছবি যা দেখে শুধু চীন নয়, বলতে গেলে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষই বিস্ময়ে হতবাক৷ ছবিতে দেখা যায়, ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সি ১৫টি শিশু খাড়া পাহাড়ের গায়ে মই বেয়ে বেয়ে ৮০০ মিটার ওপরের ছোট্ট এক গ্রামে ফিরছে৷ পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের পাহাড়ের ওপরের সেই গ্রামটির নাম আতুলির৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina Tao ge
কৃষকদের ঠকাতে....
৭২টি পরিবার রয়েছে ওই গ্রামে৷ সবাই কৃষিজীবী৷ বাঁশের মই বেয়ে বেয়ে তো আর ফসল নিয়ে নামা সম্ভব নয়৷ আর লোহার মই বা ভালো রাস্তা করার আর্থিক সংগতিও গ্রামবাসীর নেই৷ ভালো রাস্তা হলে চাষিরা ফসল নিয়ে দূরের বাজারে গিয়ে ভালো দামে সেই ফসল বিক্রি করতে পারে ভেবে ফড়িয়ারাও এতদিন সেখানে রাস্তা তৈরি হতে দেয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jie/VCG
এবার হয়তো রাস্তা হবে
চীনের এক ইংরেজি দৈনিকে কয়েকদিন আগেই প্রকাশিত হয় আতুলির গ্রামের শিশুদের মই বেয়ে বেয়ে ৮০০ মিটার ওপরের বাড়ির দিকে যাত্রা করার দৃশ্য৷ গ্রামের আশেপাশে কোনো স্কুল নেই৷ তাই শিশুদের দূরের কোনো স্কুলে যেতে হয়৷ সেই স্কুলের হস্টেল থেোকে সপ্তাহে দু’দিন বাড়ি আসা যায়৷ সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথেই অসম সাহসী শিশুরা ক্যামেরাবন্দি হয়৷ তাদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার রাস্তা নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে৷