চীনা গাড়িতে শুল্ক বাড়ানোর ইইউর ঘোষণার প্রভাব কী হতে পারে?
১৩ জুন ২০২৪
ইউরোপীয় কমিশন বুধবার জানিয়েছে, ৪ জুলাই থেকে চীনা ইলেকট্রিক গাড়ির উপর ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হবে৷ কোম্পানিভেদে শুল্কের হার ভিন্ন হবে৷ বর্তমানে ১০ শতাংশ শুল্ক নিচ্ছে ইইউ৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়ি আমদানির উপর ২৫ শতাংশ কর ধার্য করা আছে৷ সেটি বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হচ্ছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইলেক্ট্রিক গাড়িনির্মাতাদের চীন সরকার অনেক বেশি ভর্তুকি দিয়ে থাকে৷ সে কারণে এই দুই অঞ্চলের গাড়ি নির্মাতারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ছে৷ এছাড়া, তাদের বাজার চীনা গাড়িতে ভরে যাচ্ছে বলেও ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে৷
কিন্তু ইউরোপে চীনা গাড়ির প্রভাব কি আসলেই এত বেশি?
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন বলছে, ইউরোপে চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়ি বিক্রি চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ২৩ শতাংশ বেড়েছে৷
এদিকে, লন্ডনের গাড়িবিষয়ক গবেষণা সংস্থা জাতো ডাইনামিক্স বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলে ইউরোপে ইলেক্ট্রিক গাড়ির বাজারে চীনা কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছিল ২.৩৫ শতাংশ৷ গতবছরের এপ্রিলে হারটি ছিল ২.২ শতাংশ৷
এপ্রিল মাসে ইউরোপের শীর্ষ ১৫টি ইলেক্ট্রিক গাড়ি বিক্রেতার তালিকায় চীনের শুধু একটি কোম্পানির (বিওয়াইডি) নাম ছিল বলে জানিয়েছে জাতো ডাইনামিক্স৷
তবে জাতো ডাইনামিক্সের সিনিয়র অ্যানালিস্ট ফেলিপ মুনোজ সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে লিখেছেন, ইউরোপে চীনা গাড়ির প্রভাব নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এর পরিমাণ এখনও বেশি নয়৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, চীনের ২৪টি ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাতা ইউরোপে সক্রিয় আছে৷ কিন্তু ইউরোপের মতো ‘অনেক কঠিন বাজারে' সবাই সফল হতে পারবে না৷ ‘‘ইউরোপের মানুষ এসব ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানে না৷ এছাড়া মানুষ এখনও মনে করে চীন নিম্নমানের পণ্য তৈরি করে৷ চীন সম্পর্কে এমন ধারনা পরিবর্তিত হতে অনেক সময় লাগবে,'' বলেন তিনি৷
প্রতিশোধ নেবে চীন?
চীনের সপ্তম বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা গ্রেট ওয়াল মোটর গত সপ্তাহে জার্মানির মিউনিখে তাদের ইউরোপীয় সদরদপ্তর বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে৷ এটি কি, বিক্রি ভালো হচ্ছে না সে কারণে, নাকি ইইউ যে চীনা গাড়ির উপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছিল তার প্রতিশোধ, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
গ্রেট ওয়াল মোটরের সাবসিডিয়ারি এসভল্ট জার্মানিতে ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির কারখানা নির্মাণ করতে চেয়েছিল৷ গতমাসে সেই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়৷ বড় এক ক্রেতা অর্ডার বাতিল করায় এই সিদ্ধান্তে নেওয়া হয় বলে এসভল্ট জানিয়েছে৷ তবে জাতো ডাইনামিক্সের মুনোজ ডিডাব্লিউকে বলেন, এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে৷ ইইউর শুল্ক পরিকল্পনা নিয়ে বেইজিং খুশি নয়৷ ‘‘সে কারণে আমরা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা আশা করতে পারি,'' বলেন তিনি৷ উল্লেখ্য, গত অক্টোবর মাসে চীনা ভর্তুকি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল ইইউ৷
গত ডিসেম্বরে চীনের আরেক কোম্পানি সিএটিএল জার্মানিতে ব্যাটারি তৈরির কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করেছিল৷ ঐ কোম্পানি এখন হাঙ্গেরিতে তার দ্বিতীয় কারখানা তৈরি করছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও হাঙ্গেরির মধ্যে সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে৷
অবশ্য জাতো ডাইনামিক্সের মুনোজ আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপে ইলেক্ট্রিক গাড়ির বাজার এখনও সরকারের প্রণোদনার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল৷'' ইলেক্ট্রিক গাড়ি কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহী করে তুলতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভর্তুকি দিয়ে থাকে৷ তবে এখন এগুলো তুলে নেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া, ব্যাটারি দিয়ে গাড়ি বেশি দূর পর্যন্ত চালানো যায় না এবং ইলেক্ট্রিক গাড়ির রিসেল মূল্য কম বলে মনে করেন অনেক ইউরোপীয় ক্রেতা৷ এসব কারণও চীনের গাড়ি ও ব্যাটারি নির্মাতাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে৷
প্রসার বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে
চীনের অন্য গাড়ি নির্মাতার অবশ্য ইউরোপে ব্যবসা প্রসারের পরিকল্পনা করছে৷ যেমন নিও কোম্পানি সম্প্রতি আমস্টারডামে নতুন শোরুম উদ্বোধন করেছে৷
এক্সপেং কোম্পানি সম্প্রতি জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ঢোকার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে৷ বর্তমানে তারা নর্ডিক অঞ্চল ও নেদারল্যান্ডসে সক্রিয় আছে৷
নিক মার্টিন/জেডএইচ