অ্যামেরিকা চাইলেও লাদাখ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। পারলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান আরো আগেই হতো।
বিজ্ঞাপন
উপমহাদেশের সাম্প্রতিক সংঘাতে ভারতের পাশে থাকবে অ্যামেরিকা। চীনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ কথা বলে গেলেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেও। চীনও তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বলেছেন, ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো পক্ষের অবস্থান তারা মানবে না। প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এ সব কথার আদৌ কি কোনো গুরুত্ব আছে? যদি থাকতো, তা হলে অনেক সমস্যারই সমাধান হতে পারতো অনেক সহজে, অনেক আগেই।
ইতিহাসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ঢুকে লাভ নেই। তথ্য সকলেরই জানা। কিন্তু ইতিহাসের ট্রেন্ডটুকু ফলো করলেই স্পষ্ট হয়, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। জাতিসংঘ কম মধ্যস্থতার কথা বলেনি। কিন্তু গত ৭০ বছরে সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি, বরং পরিস্থিতি নানা সময়ে আরও জটিল হয়েছে।
ভারত-চীন সংঘাতও নতুন কিছু নয়। ষাটের দশকে দুই দেশের মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধ হয়েছে। সত্তরের দশকেও দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে একের পর এক স্ট্যান্ডঅফের ঘটনা ঘটেছে সীমান্তে। বর্তমানে লাদাখ সীমান্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত জটিল কিন্তু অভূতপূর্ব বা নজিরবিহীন নয়।
চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কত এগিয়ে
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে বলেছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত৷ যুদ্ধ কখনো কাম্য নয়৷ তবু দেখে নেয়া যাক সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷
ছবি: APTN
সক্রিয় সেনাসদস্য
১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও চীন এগিয়ে৷ চীনের ৩২১০টির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Li Jianshu
যুদ্ধজাহাজ
চীনের ৭৭৭টি আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP
যুদ্ধবিমান
চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি৷ চীনের ১২৩২টি আর ভারতের ৫৩৮টি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/J. Singh
ট্যাঙ্ক
ভারতের ট্যাঙ্ক চীনের চেয়ে অনেক বেশি৷ চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাঙ্ক আর ভারতের ৪২৯২টি৷ ওপরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ মহড়ার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Grits
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের আট হাজার ৬৮৬৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Z. Hesong
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দু দেশের তুলনাই হয় না৷ চীনের আছে ৩৮০০, ভারতের মাত্র ২৩৫৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে ভারত কিছুটা এগিয়ে৷ চীনের ৩৮০০-র বিপরীতে তাদের রয়েছে ৪০৬০টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
রকেট প্রজেক্টর
চীনের ২৬৫০, ভারতের ২৬৬৷ সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
সাবমেরিন
সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে৷ চীনের ৭৪টির বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের ২টি, ভারতের ১টি৷
ছবি: picture-alliance/newscom/S. Shaver
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি, অন্যদিকে ভারতের ১০টি৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina
ফ্রিগেট
চীনের ৫২, ভারতের তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
রণতরি
রণতরি চীনের ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/Meng Zhongde
বিমানবন্দর
চীনের আছে মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর আর ভারতের ৩৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গার মতো এখানেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের চেয়ে এগিয়ে৷ চীনের২২টির বিপরীতে তাদের রয়েছে মোট ১৩টি বন্দর ও টার্মিনাল৷
ছবি: picture-alliance/Costfoto/Yu Fangping
ভারতের বহরে রাফাল
২০১৬ সালে ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোট ৩৬টি বিমান ফ্রান্সের থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার ভারতে পৌঁছেছে নতুন পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। সেগুলোকে লাদাখে পাঠানোর কথা রয়েছে৷ চীন-ভারত সংঘাতের কারণে আপাতত সেখানেই রাখা হবে বিমানগুলিকে। এরপর আসবে হ্যামার মিসাইলও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Indian Air Force
21 ছবি1 | 21
বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কী ঘটল? চীনের একাধিক অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ করে দিল মোদী সরকার। রাতারাতি বদলে দেওয়া হলো আইপিএলের টাইটেল স্পনসরকে। চীনের একটি মোবাইল কোম্পানির পরিবর্তে ভারতের একটি সংস্থাকে সেই জায়গা হলো। অন্য দিকে, প্রায় প্রতিদিন দুই দেশ পরস্পরকে দোষারোপ করে উচ্চকিত মন্তব্য করছে। দুই দেশের সংঘাত আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি দুই দেশের সম্পর্ক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে? আদৌ কি তা সম্ভব?
ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ২০০৫ সাল থেকে দেখলে গত ১৫ বছরে এই প্রথম দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খানিকটা হলেও হোঁচট খেয়েছে। আমদানি এবং রপ্তানি দুই ক্ষেত্রেই পতন হয়েছে। কিন্তু সেই পতন তিন শতাংশের বেশি নয়। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, চলতি অর্থ বছরে আরো পতনের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু তা কখনোই দশ শতাংশের বেশি হবে না বলে তাঁদের ধারণা। দশ শতাংশ কম নয়। কিন্তু ভারত এবং চীনের সার্বিক বাণিজ্যিক অঙ্কের নিরিখে তা নেহাতই মামুলি। মনে রাখা দরকার, কেবল সংঘাত নয়, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পতনের ক্ষেত্রে করোনাও একটি বড় কারণ।
ভারত-চীন সংঘাতের কাহিনি
ভারত ও চীনের মধ্যে একবারই যুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৬২ সালে। কিন্তু তার আগে ও পরে অনেকবারই সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এই দুই দেশ। সেই সংঘাতের কাহিনি দীর্ঘ এবং রক্তাক্ত।
ছবি: Getty Images/Three Lions/Radloff
তিব্বত থেকে শুরু
চীন তিব্বতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলো ১৯৫১ সালে। তার আট বছর পরে চতুর্দশ দলই লামা পালিয়ে ভারতে আসেন। ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়। চীন তার বিরোধিতা করে। তারপর শুরু হয় সীমান্তে দুই সেনার সংঘর্ষ।
ছবি: AP
একমাত্র যুদ্ধ
সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে প্রচুর। কিন্তু যুদ্ধ একবারই। ১৯৬২ সালে এক মাস এক দিনের লড়াইয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে পড়ে চীন। অরুণাচল প্রদেশে ও লাদাখের ভিতরে। ভারত ছিলো অপ্রস্তুত। চীন সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলো।
ছবি: Getty Images
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা
ভারত ও চীনের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। সহজভাবে বললে, যুদ্ধের পর দুই দেশের সেনা যেখানে অবস্থান করছে, সেটাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা।
ছবি: Getty Images
নাথু লা পাসে সংঘর্ষ
পাঁচ বছরের মধ্যে অবস্থা বদলে গেলো। ১৯৬৭-র ১১ সেপ্টেম্বর চীনা সেনা নাথু লা-য় ভারতীয় পোস্ট আক্রমণ করে। পাঁচ দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। এ বার ভারত ছিলো সুবিধাজনক অবস্থায়। তারা চীনা সেনাকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। সংঘর্ষ হয় চো লা-তেও।
ছবি: Diptendu Dutta/AFP/Getty Images
বছর কুড়ি পরে
আবার উত্তেজনা ২০ বছর পরে, সামডরং উপত্যকায়। ভারত তখন অপারেশন চেকারবোর্ড চালাচ্ছিলো। কত তাড়াতাড়ি আসাম থেকে সীমান্তে সেনা পৌঁছনো যায় তা নিয়ে। সেখান থেকেই উত্তেজনা। দুই দেশের সেনা সামনাসামনি। তবে সংঘর্ষ হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ডোকলামে ৭৩ দিন
এ বার বিরোধ ২০১৭-তে, ডোকলামে। ভারত, ভূটান ও চীনের সীমান্তে। চীনের সেনা একটা রাস্তা বানাতে থাকে। ভারতীয় সেনাও বুলডোজার নিয়ে চলে যায় তা থামাবার জন্য। সেই সংঘাত ৭৩ দিন চলে। অবশেষে কূটনৈতিক আলোচনার পর বিরোধ মেটে।
ছবি: AP
আবার সংঘর্ষ
এ বার ২০২০-তে। আবার লাদাখ। প্রথমে দুই সেনার হাতাহাতি লড়াই। সিকিমেও একই ঘটনা ঘটলো। চীনের প্রেসিডেন্ট বললেন, তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তারপর ভারত ও চীন দুই পক্ষই সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেছে। দুই দেশই প্রচুর কামান ও গোলাবারুদ নিয়ে গিয়েছে।
ছবি: Eesha Kheny
চীনের দাবি
চীন দাবি করে অরুণাচল প্রদেশ তাঁদের এলাকা। বিশেষ করে তাওয়াং শহর। অরুণাচলের লোকের চীনে যেতে ভিসা লাগবে না। ভারত জানায়, অরুণাচল তাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
ছবি: picture-alliance/dpa/dinodia
আকসাই চীন
ভারতের দাবি, আকসাই চীন তাদের এলাকা। চীন জবরদখল করে রেখেছে। ১৯৬২ থেকেই এ নিয়ে বিরোধ চলছে। এখানে কোনও মানুষের বসতি নেই। কিন্তু সামরিক দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
নরমে-গরমে
ভারত ও চীনের সম্পর্ককে বলা হয় ব্লো হট, ব্লো কোল্ড রিলেশন বা নরমে-গরমের সম্পর্ক। মাঝে মাঝেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা হয়। আবার শান্তি আসে। দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। দুই দেশের সেনা শক্তিশালী। তাই তা আর যুদ্ধের দিকে যায় না।
ছবি: Reuters/Handout
10 ছবি1 | 10
ভারতে এখনো ঢালাও চীনের জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। লোকে তা যথারীতি কিনছেও। তার উপর ভারত ডাব্লিউটিওতে চুক্তির বন্ধনে বাঁধা পড়ে আছে। ফলে চীনের জিনিস দেশে আসা বন্ধ করা যাবে না। আর চীনা জিনিসের দাম কম। ফলে মানুষ এই আর্থিক টানাটানির সময়ে নিজের পকেটের কথা চিন্তা করলে তাদের দোষ দেয়া যায় কি?
চীন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক দেশ। প্রতি বছর প্রায় আশি বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা হয় দুই দেশের মধ্যে। ভারতের বিশাল বাজার চীন কখনোই হেলায় হারাতে চায় না। চলতি সংঘাতের সময়েও দুই দেশ বার বার সে কথা স্বীকার করেছে এবং যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।
আসলে খেলাটা রাজনৈতিক। গোটা বিশ্বেই ন্যাশনালিস্ট বা জাতীয়বাদী রাজনীতির জোয়ার চলছে। চীনের সঙ্গে সংঘাতকে সামনে রেখে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার 'আত্মনির্ভর' ভারতের জাতীয়বাদী রাজনীতি মানুষের মনে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করছে। খানিক সফলও হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। তাতে সার্বিক ভাবে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক কি খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষ্যণ দেখা যাচ্ছে না। ঠিক যেমন ষাটের দশকের যুদ্ধের পরেও হয়নি। একই কাজ করছে চীনও। সীমান্তে শক্তি প্রদর্শন করে দেশের মানুষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অ্যামেরিকাও পিছিয়ে নেই। ট্রাম্প সরকার গত চার বছর ধরে এই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জুতো পায়ে দিয়েই দেশ চালিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার সংঘাতও তৈরি হয়েছে সেই জায়গা থেকেই। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সকলেই নিজের শক্তি জাহির করতে চায়। এই মুহূর্তে অ্যামেরিকা এবং চীন ঠিক সে কাজটিই করে যাচ্ছে। ক্ষমতা প্রদর্শনের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দুই দেশ নিজেদের ব্লক তৈরি করার চেষ্টা করছে। এবং সে কারণেই অ্যামেরিকার পাখির চোখ এখন এশিয়া প্যাসিফিক। সেখানে চীনের অবিসংবাদিত ক্ষমতা কমানোর জন্য অ্যামেরিকা ভারতকে সঙ্গী করার খেলায় নেমেছে। তারই ফল পম্পেও-র ভারতকে সাহায্য করার উবাচ। ৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের পরে তার আদৌ কোনো স্থায়িত্ব থাকবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত, ভারত এবং চীন যতই হুমকি দিক, পুরো দস্তুর যুদ্ধের এই মুহূর্তে কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে অ্যামেরিকা চাইলেও লাদাখ সংকটে মধ্যস্থতা করার জায়গায় থাকবে না। ভারত চাইলেও পারবে না। যদি পারতো, তা হলে লাদাখ এবং অরুণাচল নিয়ে দুই দেশের বিতর্ক অনেক আগেই সমাধান সূত্রে পৌঁছতো।
আসলে কিছুই বদলায় না। বদলালে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলবে কী করে? তবু বদলের কিছু ভার্চুয়াল ছবি তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষের চোখের সামনে। বিভিন্ন সময়ে সেই ছবি মানুষের ভাবাবেগে পরিবর্তন আনে। ভোট হয়। সরকার বদল হয়। তারপর আবার সব আগের মতোই চলতে থাকে। ওই যে কবি লিখেছিলেন না, 'রাজা বদলায়, দিন বদলায় না।'