1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়ে জটিলতা কেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশে চীনের সিনোভেক বায়োটেক কোম্পানির করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দোটানায় এ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা৷

China Corona-Pandemie | Sinopharm
ছবি: picture-alliance/Photoshot

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল৷ তারা সমস্ত প্রস্তুতিও সেরেছে বলে জানা গেছে৷ এমনকি ঢাকার চীনা রাষ্ট্রদূত ট্রায়াল টিকা গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হতে চেয়েছেন৷ তবে এই প্রক্রিয়া এখন স্তিমিত হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য সচিবের মন্তব্যে৷ বিষয়টি নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখার পক্ষে তারা৷ অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এথিক্যাল কমিটির অনুমোদনের পর তার আর কোন প্রয়োজন পড়ে না৷ এর ফলে বরং বাংলাদেশ সহজে ভ্যাকসিন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে৷

চীনের যে দুইটি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে যেতে পেরেছে তার একটি সিনোভেক৷ প্রাথমিক ধাপগুলো অতিক্রম করে এর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে ব্রাজিলে৷ সেই সঙ্গে বাংলাদেশেও তারা বড় আকারের পরীক্ষা চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করে৷ বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) গত ১৯ জুলাই এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য নৈতিক (এথিক্যাল) অনুমোদন দেয় ৷ সংস্থার পরিচালক মাহমুদ উজ জাহান তখন জানান, ‘‘তিন সপ্তাহের মধ্যে ট্রায়াল শুরু হতে পারে এবং শেষ হতে ১৮ মাস লাগবে৷’’

তবে জানা গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন অবস্থানে বিষয়টি নিয়ে আপাতত আর এগুচ্ছে না আইসিডিডিআর,বি৷ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী চীনের সিনোভেক কোম্পানির সাথে তারা চুক্তিও চূড়ান্ত করেনি৷ এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পরই পদক্ষেপ নিতে চায় তারা৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এথিক্যাল কমিটির অনুমোদনের পর আইসিডিডিআর,বি ট্রায়ালের জন্য চীন থেকে টিকা আনতে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন চাইলেও এখনো তা মেলেনি৷ যদিও এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি৷

ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়ে এই জটিলতার শুরু বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর বক্তব্য থেকে৷ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘চীনের টিকা দেশে প্রয়োগ হবে কি না কিংবা হলেও তা কবে নাগাদ হবে, সে ব্যাপারে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে৷’’ তার একদিন আগে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানও বলেছেন, ‘‘টিকার ট্রায়াল দুটি রাষ্ট্রের বিষয়৷ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগবে৷’’

কোভিড-১৯ জাতীয় পরার্শক কমিটির কয়েকজন সদস্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই নেতিবাচক মনোভাবের সমালোচনা করেছেন৷ তারা মনে করেন এতে দেশেরই ক্ষতি হবে৷ ভ্যাকসিন পেতে সমস্যায় পড়বে অথবা উচ্চ মূল্যে কিনতে হবে৷ এরমধ্যে কূটনৈতিক বিষয় থাকতে পারে বলেও মনে করেন কেউ কেউ৷

ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বাজারজাতের সঙ্গে ভারতীয় একটি কোম্পানি যুক্ত আছে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সবচেয়ে এগিয়ে আছে৷ ওই ভ্যাকসিন বাজারজাতের সাথে বিশ্বের যে ১০টি প্রতিষ্ঠান জড়িত তার একটি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া৷ তারা কিন্তু এরইমধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেছে৷ এটা ব্যবসার একটা পলিসি৷ যাতে অনুমোদন পেলে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে দিতে পারে৷ আর না হলে নষ্ট করে ফেলে৷’’

‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সবচেয়ে এগিয়ে আছে’: ড. কামরুল হাসান খান

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এখানে সরকারের একটা কূটনৈতিক বিষয় থাকতে পারে৷ সরকারকে তো অনেক সময় স্পেস দিতে হয়৷ কিন্তু আমার কথা হলো চীন বা ভারতীয় যেটাই হোক না কেন আমরা যেন ভ্যাকসিন আগে পাই, কম দামে পাই৷’’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছেন, কোন ভ্যাকসিন আগে আসবে, কোনটা পরে তারা সেটি দেখতে চান৷

কোভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার বিবেচনায় চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া উচিত সরকারের৷ যদি না দেয়া হয় তাহলে আমাদের ক্ষতি হবে এবং ভ্যাকসিন পেতে আমরা পিছিয়ে পড়ব৷ আইসিডিডিআর,বি অনেক দক্ষ প্রতিষ্ঠান৷ তারা আগেও চীনের ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছে৷ নিজেরাও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে৷ তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়৷ তারা বুঝে শুনেই এগিয়েছে৷’’

‘চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া উচিত সরকারের’:নজরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

এই অধ্যাপক মনে করেন, বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালটি হলে সেটি এখানকার পরিবেশে কতটা কার্যকর তা নিশ্চিত হওয়া যেত৷ যারা এরসঙ্গে কাজ করতেন তারাও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেত৷ তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব বলছেন তাদেরও অনুমোদন লাগবে৷ অনুমোদন লাগলে অনুমোদন দেন৷ দেরি করছেন কেন?’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৪ জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭৩ টি উদ্যোগ৷ এর মধ্যে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় পৌঁছাতে পেরেছে তিনটি, যার দুইটি চীনের৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘এখানে অনেককিছু দেখার আছে, সেফটি, সিকিউরিটি, কোনটা আমরা আগে পাবো, কোনটা মোর ইফেক্টিভ হবে কোয়ালিটি ভেদে-সব দেখেই সিদ্ধান্ত হবে৷’’

এর জবাবে বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ ইথিকস কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা যা বলার আগেই বলে দিয়েছি৷ এখন আর নতুন করে কিছু বলতে চাই না৷ আমরা বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে অনুমোদন দিয়েছি৷ এখন বাকিটা তো আর আমরা দেখতে পারব না৷ এথিকস কমিটি সারাবিশ্বেই একইভাবে কাজ করে৷ আমরাও সেই নিয়মে কাজ করেছি৷’’

এর আগে বাংলাদেশে আসা চীনা চিকিৎসক দল সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশকে আগে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা বলেছে৷ তারা এই ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কথাও বলেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ