চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের উদ্ভাবিত টিকা দেয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশে৷ এই ভ্যাকসিনে একাধিক অগ্রাধিকারের কথা বলা হলেও এত অল্প ভ্যাকসিন কতজনকে দেয়া যাবে?
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে মোট চীনা ভ্যাকসিন এসেছে ১১ লাখ ডোজ৷ দুই ডোজ করে মোট সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষকে এই টিকা দেয়া যাবে৷ ভ্যাকসিন দেয়ার প্রথম দিন শনিবার দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে এই টিকা দেয়া হয়েছে৷ তবে তা প্রথমে পাচ্ছেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা৷ এরপর পাবেন যারা প্রবাসী দেশে এসে আটকা পড়েছেন৷ চীনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়রত যেসব বাংলাদেশি ছাত্র এখন দেশে আছেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিক৷ কিন্তু কাদের জন্য এই টিকার মধ্যে কত পরিমাণ টিকা রাখা হয়েছে তার খবর দিতে পারছেন না কেউই৷
চীনা টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে আগেই শুরু হয়েছে৷ শনিবার থেকে তা পুরোমাত্রায় দেয়া শুরু হলো৷ আগেই যারা নিবন্ধন করেছেন তারা টিকা পাবেন৷ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ চারটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র মাহদী হাসান নিলয় জানান, যাদের পরীক্ষা আছে তাদের রোল নাম্বার দেখে নিশ্চিত হয়ে টিকা দেয়া হচেছ৷ তাদের অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন লাগছে না৷ তিনি নিজেও শনিবার টিকা নিয়েছেন৷
ডা. নাজমুল ইসলাম
এদিকে টিকা নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য চালু করা ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ আছে৷ শনিবার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি৷
ঢাকায় অবস্থানরত চীনা নাগরিক ও চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশুনা করেন এমন বাংলাদেশি ছাত্র যারা দেশে এসে আটকা পড়েছেন তাদের জন্য ৩৬ হাজার টিকা আলাদা করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
এর আগে ট্রায়াল পর্যায়ে দুই হাজার ৬৬২ জনকে চীনা টিকা দেয়া হয়েছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, ‘‘এখন মেডিক্যাল ও নার্সিং স্টুডেন্টরা চীনা ভ্যাকসিন পাচ্ছেন৷ অগ্রাধিকারের তালিকায় যারা আছেন তারাও পাবেন৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে তো মাত্র ১১ লাখ ভ্যাকসিন আছে৷ সেই ভ্যাকসিন থেকে যত জনকে দেয়া যায়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘অগ্রাধিকারের একটি তালিকা আমাদের কাছে আছে৷ তবে সেই তালিকার সবাই যে এই দফায় ভ্যাকসিন পাবেন তা নিশ্চিত নয়৷ আর নতুন রেজিষ্ট্রেশন এখনো বন্ধ আছে৷ কবে শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়৷’’
সব মিলিয়ে চীনা ভ্যাকসিন খুব বেশি মানুষকে দেয়া যাচেছ না৷ চীন থেকে প্রথম পর্যায়ে দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনে আনা হলে ব্যাপক ভিত্তিক টিকা দেয়া যাবে৷ আর ফাইজারে এক লাখ ডোজ টিকা এখনো দেয়া শুরু হয়নি৷ শুরু হলে তা তাপমাত্রার কারণে তেজগাঁও ও আশপাশের এলাকায় দেয়া যাবে৷
বাংলাদেশে এখনো ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন টিকার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করে টিকা নেয়ার অপেক্ষায় আছেন৷ এর আগে অক্সফোর্ডের টিকা দেয়া হয়েছে মোট ৯৯ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৫ ডোজ৷ এরমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন, আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩০ জন৷
করোনার ভারতীয় রূপ কতটা ভয়ংকর?
প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা থাকতে পারে৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
বি.১.৬১৭
এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি৷ দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কীনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ তবে সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
কখন থেকে?
গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়৷ ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদলেছে বলে সেসময় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ বদলেছে৷ জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্য অনুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭৷
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কতটা উদ্বেগের?
প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো৷ দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে৷ এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি৷
ছবি: picture-alliance/M. Schönherr
কতটা ছড়িয়েছে?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যাচ্ছে৷ শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও৷ জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে৷
ছবি: Xavier Galiana/AFP
মানবদেহে কী করছে?
একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে৷ বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: AFP/National Institutes of Health
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রেখেছে৷ অর্থাৎ, তারা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে, তবে এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
বেশি সংক্রামক নয়?
ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য৷ যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে৷ আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মত সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন৷
ছবি: PAWAN KUMAR/REUTERS
উপাত্ত কী বলে?
জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Pradeep Gaur/ZUMA Wire/imago images
টিকায় কি কাজ হচ্ছে?
অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে৷ তবে এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি৷
ছবি: Anindito Mukherjee/Getty Images
অতিরঞ্জন হচ্ছে?
অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে৷’’ সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার৷