চীনে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে বলে খবর৷ ৩৪ বছর বয়সি সেই ব্যক্তি ভেনেজুয়েলা সফরকালে জিকায় আক্রান্ত হন বলে জানিয়েছে দেশটি৷ এদিকে, বাংলাদেশ সরকার জিকা আক্রান্তদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷
চীনের কর্তৃপক্ষের ধারণা, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুবই কম৷ কেননা সেখানে এ মুহূর্তে প্রচণ্ড শীত এবং মশার তৎপরতাও নেই৷
প্রসঙ্গত, জিকা ভাইরাস এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়৷ এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পহেলা ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ গর্ভবতী নারী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁর অনাগত সন্তানের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং মাথার আকার স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক ছোট হতে পারে৷ জিকা প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে বর্তমানে ব্যাপক গবেষণা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
এদিকে, বাংলাদেশে কেউ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকার তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান৷ বাংলাদেশে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কারো জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া যায়নি, যদিও মশার উৎপাত বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সমস্যা৷
এআই/ডিজি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
জিকা ভাইরাস সম্পর্কে আপনার যা জানা উচিত
বর্তমানে আলোচিত এক ভাইরাস ‘জিকা’৷ ভারত, পাকিস্তানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ এখনও এ থেকে মুক্ত৷ তবে সতর্ক থাকতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Dana
লক্ষণ
জ্বর, ব়্যাশ (চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি), গোঁড়ালিতে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া – জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত এ সব লক্ষণ দেখা দেয়৷ এছাড়া পেশীতে ও মাথায়ও ব্যথা হতে পারে৷ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Almeida
নামকরণের ইতিহাস
‘জিকা’ নামটি নেয়া হয়েছে উগান্ডার জিকা বন থেকে৷ ১৯৪৭ সালে হলুদ জ্বর নিয়ে গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা জিকা বনে একটি খাঁচায় একটি বানর রাখে৷ পরে বানরটি জ্বরে পড়লে তার দেহে একটি সংক্রামক এজেন্টের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়৷ ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয় জিকা ভাইরাস৷ এরপর ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় এক মানুষের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া যায়৷
ছবি: Reuters/R. Paiva
যেসব দেশে ছড়িয়েছে
২০১৫ সাল নাগাদ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য অ্যামেরিকার কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন নাগরিকের শরীরেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷
যেভাবে ছড়ায়
এডিস ইজিপ্টি নামের মশার কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে৷ ফলে মশার কামড় থেকে বাঁচার যে উপায়গুলো আছে সেগুলো মেনে চললেই এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/J. Gathany/Centers for Disease Control and Prevention via AP
গর্ভবতী নারীরা বেশি সাবধান!
সম্প্রতি একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না গবেষকরা৷ তাঁদের কারও মত হচ্ছে, কয়েকটি দেশে শিশুদের ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মা৷ এই রোগ হলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না, ফলে শিশুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া, শারীরিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বা বিলম্বিত হওয়া থেকে শুরু করে অকালে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়৷ বৈজ্ঞানিকভাবে অবশ্য এটি এখনও প্রমাণ করা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Dana
ভ্যাকসিন নেই
এই রোগের চিকিৎসায় এখনও কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি৷ ফলে সতর্ক থাকাটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ৷ অবশ্য এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল৷