চীনের কাছে সামরিক সহায়তা চায় রাশিয়া
১৪ মার্চ ২০২২এর আগে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়াকে সহায়তা করলে চীনকেও কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় হোয়াইট হাউজ৷
কী বলছেন মার্কিন কর্মকর্তারা?
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস রোববার জানায়, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চীনের অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য চীনের কাছে সামরিক সরঞ্জামসহ নানা ধরনের সহায়তা চেয়ে অনুরোধ করেছে রাশিয়া৷
তবে ওয়াশিংটনে চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ পেংইয়ু এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘এমন তথ্য আমার জানা নেই৷'' তবে সাংবাদিকদের কাছে করা মন্তব্যে তিনি ইউক্রেন পরিস্থিতিকে ‘বিশৃঙ্খলাকর' উল্লেখ করে এটিকে ‘বাড়তে দেয়া বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকানোই' চীনের মূল লক্ষ্য বলে জানান৷
চীনের ‘রুশ সংকট'
চীন ও রাশিয়া কেবল প্রতিবেশী রাষ্ট্রই নয়৷ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকসহ নানা দিক থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজোট এই দুই পরমাণু শক্তিধর দুই রাষ্ট্র৷ কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন চীনের জন্যও অস্বস্তিকর এক সংকট বয়ে এনেছে৷
চীনের সংসদীয় কমিটি- ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে বৈঠকে বসেছিল। অধিবেশনের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কাচিয়াং গত শুক্রবার গণমাধ্যমের সামনে আসেন৷ সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে তিনি কী ভাবছেন৷
তিনি বলেন, "ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি গুরুতর এবং চীন এ বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং শোকাহত৷ এখন উত্তেজনা আরো বাড়তে দেয়া বা বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া ঠেকানোই সবচেয়ে গুরুত্বের কাজ।"
তবে রুশ আগ্রাসনের সমালোচনা করেননি, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ককে ‘পাথরের মতো শক্ত' বলেও উল্লেখ করেছিলেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও অভিযোগ করে লি বলেন, এমন পদক্ষেপ বৈশ্বিক অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশের অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক৷ জ্বালানি এবং কাঁচামাল চীনে যাচ্ছে এবং শিল্প পণ্য চীন থেকে রাশিয়া যাচ্ছে। দুই দেশই এমন কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজোট।
কোন পক্ষে চীন?
ইউক্রেন ইস্যুতে বেইজিং ভারসাম্য বজায় রেখে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। একদিকে চীন বরাবরের মতো নিজের নীতি ধরে রেখে সব রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতার ওপর জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে ‘যৌক্তিক' বলেও মন্তব্য করেছেন চীনা কর্মকর্তারা৷
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে চীনের বিরত থাকাই প্রমাণ করে যে দেশটি রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে৷
বন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক মাক্সিমিলিয়ান মায়ার মনে করেন, ‘‘রাশিয়ার ক্ষেত্রে চীনের কাছে ভূরাজনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷'' রাশিয়া শক্তি প্রয়োগের পন্থা বেছে নিলেও শি জিনপিং সমর্থন করছেন, এই বিষয়টিকে ভূরাজনীতিতে বেশ গুরুত্ববহ বলে মনে করেন মায়ার৷
জার্মান মার্শাল ফান্ডের চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু স্মল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে অবস্থান চীনকে বাকি বিশ্ব কিভাবে দেখে তার ওপরও প্রভাব ফেলবে৷ তিনি বলেন, "তারা জানে যে এমন অবস্থানের কারণে তাদেরকে অপরাধী হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তারা জানে যে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাদেরকেও হুমকির অংশ হিসাবে বিবেচনা করা শুরু হয়েছে।"
বিশ্বের নানা দেশের রাজনীতিবিদেরাও এখন তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন৷ স্মল মনে করেন, এর ফলে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ‘চীনের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমিয়ে ভবিষ্য়ত সম্ভাব্য চীনা আগ্রাসন নিয়ে সতর্ক হবে৷' এই সতর্কতা বিশেষ করে তাইওয়ানের ক্ষেত্রে সত্য৷
অন্য নানা স্বার্থও চীনের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্বে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। মায়ার মনে করেন, অর্থনৈতিক দুরবস্থা বা ভাবতে হবে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, "এই সংঘাত ন্যাটোকে শক্তিশালী করে তুলবে৷ যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য থাকবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে। ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোও ভবিষ্যতে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।"
এডিকে/কেএম (এপি, এএফপি)