মঙ্গলবার চীনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিলেন তাইওয়ানের রাষ্ট্রপ্রধান সু সেং-চ্যাং। অভিযোগ, তাইওয়ানের শান্তি নষ্ট করতে চীনের ফাইটার বিমান তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স জোনে ঢুকে পড়ছে। যার ফলে তাইওয়ানকে সর্বক্ষণ সতর্ক বার্তা জারি রাখতে হচ্ছে। তাইওয়ানের এই অভিযোগের পর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন।
চীন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্র৷ পূর্ব এশিয়ার দেশটির সঙ্গে স্থলসীমানা রয়েছে আরো ১৪টি দেশের৷ এদের অনেকের সঙ্গেই সীমানা নিয়ে ঝগড়া রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশটির৷
চীনের দীর্ঘতম সীমানা রয়েছে মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে (৪,৬৭৭ কিলোমিটার)৷ স্থলসীমায় আবদ্ধ মঙ্গোলিয়ার আরেক প্রতিবেশী দেশ হলো রাশিয়া৷ অতীতে বিরোধপূর্ণ ইতিহাস থাকলেও চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে এখন সীমানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই মঙ্গোলিয়ার৷
ছবি: Reuters/B. Rentsendorjরাশিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় দীর্ঘতম সীমানা রয়েছে চীনের৷ তেমন বড় কোনো বিরোধ নেই৷
ছবি: Reuters/H. Wuভারতের সঙ্গে চীনের যৌথ সীমানা তিন হাজার ৩৮০ কিলোমিটারের৷ এর মধ্যে তিনটি অংশ জুড়ে বিরোধ রয়েছে৷ সম্প্রতি লাদাখে সংঘর্ষের যে ঘটনাটি ঘটেছে তা হলো পূর্ব অংশের সীমানায়৷ এছাড়া নেপাল ও ভুটানের সীমানা রয়েছে মাঝখানে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photoবাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে চতুর্থ বৃহত্তম সীমানা রয়েছে চীনের, প্রায় দুই হাজার ১৮৫ কিলোমিটারের৷ অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বে মিয়ানমারও রয়েছে৷ কারণ, সে অংশে তাদেরও সীমানা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaমধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানের সঙ্গে চীনের সীমান্ত এলাকা প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার (১,৫৩৩ কিমি) দীর্ঘ৷ সীমানা বিরোধ বলতে তেমন কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/H. Huhuউত্তর কোরিয়া ও চীনের যৌথ সীমানার দৈর্ঘ্য এক হাজার ৪১৬ কিলোমটার৷ পায়েকতু পর্বত ও জিয়ানদাও এলাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে দু’দেশের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhapমধ্য এশিয়ার আরেক দেশ কিরগিস্তানের সঙ্গে ৮৫৮ কিলোমিটারের সীমানা রয়েছে চীনের৷
ছবি: DW/L. Salm-Reifferscheidtদক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের সীমানা রয়েছে এক হাজার ২৮৩ কিলোমিটারের৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media Co. Ltd/D. Henleyপাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ৫২৪ কিলোমিটারের সীমানা৷ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর নির্ভর করছে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমানা বিরোধের অবস্থা৷
ছবি: Reuters/R. Saeed Khanদক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের সঙ্গে ৪৭০ কিলোমিটারের সীমানা রয়েছে চীনের৷ এর মধ্যে কিছু অংশ নিয়ে বিরোধও আছে৷ ভারতের সঙ্গে চীনের সীমানা বিরোধের জেরও টানতে হচ্ছে ভুটানের৷
নেপালের সঙ্গেও চীনের সীমানা রয়েছে৷ এর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৪৪০ কিলোমিটার৷ কালাপানি এলাকায় নেপাল ও ভারতের মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Shresthaচীন ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ লাওসের মধ্যকার সীমানা প্রায় ৪২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hoelzlমধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানের সঙ্গে চীনের সীমানার দৈর্ঘ্য ৪১৪ কিলোমিটার৷
ছবি: picture-alliance/Photoshotআফগানিস্তানের সঙ্গে সবচেয়ে কম এলাকার সীমানা রয়েছে চীনের৷ মাত্র ৭৬ কিলোমিটারের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Shefayeeদক্ষিণ চীন সাগরে ব্রুনেই, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনামের সঙ্গে সীমানা নিয়ে বিরোধ আছে চীনের৷ এছাড়া পূর্ব চীন সাগরেও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক এলাকা নিয়ে বিরোধ রয়েছে চীনের৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/M. Xiaoliang তাইওয়ানের অভিযোগ, সোমবার ৫৬টি চীনের ফাইটার বিমান তাদের এয়ার ডিফেন্স জোনে ঢুকে পড়ে। গত সেপ্টেম্বর থেকেই বার বার চীন এই ধরনের কাজ করছে বলে তাইওয়ানের অভিযোগ। তবে সোমবার সবচেয়ে বেশি বিমান তাইওয়ানে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। সু সেং-চ্যাংয়ের বক্তব্য, ''গোটা বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে, চীন কীভাবে তাইওয়ানের শান্তি বিঘ্নিত করছে। এরপর এমন হলে তাইওয়ান জবাব দিতে বাধ্য হবে।'' তার আরো বক্তব্য, স্বাধীন তাইওয়ান দ্বীপ চীন দখল করার চেষ্টা করলে গোটা বিশ্বে তার পরিণাম কী হবে, তা সকলেই জানে। চীনেরও তা মনে রাখা উচিত।
তাইওয়ানের এই অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির পাশে থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। এক বিবৃতিতে অ্যামেরিকা জানিয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যেভাবে শান্তি নষ্ট করছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাইওয়ানকে সবরকমভাবে সাহায্য করা হবে। বস্তুত, তাইওয়ানকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র দেয় অ্যামেরিকা।
জাপানও জানিয়েছে, পুরো পরিস্থিতির উপর তারা নজর রাখছে। তাইওয়ানের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তা তারা দেখছে। ফ্রান্স জানিয়েছে, এই সপ্তাহেই তারা একটি প্রতিনিধি দল তাইওয়ানে পাঠাবে।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তাইওয়ান নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। দুইজনেই তাইওয়ান চুক্তি মেনে চলার কথা বলেছেন। ফলে তিনি মনে করেন না, চীন সেই চুক্তি লঙ্ঘন করবে। তবে চীন তা লঙ্ঘন করলে অ্যামেরিকাও যে চুপ করে বসে থাকবে না, তা কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন জো বাইডেন।
চীনের 'ওয়ান চীন' নীতির বিষয়ে বাইডেনের মন্তব্য, ''চীনের ওই নীতি তাইপেই গ্রহণযোগ্য মনে করে বলে তিনি মনে করেন না।'' বাইডেনের কথায় স্পষ্ট, তাইওয়ানকে সমর্থন দিচ্ছে ওয়াশিংটন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)