করোনা ছড়াচ্ছে। তাই সাংহাইতে দুই পর্বে নয়দিনের লকডাউন চালু করলো চীন।
বিজ্ঞাপন
দুই বছর আগে করোনা শুরুর পর থেকে উহান পুরো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আরো কিছু শহরে ও প্রভিন্সে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সাংহাইয়ের মতো বড় শহর পুরোপুরি বন্ধ রেখে লকডাউন করা হয়নি। কিন্তু এবার হলো। শহর বন্ধ রেখে কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা করবেন।
গত এক মাস ধরে সাংহাইতে করোনা সমানে ছড়াচ্ছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক মাপদণ্ডে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যে খুব বেশি তা নয়। তা সত্ত্বেও এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পশহর বন্ধ রেখে করোনা পরীক্ষা করা হবে।
সাংহাইতে দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। এতদিন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এখানে লকডাউন জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে এবার নেয়া হলো। রাস্তায় যানবাহন চলবে না। কারখানা ও অফিস বন্ধ থাকবে। বাড়ি থেকে কাজ করা যেতে পারে। করোনার মোকাবিলার জন্য এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করার জন্য শহরের মানুষকে আবেদন জানানো হয়েছে।
দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় করোনা মহামারিতে চীন
চীনের কয়েকটি শহরে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউন দেয়া হয়েছে৷ গত দুই বছরের মধ্যে দেশটি সবচেয়ে বড় করোনা মহামারি দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP
ওমিক্রনের প্রভাব
বিশ্বে চীনে প্রথম করোনার প্রকোপ শুরু হলেও লকডাউন, গণহারে করোনা পরীক্ষা, কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু সম্প্রতি দেশটিতে করোনার ওমিক্রন সংস্করণের প্রভাব দেখা যাচ্ছে৷ ফলে গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় করোনা মহামারিতে পড়েছে চীন৷
ছবি: Liau Chung-ren/ZUMA Wire/imago images
প্রথম মৃত্যু
এক বছরেরও বেশি সময় পর গত শনিবার চীনে করোনায় দুজনের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে৷ ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে এ বছরের ১৮ মার্চ পর্যন্ত আট লাখ ১৮ হাজার ৬১২ জন করোনায় আক্রান্ত হন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছে চীন৷ এই সময়ে ১০ হাজার ৬২৫ জন মারা যান৷
ছবি: Tyrone Siu/REUTERS
সংক্রমণ কম হলেও কঠোর সিদ্ধান্ত
রোববার চীনে চার হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হন৷ বৈশ্বিক বিবেচনা ও চীনের ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা বিচার করলে এই সংখ্যাটি খুবই কম৷ তারপরও করোনার প্রসার ঠেকাতে কঠোর সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন৷ ফলে বিভিন্ন শহরের লাখো মানুষ এখন লকডাউনের মধ্যে আছেন৷
ছবি: Shao Rui/Xinhua/AP/dpa/picture alliance
লকডাউনে জিলিন
রোববার চীনের নতুন সংক্রমিতের দুই-তৃতীয়াংশের বাস জিলিন রাজ্যে৷ এই রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জিলিনের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ সোমবার রাত থেকে তিনদিনের জন্য লকডাউনে থাকবেন৷ জিলিন রাজ্যটি রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার কাছে অবস্থিত৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: Tao Ming/Xinhua/AP/picture alliance
দুইদিনে একবার বের হওয়ার অনুমতি
জিলিন রাজ্যের রাজধানী চ্যাংচুনে ৯০ লাখ মানুষের বাস৷ ১১ মার্চ থেকে সেই শহরের বাসিন্দারা খাবার কিনতে প্রতি দুই দিনে একবার ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন৷ এই নিষেধাজ্ঞা তিন দিনের জন্য আরও কঠোর করা হবে বলে শনিবার শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ ১৫ মার্চের ছবিতে চ্যাংচুনের বাসিন্দাদের করোনী পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Zhao Dandan/IMAGO
শেনজেনে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে
চীনের কয়েকটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানি শেনজেনে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ বাস করেন৷ সপ্তাহখানেক আগে সেখানে লকডাউন (ছবি) দেয়া হয়েছিল৷ সোমবার থেকে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হয়েছে৷ গণপরিবহন চলতে দেয়া হচ্ছে৷ কিছু প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP
সাংহাইয়ে কঠোর ব্যবস্থা
চীনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইতে টানা চতুর্থ দিনের মতো উপসর্গহীন করোনার সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে৷ রোববার সেখানে ২৪ জনের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা গেছে৷ আর উপসর্গ নেই এমন সংক্রমণ দেখা গেছে ৭৩৪ জনের মধ্যে৷ এই অবস্খায় সেখানে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ আবাসিক এলাকায় করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷
ছবি: Xinhua/Li Ziheng/picture alliance
সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের লকডাউন
সাংহাইয়ের বিভিন্ন আবাসিক এলাকাগুলো করোনার প্রসার রুখতে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু এলাকায় মানুষজনকে দুই সপ্তাহ লকডাউনে থাকতে বলা হয়েছে৷ আর কিছু এলাকার মানুষ বলছে, কতদিন তাদের ঘরে থাকতে হবে সেটা জানানো হয়নি৷ ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: Chinatopix/AP Photo/picture alliance
8 ছবি1 | 8
এর আগে চীনে একটা গোটা এলাকা লকডাউন হয়েছে। কিন্তু মানুষ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে পেরেছেন। সাংহাইয়ের জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আজ পর্যন্ত সাংহাইয়ের মতো এত বড় শহরে লকডাউন করা হয়নি। তাছাড়া সাংহাই হলো চীনের বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে লকডাউনের প্রভাব অনেক বেশি হতে বাধ্য।
কিন্তু চীন এখন ওমিক্রন ভাইরাসের মোকাবিলায় কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। এতদিন চীনা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছিলেন, অর্থনীতির স্বার্থেই এই শহর চালু রাখা জরুরি। এখন দুই পর্বে লকডাউন ঘোষমা করা হলো। অর্ধেক শহরে এক পর্বে। বাকি অর্ধেকে অন্য পর্বে।
সাংহাইতে শহরের পূবদিকের অংশে সোমবার থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। পশ্চিম অংশে লকডাউন চালু হবে ১ থেকে ৫ এপ্রিল। চীনে অবশ্য অন্য শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও লকডাউন জারি করা হয়েছে।