চীন নিয়ে উদ্বিগ্ন অ্যামেরিকা ও ইইউ। আরো ঘনিষ্টভাবে কাজ করার ব্যাপারে সহমত তারা।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালীতে চীন যেভাবে একতরফা কার্যকলাপ করছে, তানিয়ে উদ্বিগ্ন অ্যামেরিকা ও ইইউ। ওয়াশিংটনে অ্যামেরিকা ও ইইউ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানেই চীনের কার্যকলাপ নয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীন যা করছে, তাতে এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এরপর অ্যামেরিকার ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেটের সঙ্গে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের সেক্রেটারি জেনারেল আলোচনায় বসেন। সেখানে চীনের উইগুর ও তিব্বতের জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে কথা বলেছেন তারা। হংকং-এর স্বশাসন এবং কূটনৈতিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েও কথা হয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ইইউ
ইইউ মিলিটারি স্টাফের ডিরেক্টর জেনারেল জানিয়েছেন, ইইউ ও অ্যামেরিকার মধ্যে সহযোগিতা আরো বাড়ানোর জায়গা আছে। দক্ষিণ চীন সাগরে বেজিং একতরফা ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক আইন যাতে মানা হয়, সেটা দেখা দরকার।
দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধসজ্জা
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বিতর্কিত এলাকাগুলোর একটি দক্ষিণ চীন সাগর৷ এর আশেপাশে দেশগুলো নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে বাড়াচ্ছে নৌবাহিনীর শক্তি৷ অন্য সব দেশ মিলে এই এলাকায় যে পরিমাণ খরচ করে, চীন একাই করে তার চেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Drake
চীনা নৌবহর
দেশটির প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ লিয়াওনিং৷ ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি হয় এটি৷ ১৯৯৮ সালে এটিকে ভেঙে চীনের কাছে বিক্রি করে ইউক্রেন, তারপর ডাইলিয়ান শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি এটিকে আবার তৈরির কাজ হাতে নেয়৷ ২০১২ সালে নির্মাণ শেষে ২০১৬ থেকে এই জাহাজ যুক্ত হয় চীনা নৌবাহিনীতে৷
ছবি: imago/Xinhua
ভিয়েতনামের ‘ব্ল্যাক হোল’
সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে ছয়টি কিলো-ক্লাস সাবমেরিন পাচ্ছে ভিয়েতনাম৷ এর মধ্যে দুইটি ২০১৭ সাল থেকে আছে দেশটির নৌবাহিনীর সাথে৷ পানির তলদেশে নীরবে চলাচল এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন, এ কারণে মার্কিন নৌবাহিনী এই সাবমেরিনের নাম দিয়েছে ‘ব্ল্যাক হোল’৷ এই সাবমেরিন অগভীর পানিতেও চলতে পারে এবং শত্রু জাহাজ বা সাবমেরিন রুখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Vietnam News Agency/AFP/Getty Images
ফিলিপিন্স মূল শক্তি
ফিলিপিন্স নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপের নাম বিআরপি গ্রেগরিও দেল পিলার৷ মার্কিন নৌবাহিনীর তিনটি কোস্ট গার্ড কাটারের একটি পেয়েছে ফিলিপিন্স৷ সর্বপ্রথম এটির ব্যবহার হয় ১৯৬৭ সালে, আধুনিকায়ন হয় ২০১১ সালে৷ ২০১২ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের স্কারবরো শোল নিয়ে চীনা নৌবাহিনীর সাথে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল এই জাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Favila
এশিয়ায় ইউরোপের যুদ্ধজাহাজ
নতুন যুদ্ধজাহাজ কিনে নিজের নৌবাহিনী শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে কেআরআই সুলতান হাসানুদ্দিন নামে সিগমা-ক্লাস করভেট৷ ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডসে তৈরি হয় এই জাহাজ৷ জার্মানিও এই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ সরবরাহ করে৷ মালয়েশিয়ার কস্তুরি-ক্লাস করভেট এবং ব্রুনাইয়ের দারুসসালাম-ক্লাস টহল জাহাজ জার্মানির কারখানায় তৈরি৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Ibrahim
সিঙ্গাপুরের চোরা-জাহাজ
উচ্চপ্রযুক্তির ব্যবহারে এই অঞ্চলে সিঙ্গাপুরের সমতুল্য কেউ নেই৷ ২০০৭ সাল থেকে সিঙ্গাপুর ছয়টি ফরমিডেবল-ক্লাস চোরা-জাহাজ ব্যবহার করে আসছে৷ সহজে অবস্থান সনাক্ত করা যায় না বলে এই ধরনের জাহাজকে চোরা-জাহাজ বলা হয়৷ এর সব কয়টিই তৈরি করেছে ফ্রান্স৷
ছবি: Imago/China Foto Press
এখানেও মার্কিন রণতরী
সত্যিকার অর্থে একমাত্র বৈশ্বিক নৌশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ প্রশান্ত অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে সপ্তম নৌবহর৷ এতে আছে ৫০-৬০টি জাহাজ, ৩৫০টি যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ৬০ হাজার সৈন্য৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থানরত একমাত্র বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস রোনাল্ড রিগান-ও আছে এই রণতরীতে৷ এর অবস্থান জাপানের ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটিতে৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
তিনি বলেছেন, ফ্রান্স হলো প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় বড় শক্তি। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক এই অঞ্চল নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নিউ ক্যালিডোনিয়া সহ বেশ কিছু দেশের প্রশাসন ফ্রান্সের হাতে। গতবছর স্বাধীনতার দাবি নিয়ে নিউ ক্যালিডোনিয়ায় গণভোট হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবি গণভোটে খারিজ হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ফ্রান্সের অধিকারে আছে। তাই দক্ষিণ চীন সাগরে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায় ইইউ।
ইইউ-র সামরিক কর্তা জানিয়েছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে ইইউ একটি মেরিটাইম এরিয়া অফ ইন্টারেস্ট তৈরি করতে চায়। অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে গালফ অফ গিনিতে ইইউ-র উপস্থিতি আছে। সেখানে এরকম একটি পাইলট প্রজেক্ট চলছে। দক্ষিণ চীন সাগরে একই ধাঁচে কাজ করতে চায় ইইউ।
কেন উদ্বেগ
তাইওয়ান নিয়ে এখন অ্যামেরিকা ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, তারা ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তেজনা চান না। বাইডেন বলেছেন, তাইওয়ানকে সুরক্ষা দেয়ার ব্যাপারে অ্যামেরিকা দায়বদ্ধ।
দক্ষিণ চীন সাগরের যে দ্বীপগুলো নিয়ে বিতর্ক চলছে
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে নানা খবর মাঝেমাঝেই সংবাদ শিরোনাম হয়৷ কারো মতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে এই সাগর নিয়ে৷ চলুন দেখে নিই দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন দেশের দখলে থাকা কয়েকটি দ্বীপ৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
চীনের দখলে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অধিকৃত স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের সুবি রিফের ছবি এটি৷ গত দুই বছরে সুবি রিফে নতুন অনেক অবকাঠামো তৈরি করেছে চীন৷ ধারণা করা হচ্ছে, ছোট দ্বীপটিতে একটি শহরসহ অপারেটিং বেস তৈরি করতে চাচ্ছে সে দেশ৷ চীন বরাবরই দাবি করে আসছে, দ্বীপগুলো তাদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন এবং এসবের কাছে কোনো বিমান বা নৌকা এলেই প্রতিক্রিয়া দেখায় সে দেশ৷
ছবি: Reuters/F. Malasig
অধিকাংশ দ্বীপের দখল চায় চীন
বিতর্কিত স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে চীনের বিভিন্ন অবকাঠামোর ছবি দেখা যাচ্ছে৷ দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ অঞ্চল দখলে নিতে চায় চীন৷ আর সে দেশের সেই মানসিকতার এক দৃষ্টান্ত সুবি৷ স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে রানওয়ে, হ্যাঙ্গার এমনকি সার্ফেস টু এয়ার মিশাইলও রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
ফিলিপাইন্স অধিকৃত থিটু দ্বীপ
দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইন্সের অধিকৃত থিটু দ্বীপের ছবি৷ মাত্র ৩৭ হেক্টরের এই কোরাল দ্বীপটি হচ্ছে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে ফিলিপাইন্সের দখলে থাকা আটটি রিফ, শোল এবং দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে বড়৷ ফিলিপাইন্সের মূল ভূখণ্ড থেকে ২৮০ মাইল দূরে দ্বীপগুলোর অবস্থান৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
থিটু দ্বীপের বাসিন্দারা
ফিলিপাইন্সের দখলকৃত থিটু দ্বীপে বসবাসরত ফিলিপিনোরা জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন৷ দ্বীপটি যাতে চীন দখলে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই এখানে তাদের বসবাস৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
চীনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি
বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে৷ ছবিতে বিতর্কিত সমুদ্রসীমায় সে দেশের কয়েকটি জলযান দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
তবে ছাড় দিতে রাজি নয় কেউ
থিটু দ্বীপে এক সশ্রস্ত্র ফিলিপিনো সেনা৷ দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের সীমানা দাবি করা দেশগুলো যে কোনো সময় সংঘাতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
বসবাসের অনুপযোগী এক দ্বীপ
স্প্র্যাটলিতে জেগে ওঠা এই দ্বীপটি এখনো বসবাসের উপযোগী হয়নি৷ বলা বাহুল্য, দক্ষিণ চীন সাগর সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ৷ তাই সেটি যাতে সবাই নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারে, সেই দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
7 ছবি1 | 7
বেজিং দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের উপস্থিতি আরো বাড়াতে চাইছে। এই এলাকা নিয়ে চীন ছাড়াও ফিলিপাইন্স, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার দাবি রয়েছে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার দুইটি নৌকাকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়নি চীন।
২০১৬ সালে পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আরবিট্রেশন রায় দেয়, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের অধিকাংশ দাবিই বেআইনি।