চীন ভুল করে কোভিড-১৯ সংকট সৃষ্টি করেছিল এবং এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ ধ্বংস করেছে, ট্রাম্পের এই দাবির বিরুদ্ধে সংশয় বেড়ে চলেছে৷ জার্মান গোয়েন্দা সংস্থাও নাকি এমন তথ্য পায়নি৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা সংকটের জন্য বার বার চীনকেই সরাসরি দায়ী করে চলেছেন৷ তবে প্রতিবার ভিন্ন অভিযোগ তুলছেন ট্রাম্প৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতে, চীন ‘ভুল করে' করোনা সংকট সৃষ্টি করে সেই সংক্রান্ত তথ্য গোপন রেখেছে৷ তারপর চীনের বিরুদ্ধে তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ ছিল, উহান শহরের গবেষণাগারে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভাইরাস তৈরি করা হয়েছিল৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সেই সুরে সুর মিলিয়েছেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ স্পষ্ট রায় দিয়েছেন যে, কোভিড-১৯ কোনোমতেই মানুষের তৈরি হতে পারে না৷
এমন অভিযোগের সপক্ষে ট্রাম্প ও পম্পেও অবশ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেননি৷ ট্রাম্প একবার দাবি করেছিলেন যে, তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ঘেঁটে এমন প্রমাণ পেয়েছেন৷ কিন্তু শীর্ষ মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার দপ্তর প্রকাশ্যে এমন দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে৷ তারপর অ্যামেরিকাসহ পাঁচটি ইংরেজিভাষী দেশের তথাকথিত ‘ফাইভ আইস ইনটেলিজেন্স' গোয়েন্দা সহযোগিতা কাঠামোর পনেরো পৃষ্ঠার এক দলিল উদ্ধৃত করে এমন দাবি করে অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদপত্র৷ সেই দাবি অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের মহামারির বিষয়ে চীন মিথ্যা কথা বলেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে৷
কিন্তু এমন দাবিকে ঘিরে প্রবল বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে৷ ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস গোয়েন্দা সংস্থার এমন কোনো রিপোর্টের অস্তিত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন৷ বিবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ বিষয়ে নীরব থেকেছেন৷ অস্ট্রেলিয়া সরকারের মতে, সবার জন্য উন্মুক্ত ‘ওপেন সোর্স' নথিপত্রকেই গোয়েন্দা তথ্য হিসেবে তুলে ধরায় এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে৷
এবার জার্মানির সম্প্রচার নেটওয়ার্ক এনডিআর দাবি করেছে যে, জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি-ও ‘ফাইভ আইস' গোয়েন্দা কাঠামোর চীন সংক্রান্ত দলিলের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে৷ বিএনডি জার্মান সংসদে গোয়েন্দা সংস্থা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যদের এ কথা জানিয়েছে বলে এনডিআর দাবি করেছে৷ বিএনডি নাকি সরাসরি ‘ফাইভ আইস' গোয়েন্দা কাঠামোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল৷ সেই প্রশ্নের উত্তরে এমন কোনো দলিলের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সহযোগিতা নেটওয়ার্ক৷ বিএনডি অবশ্য এনডিআর-এর এই দাবি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
দুই দশকে নতুন যত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
গোটা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়ছে, যার শুরুটা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে৷ গত প্রায় দুই দশকে ছড়িয়ে পড়া নতুন কয়েকটি ভাইরাস নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center for Disease Control
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়৷ পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে৷ ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন৷ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়৷ তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়৷ শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: AP
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস৷ ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান৷ উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়৷ হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বৈশ্বিক মহামারি
২০২০ সালের শুরু থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন দেশে৷ এক পর্যায়ে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে এখন অ্যামেরিকা রয়েছে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর শীর্ষে৷ সারা বিশ্বে এরিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি৷
ছবি: Getty Images/L. DeCicca
প্রতিষেধক নেই
এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ কয়েকটি উদ্যোগ বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মানব শরীরে কিছু সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে৷ তবে সেগুলো কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে৷