মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে চীনসহ ছয়টি দেশের ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ইইউ৷ বুধবার ইইউর রাষ্ট্রদূতরা তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রস্তাবে সম্মতি দেন৷
বিজ্ঞাপন
১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চীনের পাঁচজন এবং বাকিরা রাশিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সুদান এবং উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তা৷
এ নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবে ইইউর ২৭টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা সম্মতি দিয়েছেন বলে ইইউর দুই কূটনীতিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান৷
এর আগে ইইউ-তে ২৭ সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা চীনের শিনজিয়াং অঞ্চল সফর করতে চাইলে চীন তাতে সম্মতি দেয়৷ কিন্তু উইগুর অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে গিয়ে কারাবন্দি শিক্ষাবিদ ইলহাম তোহতির সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনার কথা জানালে সফর বাতিল করা হয়৷
ইইউ-তে চীনের দূত ঝ্যাং মিং বলেন, সফর চূড়ান্ত করার পরও তা বাতিল করা হয়েছে, কারণ, ‘‘তারা (ইইউ) চীনের আইনে সাজাপ্রাপ্ত এক দুষ্কৃতির সঙ্গে সাক্ষাত করতে চেয়েছে৷ এমন অনুরোধ অগ্রহণযোগ্য৷''
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
ইইউ-র মানবাধিকার পুরস্কার এবং শাখারপ পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ তোহতির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হয়৷ এ কারণে ২০১৯ সাল থেকে তিনি কারাবন্দি৷
ইইউর দুই কূটনীতিক জানান, ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নামগুলো এখনো প্রকাশ করা হয়নি৷ আগামী সোমবার ইইউ-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পর তালিকাটি প্রকাশ করা হবে৷
ইইউর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন৷
১৯৮৯ সালে তিয়ানমেন স্কয়ারের অভিযানের পর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ইইউ৷ তারপর এই প্রথম বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছে ইউরোপীয় জোট৷