চীনের মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর বেইজিংয়ের আচরণকে মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে নতুন বিল পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন৷
বিজ্ঞাপন
মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর চীনের নির্মম নির্যাতনের প্রক্ষিতে বেইজিংয়ের উপর চাপ তৈরির জন্য একটি বিল পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ৷ উইগুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্ট ২০১৯ নামের বিলটির পক্ষে ৪০৭ জন কংগ্রেস সদস্য ভোট দিয়েছেন৷ বিপক্ষে দিয়েছেন মাত্র একজন৷ এটি এরই মধ্যে সেনেটেও পাস হয়েছে৷
শিক্ষা ক্যাম্পের নামে উইগুর, কাজাখসহ ১০ লাখ সংখ্যালঘুর উপর চীনের আচরণকে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিলটিতে৷
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি পাস হওয়া চীনের গোপন নথি অনুযায়ী ক্যাম্প তৈরি করে উইগুরদের বন্দি রাখার মূল পরিকল্পনাকারী চীনের সিনচিয়াং প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান চেন কুয়ানগুয়াও৷ বিলটিতে তিনিসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে৷
এদিকে এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন৷ একে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল হিসেবে উল্লেখ করে তা অবিলম্বে সংশোধনের আহবান জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ সিনচিয়াং সংক্রান্ত ইস্যুকে ব্যবহার করে চীনের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র যাতে হস্তক্ষেপ না করে সেই বিষয়েও জোর দিয়েছে তারা৷ চীন পরিস্থিতি পরবর্তী পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং৷
সম্প্রতি হংকং নিয়ে আরো দুটি আইন পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ হংকংয়ের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেখানে যথাযথ স্বায়ত্তশাসন আছে কিনা তা দেখবে ওয়াশিংটন৷ সেই সঙ্গে চীনের এই অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের টিয়ারগ্যাস, পিপার স্প্রে, রাবার বুলেট, স্টেন গানসহ বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধ থাকবে৷
এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে চীন৷
এফএস/এসিবি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
যে মুসলিমদের পছন্দ করে চীন
চীনে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলমানের বাস৷ উইগুর মুসলিমদের উপর নিপীড়নের কথা অনেকেই জানেন৷ কিন্তু আরেক মুসলিম গোষ্ঠীর প্রতি সরকারের সুনজর আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
হুই মুসলিম
বর্তমানে চীনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ৷ এর মধ্যে হুই মুসলিমদের সংখ্যা এক কোটির বেশি৷ আর যে মুসলিম গোষ্ঠী সরকারের নিপীড়নের শিকার সেই উইগুরদের সংখ্যা এক কোটির কিছু কম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong
উইগুরদের জন্য বিধিনিষেধ
বিভিন্নভাবে তাদের উপর নিপীড়ন চালায় চীনা সরকার৷ রোজা রাখা ও নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে উইগুরদের জন্য বিধিনিষেধ জারি করা হয়৷
ছবি: Getty Images
কিন্তু হুইদের জন্য আলাদা নিয়ম
একই দেশে থেকে উইগুররা যখন ঠিকমতো ধর্ম পালন করতে পারেন না সেখানে হুই মুসলিমদের কোনো বাধার মুখে পড়তে হয় না৷ উপরের ছবিটিই তার প্রমাণ৷ চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে হুই মুসলিমদের সঙ্গে একটি মসজিদে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/J. Peng
কী কারণ?
উইগুররা স্বাধীনতা চান, হুইদের সেই আগ্রহ নেই৷ উইগুররা প্রথম ভাষা হিসেবে মান্দারিন ব্যবহার করেন না, হুইরা করেন৷ সর্বোপরি হুইদের সংস্কৃতির সঙ্গে চীনা সংস্কৃতির কিছুটা মিল আছে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
সবচেয়ে বড় মসজিদ
দেখছেন চীনের সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ নাম ‘গ্রেট মস্ক অফ চিয়ান’৷ কিন্তু দেখতে কি মসজিদের মতো লাগছে, নাকি চীনের কোনো ভবন মনে হচ্ছে? তাহলেই বুঝুন হুইদের মসজিদেও কেমন চীনা সংস্কৃতির ছাপ আছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Far
আছে বাণিজ্যিক কারণও
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী চীন৷ আর তার জন্য আরবি জানা মানুষ প্রয়োজন৷ আরব ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে নিংচিয়া রাজ্যের ইনচুয়ান শহরে একটি ইসলামিক থিম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে৷ ঐ শহরের রাস্তায় আরবিতে দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ নিংচিয়া রাজ্যে অনেক হুই বাস করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Weiken
হুই কারা?
প্রায় ১,২০০ বছর আগে আরব, পারস্য আর মঙ্গোলিয়া থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীরা চীনে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তাঁদের অনেকে হান চাইনিজদের বিয়ে করেন৷ সেভাবেই হুই গোষ্ঠীর সৃষ্টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
যেখানে বাস তাঁদের
আগে নিংচিয়া রাজ্যের কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া উত্তরাঞ্চলীয় আরও কয়েকটি রাজ্যেও হুইরা বাস করেন৷ এছাড়া বেইজিং, সাংহাই সহ বড় বড় শহরেও অনেক হুই থাকেন৷